মিয়ানমার সীমান্তে গোলাবর্ষণ, আতঙ্ক এপারে

মিয়ানমার সীমান্তে গোলাবর্ষণ, আতঙ্ক এপারে

রয়েল ভিউ ডেস্ক:
মিয়ানমার সীমান্ত এলাকায় প্রচণ্ড গোলাগুলি চলছে। আতঙ্কে কাজ ছেড়ে নিরাপদ দূরত্বে সরে গেছেন সেখানে অবস্থিত শ্রমিকেরা।

সেখানে অবস্থিত বিদ্রোহীদের আস্তানা লক্ষ্য করে দুটি হেলিকপ্টার ও একটি জেট বিমান থেকে গোলাবর্ষণ করছে মিয়ানমার সেনারা। আজ শনিবার সকাল থেকে বিকেল সাড়ে ৩টায় এ সংবাদ লেখার সময়ও সীমান্তের ১৩ কিলোমিটার এলাকায় গোলাবর্ষণ চলছি। আতঙ্কে রাবার বাগানসহ বিভিন্ন বাগানে নিয়োজিত শ্রমিকেরা কাজ ছেড়ে নিরাপদে সরে গেছেন।

বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন ঘুমধুম ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান জাহাঙ্গির আজিজ, স্থানীয় গ্রামবাসী ও সীমান্ত সড়কে কাজ করেন এমন একাধিক শ্রমিক।
এর আগে গত রোববার (২৮ আগস্ট) সীমান্তের তুমরু গ্রামে মর্টার শেলের গোলা এসে পড়ায় তোলপাড়ের সৃষ্টি হয়। এ ঘটনার পর বাংলাদেশ সরকার মিয়ানমারের রাষ্ট্রদূতকে ডেকে তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়েছে।

সূত্র জানান, মিয়ানমার সেনারা সীমান্তের জিরো পয়েন্টে বিদ্রোহী আরাকান আর্মির আস্তানা গুঁড়িয়ে দিতে এ হামলা চালাচ্ছে বলে মিয়ানমারের নানা সূত্র থেকে তাঁরা জানতে পারছেন। আরকান রাজ্যে অবস্থানরত রোহিঙ্গাদের ওপরও শুরু হয়েছে নতুন করে নিপীড়ন। প্রাণ বাঁচাতে রোহিঙ্গারা বাংলাদেশ সীমান্তের নানাস্থানে জড়ো হচ্ছেন বলে জানিয়েছে একটি গোয়েন্দা সংস্থার এক জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা। ওই কর্মকর্তা জানান, বিষয়টি এরই মধ্যে ঊর্ধ্বতন মহলকে জানানো হয়েছে।


এ ছাড়া একাধিক সূত্রে জানা যাচ্ছে, মিয়ানমার বাহিনীর অত্যাচারে শত শত রোহিঙ্গা ভারতের মিজোরাম রাজ্যের দিকে পালিয়ে গেছেন। সেখানে বাধাগ্রস্ত হয়ে তাঁরা

বাংলাদেশে প্রবেশের চেষ্টা করছেন। আরাকানজুড়ে রোহিঙ্গাদের ওপর অত্যাচারের মাত্রা বেড়েছে। তাঁরা বাংলাদেশের নাইক্ষ্যংছড়ি ও তুমরু সীমান্ত দিয়ে প্রবেশের চেষ্টা করছেন।
অপর একটি সূত্র জানায়, মিয়ানমার সীমান্ত সড়কের কাজ বন্ধ আছে এক মাস ধরে। বাগানের কাজও বন্ধ। যেখানে শ্রমিকের সংখ্যা দুই হাজারের বেশি। সম্প্রতি তাঁরা তিন দফা কাজ বন্ধ রেখে এলাকা ছেড়েছেন। প্রথম দফা এক মাস আগে, দ্বিতীয় দফায় গত বুধবার আর তৃতীয় দফা আজ শনিবার কাজ বন্ধ করে নিরাপদ আশ্রয়ে গেছেন।

সিরাজুল, রফিক, শহীদুল্লাহ ও লাবে তঞ্চঙ্গ্যা নামে নির্মাণ শ্রমিকেরা বলেন, তাঁরা দীর্ঘ দিন ধরে এ সড়কে কাজ করছেন। এখানে তাঁরা কয়েক মাস ধরে কাজ করছেন। হঠাৎ মিয়ানমার বাহিনীর ভারী অস্ত্রের গোলা বর্ষণ ও মর্টার শেলের আওয়াজে তাঁরা আতঙ্কিত। মাথার ওপর ঘুরছে হেলিকপ্টার। হেলিকপ্টার থেকেও গুলি ছোড়া হচ্ছে। গোলা এসে পড়ার ভয়ে ২০ / ২৫ দিন আগে মিয়ানমার সীমান্ত সড়কের কাজ বন্ধ রেখে নিরাপদে চলে এসেছেন।


দ্বিতীয় দফায় মর্টারের গোলা এসে পড়ার ঘটনায় তুমরু এলাকার একাধিক শ্রমিক এ প্রতিবেদককে জানান, বুধবার (৩১ আগস্ট) তাঁদের ফিরে যেতে বলে কর্তৃপক্ষ। তাঁরাও আতঙ্কিত। কাজ বন্ধ রেখে নিরাপদে সরে গেছেন।

অপর একটি সূত্র জানায়, ঘুমধুমের তুমরু, রেজু আমতলী, বাইশফাঁড়ি, তুইঙ্গাঝিরি, গর্জনবুনিয়া ও রেজু পাড়াসহ ঘুমধুমের ১৬ কিলোমিটার এলাকাজুড়ে এক মাস ধরে মিয়ানমারের ভেতরে সীমান্ত এলাকায় গোলাবর্ষণ চলছে। সম্প্রতি হেলিকপ্টার থেকেও গোলাবর্ষণ করা হচ্ছে।

পাশাপাশি মর্টার শেল নিক্ষেপ করা হচ্ছে। এখন পর্যন্ত ২০ থেকে ৩০টি মর্টার শেষ ছোড়া হয়েছে। এর মধ্যে তিনটি মর্টার শেল উত্তর তুমরু গ্রামের মসজিদের আঙিনা ও বসতবাড়িতে পড়ে।

সূত্রগুলো জানাচ্ছে, সীমান্তের এ পয়েন্টে হেলিকপ্টার থেকে গোলাবর্ষণের পাশাপাশি বিদ্রোহীদের আস্তানা শনাক্তে ড্রোন ব্যবহার করছে মিয়ানমার বাহিনী। কিন্তু সুনির্দিষ্টভাবে আস্তানা শনাক্ত করতে না পেরে পুরো ১৬ কিলোমিটার এলাকায় এলোপাতাড়ি গোলাবর্ষণ ও মর্টার শেল নিক্ষেপ করছে।

স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরা জানান, গতকাল শুক্রবার সকালেও মিয়ানমার বাহিনী দফায় দফায় প্রায় ঘণ্টাব্যাপী তাদের সীমান্তের জিরো পয়েন্টে গোলাগুলি চলেছে।

ঘুমধুম ইউপি মেম্বার আবুল কালাম জানান, গোলাগুলির শব্দে সীমান্ত এলাকায় আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে, সব কাজকর্ম বন্ধ। শ্রমিকেরা ভয়ে কাজে যাচ্ছেন না। মালিকপক্ষও ঝুঁকি নিচ্ছে না। এর আগেও গোলাগুলির শব্দে ৩৯ ও ৪০ নম্বর পিলার এলাকার বাসিন্দারা রাতে অন্যত্র আশ্রয় নিয়েছিলেন।

ইউপি মেম্বার আরও জানান, গত মঙ্গলবার (৩০ আগস্ট) বিকেলে জেট বিমান এবং ড্রোন উড়তে দেখেন তাঁর এলাকার মানুষ। এ ছাড়া মিয়ানমারের তুমরু সীমান্ত রক্ষীর ঘাঁটি থেকে গত বৃহস্পতিবার কয়েক দফা মর্টার শেল এসে পড়ে সাত কিলোমিটার দূরের বাইশফাঁড়ি-আমতলী সীমান্ত পয়েন্টে। এতে মানুষ আতঙ্কিত হয়ে পড়েছে।

ঘুমধুম ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান জাহাঙ্গির আজিজ বলেন, রেজু আমতলী ফাত্রাঝিরি বাইশফাড়ি সীমান্তে নতুন করে গোলাগুলির আওয়াজ শুনেছেন তার এলাকার মানুষ।

গত বৃহস্পতিবার থেকে আজ পর্যন্ত ৩৮ নম্বর পিলার থেকে ৪০ নম্বর পিলার এলাকাসহ ঘুমধুম সীমান্তের সর্বত্র মিয়ানমারের সীমান্ত ঘেঁষা এলাকায় গোলা বর্ষণের আওয়াজ পাওয়া গেছে।

ইউপি চেয়ারম্যান বলেন, কিছু গোলা বাংলাদেশ সীমান্তের কাছাকাছি বা ভেতরে এসে পড়েছে। সীমান্ত সড়কের শ্রমিক ও তাঁর নিজের বাগানের শ্রমিকেরা কাজ বন্ধ করে নিরাপদে অবস্থান করছেন।