যুক্তরাজ্যের নতুন প্রধানমন্ত্রী হলেন লিজ ট্রাস, সামনে সংকটের পাহাড়

যুক্তরাজ্যের নতুন প্রধানমন্ত্রী হলেন লিজ ট্রাস, সামনে সংকটের পাহাড়

রয়েল ভিউ ডেস্ক:
ক্ষমতাসীন দল কনজারভেটিভ পার্টির নেতৃত্বের দৌড়ে ভারতীয় বংশোদ্ভুত ঋষি সুনাককে হারিয়ে যুক্তরাজ্যের নতুন প্রধানমন্ত্রী হলেন লিজ ট্রাস। জ্বালানি সংকট এবং মূল্যস্ফীতির ঊর্ধ্বগতিতে সারা বিশ্বের মত যুক্তরাজ্যেরও দিশেহারা অবস্থা। সংকটময় এ সময়ে দেশ সামলানোর গুরুদায়িত্ব পাচ্ছেন লিজ ট্রাস।

ট্রাস এমন একটি সময়ে সরকার গঠন করতে যাচ্ছেন যখন যুক্তরাজ্য নানান সংকটে জর্জরিত। সেখানে জ্বালানি ও খাবারের দাম হু হু করে বাড়ছে। হাসপাতালে চিকিৎসা পেতে অপেক্ষমানদের তালিকা দীর্ঘ হচ্ছে। সরকারি কর্মচারি, বন্দরের কর্মী এমনকী আইনজীবীরা নানা দাবিতে ধর্মঘট করছেন।

কনজারভেটিভ পার্টির নেতা নির্বাচিত হওয়ার পরদিন আজ বালমোরাল ক্যাসেলে ব্রিটিশ রানি দ্বিতীয় এলিজাবেথের সাথে বৈঠকের পর যুক্তরাজ্যের নতুন প্রধানমন্ত্রী হলেন লিজ ট্রাস।

মঙ্গলবার রানি এলিজাবেথ আনুষ্ঠানিকভাবে লিজ ট্রাসকে ব্রিটেনের প্রধানমন্ত্রী নিয়োগ দিয়েছেন। এর আগে রানির সঙ্গে সাক্ষাৎ করে পদত্যাগ করেছেন বিদায়ী প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসন। 

এরপরই লিজ ট্রাসকে নতুন প্রধানমন্ত্রী হিসাবে নিয়োগ দেওয়ার জন্য তার সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন রানি। নতুন প্রধানমন্ত্রী হিসাবে ট্রাসকে সরকার গঠনের আহ্বান জানান তিনি।

ক্ষমতা হস্তান্তরের এই প্রক্রিয়া সম্পন্ন করা হয়েছে খুবই সাবধানতার সঙ্গে। যাতে কোনও প্রধানমন্ত্রী না থাকার সময়টা বেশিক্ষণ না হয়।

রানীর কাছে যাওয়ার আগে জনসন ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় ১০ নং ডাউনিং স্ট্রিটে বিদায়ী ভাষণ দেন। বক্তব্যে জনসন নতুন প্রধানমন্ত্রী লিজ ট্রাসকে সমর্থন করার কথাও বলেন।

নতুন সরকারের জন্য জোরাল সমর্থন থাকবে জানিয়ে তিনি বলেন, আমরা সব সমস্যা উতরে যাব এবং সব দিক থেকে শক্তিশালী হয়ে উঠব। একাজের জন্য লিজ ট্রাসকে সমর্থন দেওয়ার সময় এখনই।

রানির নিয়োগ পাওয়ার পর ট্রাস এরই মধ্যে বালমোরাল প্রাসাদ ছেড়েছেন। তিনি এখন তার নতুন বাসভবন এবং কর্মক্ষেত্র ১০ নং ডাউনিং স্ট্রিটের পথে রওনা হয়েছেন।

সেখানে পৌঁছে তিনি নতুন প্রধানমন্ত্রী হিসাবে প্রথম ভাষণ দেবেন। সরকারে থেকে কী কী করতে চান তার বিস্তারিত ব্যাখ্যা দেবেন ট্রাস।

ট্রাস দেশের অর্থনৈতিক সংকট মোকাবেলা এবং গভীরভাবে বিভক্ত নিজ দলকে ঐক্যবদ্ধ করার লক্ষ্য পূরণে মন্ত্রিসভার শীর্ষ পদগুলোতে যাদের রাখবেন বা নিয়োগ দেবেন তাদের নামও ঘোষণা করবেন।

যুক্তরাজ্য যখন তুমুল জ্বালানি সংকটের মুখোমুখি, তখন কর কমানো ও জ্বালানির খরচে নাভিশ্বাস ওঠা জনগণকে সহায়তার আশ্বাস দিয়ে কনজারভেটিভ পার্টির সদস্যদের ভোট বাগিয়ে ১০ নং ডাউনিং স্ট্রিটকে নিজের ঠিকানা বানিয়ে নিলেন ট্রাস।

কনজারভেটিভ দলের প্রধান হওয়ার পর গতকাল এক ভাষণে ট্রাস বলেন, ‘নেতৃত্বে এবং আমাদের মহান দেশকে কিছু দিতে আমার ওপর আস্থা রাখায় ধন্যবাদ। এই কঠিন সময় থেকে সবাইকে বের করে আনতে, অর্থনীতিকে বিকশিত করতে এবং যুক্তরাজ্যের সম্ভাবনাকে জাগিয়ে তুলতে আমি বলিষ্ঠ পদক্ষেপ নেবো’ ।

যুক্তরাজ্যের ইতিহাসের তৃতীয় নারী প্রধানমন্ত্রী হতে যাওয়া ট্রাস বিদায়ী বরিস জনসনের স্থলাভিষিক্ত হতে যাচ্ছেন, যিনি নানান কেলেঙ্কারিতে জড়িয়ে পড়ায় তার সরকারের জনসমর্থন হু হু করে নামতে শুরু করেছিল; নিজের মন্ত্রিসভার সদস্যরাও সঙ্গ ছাড়া শুরু করলে জুলাইয়ে জনসন পদত্যাগ করতে বাধ্য হন।

এ নিয়ে ২০১৫ সালের নির্বাচনের পর থেকে ৭ বছরের মধ্যে চতুর্থ কনজারভেটিভ প্রধানমন্ত্রী দেখতে যাচ্ছে যুক্তরাজ্য।

এই সময়ের মধ্যে দেশটিকে এক সংকট থেকে আরেক সংকটে পড়তেও দেখা গেছে। ট্রাস এমন সময়ে দায়িত্ব নিচ্ছেন, যখন কয়েক বছর আগে ইউরোপীয় ইউনিয়ন থেকে বেরিয়ে যাওয়া দেশটি দীর্ঘ মন্দা এবং মূল্যস্ফীতি বর্তমানের তুলনায় আরও বেড়ে যাওয়ার ঝুঁকিতে রয়েছে।

যুক্তরাজ্যে জুলাইয়ে মূল্যস্ফীতি ১০ শতাংশের বেশি বেড়ে গেছে। গত চার দশকের মধ্যে প্রথমবার দেশটিতে পণ্যমূল্য এতটা বেড়ে গেছে। জ্বালানি, খাদ্য এবং তেলের অস্বাভাবিক মূল্য বৃদ্ধি এজন্য দায়ী।

যুক্তরাজ্যে জুলাইয়ে মূল্যস্ফীতি ১০ শতাংশের বেশি বেড়ে গেছে। গত চার দশকের মধ্যে প্রথমবার দেশটিতে পণ্যমূল্য এতটা বেড়ে গেছে। জ্বালানি, খাদ্য এবং তেলের অস্বাভাবিক মূল্য বৃদ্ধি এজন্য দায়ী।

ব্যাংক অব ইংল্যান্ডের পূর্বাভাস অনুযায়ী, এ বছরের শেষ দিকে মূল্যস্ফীতি আরো বেড়ে তা ১৩ শতাংশে পৌঁছে যাবে। দেশটির কেন্দ্রীয় ব্যাংকের আশঙ্কা এ বছর শেষ হওয়ার আগেই যুক্তরাজ্যে মন্দা দেখা দিতে পারে।

শীত মৌসুমে জ্বালানিসংকট আরও প্রকট হওয়ার শঙ্কা রয়েছে। অন্যদিকে, সিটি গ্রুপের পূর্বাভাস, ২০২৩ সালের শুরুতে যুক্তরাজ্যের মূল্যস্ফীতি ১৮ শতাংশ ছাড়াতে পারে।

এতসব গুরুতর চ্যালেঞ্জের মুখে পড়ার পূর্বাভাসের মধ্যেই সোমবার ডলারের বিপরীতে পাউন্ডের মূল্য ০ দশমিক ৩ শতাংশ পড়ে গেছে। ১৯৮৫ সালের পর ডলারের বিপরীতে পাউন্ডের এতটা অবনমন হয়নি।

যুক্তরাজ্যবাসীকে এখন সবচেয়ে বেশি দুশ্চিন্তায় ফেলেছে জ্বালানির বাড়তি দাম। ইউক্রেইন যুদ্ধের জেরে রাশিয়া থেকে সরবরাহ কমে আসায় জ্বালানি তেল ও প্রাকৃতিক গ্যাসের দাম বেড়েছে। শীতে তা আরও বাড়বে।

আগামী অক্টোবর নাগাদ দেশটিতে পরিবারপ্রতি গড় জ্বালানি ব্যয় বেড়ে ৪ হাজার ১০৬ ডলারে উন্নীত হতে পারে। জ্বালানির সরবরাহ দ্রুত নির্বিঘ্ন করতে না পারলে শীতে ঠাণ্ডায় জমে অনেক মানুষ মারা যেতে পারেন বলেও সতর্ক করে দিয়েছেন বিশ্লেষকদের অনেকেই।