শিক্ষকদের খাবার ফিরিয়ে দিলেন শিক্ষার্থীরা

শিক্ষকদের খাবার ফিরিয়ে দিলেন শিক্ষার্থীরা

রয়েল ভিউ ডেস্ক::
উপাচার্য এবং অনশনরত শিক্ষার্থীদের জন্য নিয়ে আসা খাবার ফিরিয়ে দিলেন শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (শাবিপ্রবি) আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীরা। বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক প্রতিনিধিরা এই খাবার নিয়ে যান। এর আগে সিলেট সিটি করপোরেশনের দুই কাউন্সিলরের নিয়ে আসা বিরিয়ানি ফিরিয়ে দিয়েছেন শিক্ষার্থীরা।

সোমবার (২৪ জানুয়ারি) বিকেল সাড়ে ৫টার দিকে শাবিপ্রবি প্রক্টর সহযোগী অধ্যাপক আলমগীর কবির, সহকারী প্রক্টর সহকারী অধ্যাপক আবু হেনা পহিল, ছাত্র উপদেষ্টা ও নির্দেশনা পরিচালক অধ্যাপক জহির উদ্দিন আহমেদ, বঙ্গবন্ধু হলের সহকারী প্রভোস্ট মুনিরুজ্জামান সোহাগ উপাচার্য ফরিদ উদ্দিন আহমেদ ও অনশনরত শিক্ষার্থীদের জন্য খাবার নিয়ে যান।

বিশ্ববিদ্যালয়ের কিলো রোডে উপাচর্যের বাসভবনের সামনে শিক্ষার্থীরা আগে থেকেই মানবপ্রাচীর তৈরি করে রাখেন। তারা শর্ত জুড়ে দিয়েছেন, ‍পুলিশ ছাড়া এই প্রাচীর ভেদ করে কেউ উপাচর্যের বাসভবনের ভেতরে যেতে পারবেন না।

শিক্ষক প্রতিনিধিরা এসময় শিক্ষার্থীদের অনেক অনুরোধ করলেও ভেতরে যেতে পারেননি। এমনকি অনশনরত শিক্ষার্থীদের জন্য নিয়ে আসা খাবারও তারা গ্রহণ করেননি।

শিক্ষকরা পরে ফিরে যান। এসময় আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা উপাচার্য অধ্যাপক ফরিদ উদ্দিনের পদত্যাগের দাবিতে স্লোগান দিচ্ছিলেন।

গত রোববার সন্ধ্যা সাড়ে ৭টায় আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা উপাচার্য অধ্যাপক ফরিদ উদ্দিন আহমেদের বাসভবনের বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে দেন।

রোববার বিকেলে সংবাদ সম্মেলনে শিক্ষার্থীরা বলেছেন, আমরণ অনশনের পরও উপাচার্য পদত্যাগ না করলে তাকে পূর্ণ অবরুদ্ধ করে রাখা হবে।

উল্লেখ্য, শাবি শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের শুরু ১৩ জানুয়ারি। রাতে বিশ্ববিদ্যালয়ের বেগম সিরাজুন্নেসা চৌধুরী হলের প্রাধ্যক্ষ জাফরিন আহমেদ লিজার বিরুদ্ধে অসদাচরণের অভিযোগ তুলে তার পদত্যাগসহ তিন দফা দাবিতে আন্দোলন শুরু করেন হলের কয়েক শ ছাত্রী। ১৬ জানুয়ারি বিকেলে শিক্ষার্থীরা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইসিটি ভবনে উপাচার্যকে অবরুদ্ধ করেন। তখন শিক্ষার্থীদের লাঠিপেটা করে উপাচার্যকে মুক্ত করে পুলিশ। এরপর পুলিশ ৩০০ জনকে আসামি করে শিক্ষার্থীদের বিরুদ্ধে মামলা করে। সেদিন রাতে বিশ্ববিদ্যালয় অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ ঘোষণা করে শিক্ষার্থীদের হল ছাড়ার নির্দেশ দেয় কর্তৃপক্ষ। শিক্ষার্থীরা তা উপেক্ষা করে উপাচার্যের বাসভবনের সামনে অবস্থান নিয়ে তার পদত্যাগ দাবিতে আন্দোলনে নামেন।

বাসভবনের সামনে অবস্থানের কারণে গত ১৭ জানুয়ারি থেকেই অবরুদ্ধ অবস্থায় আছেন উপাচার্য ফরিদ উদ্দিন আহমদ। ১৯ জানুয়ারি দুপুর আড়াইটা থেকে উপাচার্যের পদত্যাগ না করা পর্যন্ত আমরণ অনশনে বসেন ২৪ শিক্ষার্থী। তাদের মধ্যে একজনের বাবা হৃদরোগে আক্রান্ত হওয়ায় তিনি অনশন শুরুর পরদিনই বাড়ি চলে যান। বাকি ২৩ অনশনকারীর মধ্যে ১৬ জন অসুস্থ হয়ে হাসপাতালে ভর্তি আছেন। ২৩ জানুয়ারি আরও চারজন শিক্ষার্থী অনশনে যোগ দেন।

এর মাঝে উপাচার্য ইস্যুতে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের সঙ্গে ২২ জানুয়ারি গভীর রাতে ভার্চুয়ালি বৈঠক করেন শিক্ষামন্ত্রী। বৈঠকে উপাচার্যের পদত্যাগের বিষয়ে কোনো সিদ্ধান্ত না এলেও দাবিগুলো লিখিতভাবে জমা দেয়ার পরামর্শ দেন তিনি। তবে বৈঠকের পর শিক্ষার্থীরা জানান, তাদের মূল দাবি উপাচার্য ফরিদ উদ্দিন আহমদের পদত্যাগ। এই দাবি না মানা পর্যন্ত তারা আন্দোলন থেকে সরবেন না। ২৩ জানুয়ারি দুপুরের পর শিক্ষার্থীদের আবার শিক্ষামন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠক হওয়ার কথা ছিল। তবে তা না হওয়ায় তারা উপাচার্যকে অবরুদ্ধের ঘোষণা দেন।