‘লাব্বাইক’ ধ্বনিতে মুখরিত আরাফাত ময়দান

‘লাব্বাইক’ ধ্বনিতে মুখরিত আরাফাত ময়দান

রয়েল ভিউ ডেস্ক:
সারা বিশ্ব থেকে সৌদি আরবে সমবেত হওয়া মুসলমানেরা আজ শুক্রবার আরাফাত ময়দানে হাজির হয়েছেন হজের মূল আনুষ্ঠানিকতায় অংশ নিতে। তাঁদের ‘লাব্বাইক আল্লাহুমা লাব্বাইক’ ধ্বনিতে মুখরিত হয়ে উঠেছে বিদায় হজের স্মৃতি বিজড়িত এ ময়দান।

সেখানে তাঁরা সূর্যাস্ত পর্যন্ত থেকে হজের খুতবা শুনবেন এবং জুমা ও আসরের নামাজ পড়বেন। এ বছর আরাফাতের ময়দানে হজের খুতবা দেবেন মসজিদে নামিরার খতিব মুহাম্মাদ আবদুল করীম আল-ঈসা। এ খুতবা রেডিও ও টেলিভিশনে সম্প্রচার করা হবে বিশ্বময়।

কোভিড মহামারির ভয়াবহতা কাটিয়ে ওঠায় দুবছর পর কিছুটা বড় পরিসরে হজ হচ্ছে এবার। এ বছর বিভিন্ন দেশের ১০ লাখ মুসলমানকে হজে অংশ নেওয়ার সুযোগ দিয়েছে সৌদি আরব। তবে এ সংখ্যাও মহামারির আগের সময়ের তুলনায় অর্ধেক।

এ বছর যারা হজ করছেন, তাদের মধ্যে সাড়ে আট লাখ মানুষ বিশ্বের বিভিন্ন দেশ থেকে গেছেন, বাকিরা সৌদি আরবে থাকেন। বাংলাদেশ থেকে এবার হজ করার সুযোগ পাচ্ছেন ৬০ হাজার মুসলমান।

গত বুধবার তাঁরা পবিত্র নগরী মক্কায় কাবা শরীফ তাওয়াফ করেন। এরপর রাতে এশার নামাজের পর থেকে জড়ো হতে শুরু করেন তাবুনগরী মিনায়। বৃহস্পতিবার সারা দিন ও রাত তাঁরা সেখানে কাটান ইবাদত-বন্দেগির মধ্য দিয়ে। আল্লাহর নৈকট্য লাভের আশায় তাঁরা জিকির করেন, নামাজ পড়েন জামাতে।

হজের মূল আনুষ্ঠানিকতার জন্য আজ শুক্রবার ভোরের আগেই তাঁরা সমবেত হতে থাকেন আরাফাতের ময়দানে। ইসলামি রীতি অনুযায়ী, জিলহজ মাসের নবম দিনটি আরাফাতের ময়দানে অবস্থান করে ইবাদতে কাটানোই হল হজ।

সেলাইবিহীন সাদা দুই টুকরা কাপড়ে সূর্যোদয় থেকে সূর্যাস্ত পর্যন্ত তাঁরা আরাফাতের ময়দানেই থাকবেন। যার যার মতো সুবিধাজনক জায়গা বেছে নিয়ে ইবাদত করবেন; হজের খুতবা শুনবেন।

চার বর্গমাইল আয়তনের এ বিশাল সমতল মাঠের দক্ষিণ দিকে মক্কা হাদা তায়েফ রিং রোড, উত্তরে সাদ পাহাড়। সেখান থেকে আরাফাত সীমান্ত পশ্চিমে আরও প্রায় পৌনে এক মাইল বিস্তৃত।

মুসলমানদের বিশ্বাস অনুযায়ী, আদি পিতা আদম (আ.) ও আদি মাতা হাওয়া পৃথিবীতে পুনর্মিলনের পর এ আরাফাতের ময়দানে এসে আল্লাহর কাছে কৃতজ্ঞতা জানিয়েছিলেন। এক হাজার ৪০০ বছরের বেশি সময় আগে এখানেই শেষ নবী হজরত মুহাম্মদ (স.) দিয়েছিলেন তাঁর বিদায় হজের ঐতিহাসিক ভাষণ।

এ আরাফাতে উপস্থিত না হলে হজের আনুষ্ঠানিকতা পূর্ণাঙ্গ হয় না। তাই হজে এসে যারা অসুস্থ হয়ে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন, তাঁদেরও অ্যাম্বুলেন্সে করে আরাফাতের ময়দানে নিয়ে আসা হয় স্বল্প সময়ের জন্য।

প্রতিবছরের মতো এবারও হজের দিন ভোরে কাবা আচ্ছাদিত করা হয় নতুন গিলাফে। মসজিদুল হারাম ও মসজিদে নববীর সভাপতির তত্ত্বাবধানে শুক্রবার ফজরের নামাজের পর নতুন গিলাফ পরানো হয়।

আরাফাতের ময়দানের আনুষ্ঠানিকতা সেরে আবারও মিনায় ফেরার পথে শুক্রবার সন্ধ্যায় মুযদালিফায় মাগরিব ও এশার নামাজ পড়বেন সমবেত মুসলমানরা। মুজদালিফায় রাতে থাকার সময় তাঁরা পাথর সংগ্রহ করবেন, যা মিনার জামারায় শয়তানের উদ্দেশে ছোঁড়া হবে।

শনিবার সকালে মিনায় ফিরে সেই পাথর তাঁরা প্রতীকী শয়তানকে লক্ষ্য করে ছুঁড়বেন। এরপর কোরবানি দিয়ে ইহরাম ত্যাগ করবেন এবং সবশেষে কাবা শরিফকে বিদায়ী তাওয়াফের মধ্যে দিয়ে শেষ হবে হজের আনুষ্ঠানিকতা।