যৌতুকের দাবিতে তাহিরপুরে গৃহবধূকে নদীতে ডুবিয়ে হত্যার চেষ্টা!

যৌতুকের দাবিতে তাহিরপুরে গৃহবধূকে নদীতে ডুবিয়ে হত্যার চেষ্টা!

তাহিরপুর সংবাদদাতা :
যৌতুক না পেয়ে গৃহবধূকে নৃশংস কায়দায় হত্যার চেষ্টা করেছে স্বামী ও শ্বশুরসহ বাড়ির লোকজন। গৃহবধূর হাত-পা বেঁধে এবং মুখে স্কচটেপ লাগিয়ে নদীতে ডুবিয়ে মারার চেষ্টা করে স্বামী, শ্বশুর ও দুই দেবর। প্রতিবেশীরা এঘটনা দেখে ফেলায় গৃহবধূ প্রাণে রক্ষা পায়। ঘটনাটি ঘটে গত শুক্রবার রাতে সুনামগঞ্জের তাহিরপুর উপজেলার বাদাঘাট উত্তর ইউনিয়নের বাদলার পাড় গ্রামে। এঘটনায় স্বামী আবু তাহের জান্নাত(২৮), শ্বশুর সাজিদুল, দেবর জাকির হোসেন (২৫) ও বাবুল হোসেন(২২)এর অবস্থান সম্পর্কে গতকাল শনিবার রাত ৯টা পর্যন্ত কিছুই বলতে পারেননি তাহিরপুর থানার ওসি আব্দুল লতিফ তাফাদার। তবে পুলিশের অভিযান অব্যাহত রয়েছে বলে জানিয়েছেন তিনি।

পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, সুনামগঞ্জের দোয়ারাবাজার উপজেলার চৌধুরীপাড়া গ্রামের সাজিদুলের ছেলে আবু তাহের জান্নাতের (২৮) সঙ্গে আট মাস পূর্বে বিয়ে হয় তাহিরপুর উপজেলার বাদাঘাট উত্তর ইউনিয়নের বাদলার পাড় গ্রামের কারী নিজাম উদ্দিনের মেয়ে মাইফুল নেছার(২৩)। বিয়ের পর স্বামী আবু তাহের জান্নাত স্ত্রীর গ্রামের পার্শ্ববর্তী ভোলাখালি গ্রামে বাসা ভাড়া নিয়ে সংসার করছিল। এসময় আবু তাহেরের পিতা সাজিদুল, দুই সহোদর জাকির হোসেন (২৫) ও বাবুল হোসেন (২২) তার সাথে থাকতে শুরু করে এবং পোলট্রির ব্যবসা শুরু করে। বিয়ের কিছুদিন যেতে না যেতেই স্বামী আবু তাহের যৌতুকের দাবি করলে কয়েক ধাপে যৌতুকের ৫০ হাজার টাকা পূরণ করেন গৃহবধূর হতদরিদ্র পিতা। তারপরেও মাস খানেক ধরে স্ত্রীকে আবারো যৌতুকের টাকার জন্য চাপ দেয়া শুরু হয়। গৃহবধূর পিতা এবার টাকা দিতে অপারগতা প্রকাশ করলে স্ত্রীর উপর আবারো শারীরিক নির্যাতন শুরু করে আবু তাহের। তাদের অব্যাহত অত্যাচার-নির্যাতন সইতে না পেরে অবশেষে স্ত্রী মাইফুল নেছা তার বাবার বাড়িতে চলে আসে। গত শুক্রবার রাতে মাইফুল নেছা প্রকৃতির ডাকে সাড়া দিতে ঘরের বাইরে গেলে পূর্ব থেকে ওঁৎ পেতে থাকা আবু তাহের জান্নাত, তার দুই সহোদর ও বাবা মিলে মাইফুল নেছাকে জোর করে তুলে নিয়ে গিয়ে হাত-পা  বেঁধে এবং মুখে স্কচটেপ লাগিয়ে পানিতে ডুবিয়ে মারার উদ্দেশ্যে বাড়ির পাশে ভাঙ্গার খাল নদীর পারে নিয়ে যায়। একপর্যায়ে প্রতিবেশীরা ঘটনাটি টের পেয়ে নদীর পাড়ে এগিয়ে গেলে তারা মাইফুল নেছাকে ফেলে রেখে দৌড়ে পালিয়ে যায়। এ সময় প্রতিবেশী কয়েকজন যুবক মাইফুল নেছাকে উদ্ধার করে বাড়িতে নিয়ে আসে। এ ঘটনায় গৃহবধূ গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়ে। পরে স্বজনরা তাকে চিকিৎসার জন্য তাহিরপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স-এ ভর্তি করেন। এদিকে, গৃহবধূ নির্যাতনের ঘটনা জানতে পেরে এক প্রতিবেশী ৯৯৯ কল করে বিষয়টি পুলিশকে অবগত করেন। খবর পেয়ে তাহিরপুর থানার বাদাঘাট পুলিশ ক্যাম্প এএসআই মোহাম্মদ শহিদুল ইসলাম ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন।

মাইফুল নেছার ছোট ভাই মো. এবায়দুল্লাহ বলেন, বিয়ের পর থেকেই তার বোনকে স্বামী, শ্বশুর ও দেরবরা মিলে নির্যাতন করছিল। যৌতুকের ৫০ হাজার টাকার দাবি মেটানোর পরও নির্যাতন বন্ধ করেনি। গত শুক্রবার রাতে তার বোন কে তুলে নিয়ে হাত-পা বেঁধে, মুখে স্কচটেপ লাগিয়ে নদীতে ফেলে হত্যার চেষ্টা করে। 
তাহিরপুর থানার অফিসার ইনচার্জ মোহাম্মদ আব্দুল লতিফ তরফদার বলেন, খবর পেয়ে বাদাঘাট পুলিশ ক্যাম্পের সদস্যরা ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছে এবং গৃহবধূকে চিকিৎসা করানোর জন্য পরিবারের সদস্যদের বলা হয়েছে। অভিযুক্তদের আটকের ব্যাপারে জানতে চাইলে তিনি বলেন, অভিযুক্তরা বাড়িতে কি-না বলতে পারছেন না। তবে পুলিশের অভিযান অব্যাহত রয়েছে। গৃহবধূর পরিবারের পক্ষ থেকে লিখিত অভিযোগ পেলে পরবর্তী আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।