রংতুলির আঁচড়ে মূর্ত হয়ে  উঠেছে লাল দুর্গার রূপ

রংতুলির আঁচড়ে মূর্ত হয়ে  উঠেছে লাল দুর্গার রূপ

রাজনগর (মৌলভীবাজার) থেকে নিজস্ব সংবাদদাতা : সনাতন ধর্মাবলম্বীদের সবচেয়ে বড় ধর্মীয় উৎসব শারদীয় দুর্গাপূজা শুরু হয়েছে। দুর্গতিনাশিনী দশভুজা দেবীর বোধন ও মহাষষ্ঠীর মধ্য দিয়ে শুরু হলো চার দিনব্যপী শারদীয় দুর্গোৎসব। শুক্রবার সকালে রাজনগর উপজেলার পাঁচগাঁওয়ে রংতুলির শেষ আচঁেড় মূর্ত হয়ে উঠেছে লাল দুর্গা দেবীর রূপ।  উপমহাদেশের একমাত্র লাল বর্ণের জাগ্রত দুর্গা দেবীর পূজা হয় পাঁচগাঁওয়ে। প্রায় ৩০০ বছর ধরে এই পূজা অনুষ্ঠিত হচ্ছে বলে জানান সনাতন ধর্মাবলম্বীরা। দুর্গার রং লাল হওয়ায় দেবী দর্শনের জন্য দেশ ও দেশের বাইরে থেকেও অনেক পূণ্যার্থী ছুটে আসেন এখানে। দেশের বিভিন্ন জেলার প্রত্যন্ত অঞ্চল থেকে ছুটে আসেন হিন্দু ধর্মাবলম্বী ভক্তরা। দেশের বাইরে থেকে বিশেষ করে ভারতের বিভিন্ন অঙ্গরাজ্য থেকেও ভক্তরা আসেন এখানে।  আয়োজকরা জানান, লাল বর্ণের দেবী দূর্গার পূজা উপমহাদেশের আর কোথাও হয় না। অষ্টমী ও নবমীর দিন প্রচুর ভক্তবৃন্দের আগমন ঘটে। এসময় এখানে প্রায় ২ কিলোমিটার রাস্তা পায়ে হেঁটে দেবী দর্শন করতে যেতে হয় ভক্তদের। ১৯৭১ সালের মহান মুক্তিযুদ্ধের সময় ছাড়া প্রায় তিনশত বছর ধরে ব্যতিক্রম এই পূজার আয়োজন হয়ে আসছে এখানে। 

স্থানীয়রা জানান, মৌলভীবাজার জেলা সদর থেকে প্রায় ১৭ কিলোমিটার ও রাজনগর উপজেলা সদর থেকে প্রায় সাড়ে ৪ কিলোমিটার উত্তরে পাঁচগাঁও গ্রামে সর্বানন্দ দাসের বাড়িতে পালিত হয়ে আসছে ব্যতিক্রম এই পূজা। প্রতি বছর পূজার সময় মহিষ বলির পাশাপাশি কয়েক শত পাঁঠা বলি দেওয়া হয়। পাঁচগাঁও পূজা মন্ডপের তত্ত্বাবধায়ক সঞ্জয় দাস জানান, ‘আমাদের পূর্বপুরুষ সর্বানন্দ দাস আসামের শিবসাগরে মুন্সিপদে চাকরি করতেন। তিনি ছিলেন সাধক পুরুষ। একবার আসামের কামরূপ-কামাক্ষ্যার বাড়িতে গিয়ে পূজার জন্য পাঁচ বছরের একটি মেয়ে চাইলে স্থানীয় লোকজন তাকে একটি মেয়ে দেন। মহাষ্টমীর দিনে কুমারীকে ভগবতীর জ্ঞানে ছয় ঘণ্টা পূজা করা শেষে প্রণাম করার সময় সর্বানন্দ দাস দেখেন, কুমারীর গায়ের রং পরিবর্তন হয়ে লালবর্ণ ধারণ করেছে। পরবর্তী বছর সর্বানন্দ দাস তার নিজ বাড়ি পাঁচগাঁওয়ে শারদীয় দূর্গা পূজার আয়োজন করেন। কুমারীর গায়ের সেই লাল বর্ণের সঙ্গে সাদৃশ্য রেখে লাল বর্ণে রঞ্জিত করেন মাতৃমূর্তিকে। এরপর থেকে প্রায় তিনশত বছর ধরে লাল দূর্গার পূজা হচ্ছে’। তিনি বলেন, ভক্তদের বিশ্বাস পাঁচগাঁও দুর্গা বাড়িতে স্বয়ং দেবী অধিষ্ঠান করেন। এটি জাগ্রত প্রতিমা। এদিকে, দুর্গাপূজা মন্ডপকে ঘিরে আশেপাশের প্রায় এক কিলোমিটার এলাকা জুড়ে মেলা বসে। প্রায় ৫ শতাধিক দোকানে বেচাকেনা হয়। বই, ফার্নিচার, খই, মুড়ি-মুড়কি, বাতাসা, জিলাপি, মিষ্টি, খেলনা বিভিন্ন রকমের পণ্যের পসরা সাজিয়ে বসেন বিক্রেতারা। 

প্রশাসন সূত্রে জানা গেছে, এ বছর রাজনগর উপজেলায় ব্যক্তিগত ও সার্বজনীন মিলে ১৩৮টি মন্ডপে শারদীয় দূর্গাপূজা অনুষ্ঠিত হবে। রাজনগর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) বিনয় ভুষন রায় জানিয়েছেন, পূজায় প্রত্যেক মন্ডপে নিরাপত্তা ও আইন শৃঙ্খলা রক্ষায় নিয়োজিত থাকবে পুলিশ ও আনসার সদস্যরা। তবে পাঁচগাঁও পূজা মন্ডপে রয়েছে গোয়েন্দা নজরদারি। নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকবে অতিরিক্ত পুলিশ ও আনসার সদস্য। টহলে থাকবে র‌্যাব সদস্যরাও। রাজনগর উপজেলা নির্বাহী অফিসার ফারজানা আক্তার মিতা জানান, ‘এবারের দুর্গা পূজায় কঠোর নিরাপত্তার ব্যবস্থা করা হয়েছে। পাঁচগাঁও মন্ডপে দেশ-বিদেশের লক্ষাধিক ভক্ত পূণ্যার্থীদের সমাগম ঘটে। তাই নিরাপত্তার কথা ভেবে এই মন্ডপকে সিসিটিভির আওতায় আনা হয়েছে। ইতো মধ্যে অয়োজনকারিদের দাবির প্রেক্ষিতে ভাঙ্গাচূড়া রাস্তা ঘাটের মেরামত কাজ করা হয়েছে।