ময়মনসিংহে স্বেচ্ছাসেবক লীগ নেতা শুভ্র হত্যা মামলায় ৭ জনের মৃত্যুদণ্ড, ৩ জনের যাবজ্জীবন

ময়মনসিংহে স্বেচ্ছাসেবক লীগ নেতা শুভ্র হত্যা মামলায় ৭ জনের মৃত্যুদণ্ড, ৩ জনের যাবজ্জীবন

রয়েল ভিউ ডেস্ক:
ময়মনসিংহের গৌরীপুর উপজেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগের সাধারণ সম্পাদক ও বিআরডিবির চেয়ারম্যান মাসুদুর রহমান শুভ্র হত্যা মামলায় গৌরীপুরের স্থানীয় বিএনপির ৭ নেতা কর্মীকে মৃত্যুদণ্ডে দণ্ডিত করা হয়েছে। আজ সোমবার ঢাকার দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনাল-৩ এর বিচারক মনির কামাল এই রায় ঘোষণা করেন। রায়ে ৩ জনকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড ও ৯ জনকে বেকসুর খালাস দেওয়া হয়েছে। 

রায়ে মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত আসামিদের বিশ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়েছে। যাবজ্জীবন কারাদণ্ডপ্রাপ্ত তিন আসামিকেও প্রত্যেককে বিশ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়েছে। জরিমানার টাকা দিতে ব্যর্থ হলে প্রত্যেককে আরও ছয় মাস কারা ভোগ করতে হবে বলে রায়ে বলা হয়েছে। 

গত বৃহস্পতিবার উভয় পক্ষের যুক্তি তর্ক শুনানি শেষে ট্রাইব্যুনাল এ রায়ের দিন ধার্য করেন। একই সঙ্গে কারা কর্তৃপক্ষকে আসামিদের কারাগার থেকে ট্রাইব্যুনালে হাজির করার নির্দেশ দেন। 

ট্রাইব্যুনালের বিশেষ পিপি মাহবুবুর রহমান আজকের পত্রিকাকে জানান, মামলায় মোট ১৯ জন আসামি। দুজন কারাগারে ছিলেন। গত বৃহস্পতিবার যুক্তিতর্ক শুনানির সময় কারাগার থেকে ওই দুই আসামিকে হাজির করা হয়। জামিন প্রাপ্ত বাকি ১৭ জন ট্রাইব্যুনালে উপস্থিত ছিলেন। যুক্তিতর্ক শুনানি শেষে ওই ১৭ জনকেও কারাগারে পাঠানো হয়। 

পিপি আরও বলেন, দণ্ডপ্রাপ্ত আসামিসহ প্রত্যেককে রায় শেষে কারাগারে ফেরত পাঠানোর নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। যারা খালাস পেয়েছেন তাদের অন্য কোনো মামলায় প্রয়োজন না থাকলে অবিলম্বে মুক্তি দেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। 

রায় ঘোষণার সময় মামলার বাদী নিহত শুভ্র ভাই আবিদুর রহমান প্রান্ত আদালতে উপস্থিত ছিলেন। তিনি রায়ের পর সাংবাদিকদের বলেন, ‘এই হত্যাকাণ্ডের মূল পরিকল্পনাকারী বহুরূপীর পৌরসভার মেয়র সৈয়দ রফিকুল ইসলাম। তাঁকে মামলা থেকে বেকসুর খালাস দেওয়া হয়েছে। এটা আমরা মেনে নিতে পারছি না।’ 

তবে বিশেষ পিপি মাহবুবুর রহমান বলেন, ‘মামলায় দৃষ্টান্তমূলক সাজা হয়েছে। যাদের খালাস দেওয়া হয়েছে তাঁদের বিরুদ্ধে আপিল করা হবে কী না তা রায় পরিচালনা করে পরবর্তীতে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।’ 

মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত আসামিরা হলেন-উপজেলা বিএনপির একাংশের যুগ্ম-আহ্বায়ক ও মইলাকান্দা ইউনিয়নের চেয়ারম্যান রিয়াদ উজ্জামান রিয়াদ, গৌরীপুর পৌর ছাত্রদলের যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক সাকিব আহমেদ রেজা, উত্তর জেলা স্বেচ্ছাসেবক দলের সদস্য মোজাম্মেল হক, স্বেচ্ছাসেবক দলের মাইনুদ্দিন, খাইরুল ইসলাম, ছাত্রদল কর্মী শরীফুল ইসলাম নাইম ও রুহুল আমিন। 

যাবজ্জীবন সাজাপ্রাপ্ত আসামিরা হলেন-যুবদল নেতা মাসুদ পারভেজ কার্জন, ছাত্রদল কর্মী শরীয়তউল্লাহ ওরফে সুমন ও যুবদল কর্মী রাসেল মিয়া। 

যাদের খালাস দেওয়া হয়েছে তাঁরা হলেন-গৌরীপুর পৌরসভার বর্তমান মেয়র সৈয়দ রফিকুল ইসলাম, যুবদল নেতা সৈয়দ তৌফিকুল ইসলাম, সৈয়দ মাজাহারুল ইসলাম জুয়েল, ছাত্রদল কর্মী রিফাত, মো. আবু হানিফা, উত্তর জেলা স্বেচ্ছাসেবক দলের ধর্মবিষয়ক সম্পাদক জাহাঙ্গীর আলম, যুবদল কর্মী মজিবুর রহমান, ছাত্রদল কর্মী কামাল মিয়া ও শাজাহান মিয়া। 

 ২০২০ সালের ১৭ অক্টোবর গৌরীপুর মধ্যবাজার পান মহালে রাত ১০টার দিকে দুর্বৃত্তরা শুভ্রকে কুপিয়ে হত্যা করে। পরে নিহতের ছোট ভাই আবিদুর রহমান প্রান্ত বাদী হয়ে ১৪ জনের বিরুদ্ধ গৌরীপুর থানায় হত্যা মামলা দায়ের করেন। ২০২১ সালের ৫ মে মামলায় জেলা গোয়েন্দা পুলিশ ১৯ জনকে আসামি করে চার্জশিট দাখিল করে।