ব্র্রিফিংয়ে শাবিপ্রবি’র আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীরা 

শর্টগানের স্পিন্টারে গুরুতর আহত শিক্ষার্থীকে ঢাকায় নেয়া হচ্ছে

শর্টগানের স্পিন্টারে গুরুতর আহত শিক্ষার্থীকে ঢাকায় নেয়া হচ্ছে

প্রধানমন্ত্রীর প্রতি কৃতজ্ঞতা

শাবি প্রতিনিধি ॥ পুলিশের শর্টগানের স্পিন্টারে গুরুতর আহত সজল কুন্ডুকে উন্নত চিকিৎসার জন্য ঢাকায় নেয়ার সকল ব্যবস্থা করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (শাবিপ্রবি) আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা। একই সাথে ১৬ জানুয়ারি পুলিশি হামলার ঘটনায় আহত এবং অনশনরত অবস্থায় অসুস্থ সকলের চিকিৎসার ব্যয়ভারও শিক্ষামন্ত্রণালয় থেকে বহন করা হয়েছে। গতকাল শুক্রবার বিকেল ৪টায় প্রেসব্রিফিংয়ে এই তথ্য জানান শাবিপ্রবির ভিসির পদত্যাগের দাবিতে আন্দোলনকারীদের পক্ষে মোহাইমিনুল বাশার রাজ। অন্যদিকে, শাহজালাল বিশ্ববিদ্যালয় পরিস্থিতি ধীরে ধীরে স্বাভাবিক হয়ে আসছে। পুলিশ এখনো ভিসির বাসভবনে অবস্থান করছে।
বিশ্ববিদ্যালয়ের গোলচত্বরে প্রেসব্রিফিংয়ে মোহাইমিনুল বাশার রাজ বলেন, সরকারের নির্দেশনায় শিক্ষামন্ত্রী আমাদের মূল দাবিসহ অন্যান্য দাবি পূরণের আশ্বাস দিয়েছেন। আমরা সকল শিক্ষার্থী মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর প্রতি কৃতজ্ঞ। শিক্ষামন্ত্রী বৃহস্পতিবার তার প্রেস ব্রিফিংয়ে আমাদের দাবি ও সমস্যা প্রসঙ্গে আলোচনার উদ্দেশ্য শাবিপ্রবিতে আসার আগ্রহ প্রকাশ করেছেন। আমাদের সঙ্গে আলোচনায় আগ্রহ প্রকাশ করায় শাবিপ্রবির সকল শিক্ষার্থীর পক্ষ থেকে ধন্যবাদ জানাচ্ছি। আমরা তাকে জানাতে চাই, আমরা তার সঙ্গে আমাদের দাবি এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন সমস্যা নিয়ে আলোচনার জন্য উন্মুখ হয়ে আছি। আমরা আশা করবো, তিনি দ্রুতই আমাদের ক্যাম্পাসে এসে আমাদের সঙ্গে আলোচনায় অংশ নিবেন। এও আশা করছি যে আমাদের মূল দাবিসহ অন্যান্য দাবি পূরণের যে আশ্বাস দেওয়া হয়েছে তা সেগুলোও অতিসত্বর পূরণ করা হবে।
মোহাইমিনুল বাশার রাজ জানান, ভিসি ফরিদ উদ্দিন আহমেদ এর পদত্যাগের আগ পর্যন্ত তাদের নানা কর্মসসূচি অব্যাহত রয়েছে। আপাতত সাংস্কৃতিক কর্মকান্ড, রোড পেন্টিং করছেন তারা।
১৩ জানুয়ারি প্রভোস্টের বিরুদ্ধে অসদাচরণের অভিযোগ তুলে তার পদত্যাগসহ তিন দফা দাবিতে উপাচার্য কার্যালয়ের সামনে আন্দোলন শুরু করেন শাবিপ্রবির সিরাজুন্নেসা ছাত্রী হলের শিক্ষার্থীরা। পরে ১৫ জানুয়ারি ছাত্র উপদেষ্টা অধ্যাপক জহির উদ্দিন আহমেদ ও প্রক্টর সহযোগী অধ্যাপক ড. আলমগীর কবিরের উপস্থিতিতে আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের বেধড়ক মারধর করেন ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা। ১৬ জানুয়ারি আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীরা শাবিপ্রবি উপাচার্যকে অবরুদ্ধ করেন। সে সময় পুলিশের সঙ্গে ব্যাপক সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়েন ছাত্র-ছাত্রীরা। তখন অন্তত ৪০ জন শিক্ষার্থী আহত হন। ঘণ্টা তিনেক পর অবরুদ্ধ উপাচার্যকে উদ্ধার করেন পুলিশের ক্রাইসিস রেসপন্স টিমের সদস্যরা। পুলিশ-শিক্ষার্থী সংঘর্ষের পর শাবিপ্রবি উপাচার্য ফরিদ উদ্দিন আহমেদের পদত্যাগের দাবিতে আন্দোলনে নামেন শিক্ষার্থীরা। ফলে বিশ্ববিদ্যালয় কার্যক্রমে অচলাবস্থা সৃষ্টি হয়। তারপর থেকেই উত্তপ্ত হয়ে ওঠে বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস।
১৬ জানুয়ারি রাতে জরুরি সিন্ডিকেট সভা করে বিশ্ববিদ্যালয় অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ ঘোষণা করে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। পরদিন দুপুর ১২টার মধ্যে হল ছাড়ার নির্দেশনাও দেয়া হয়। নির্দেশনার পর কিছু শিক্ষার্থী ক্যাম্পাস ছেড়ে গেলেও বিপুলসংখ্যক শিক্ষার্থী ক্যাম্পাসে থেকে যান। তারা আবার একত্র হয়ে অবস্থান কর্মসূচি পালন করেন। এসব আন্দোলনের পরিপ্রেক্ষিতে পদত্যাগ করেন সিরাজুন্নেসা হলের প্রভোস্ট সহযোগী অধ্যাপক জাফরিন আহমেদ। ওই হলের নতুন প্রভোস্ট হিসেবে নিয়োগ পান পদার্থবিজ্ঞান বিভাগের ড. নাজিয়া চৌধুরী।
১৯ জানুয়ারি থেকে উপাচার্যের পদত্যাগের দাবিতে আমরণ অনশন শুরু করেন শিক্ষার্থীরা। ২৬ জানুয়ারি ভোর ৪টার দিকে বিশিষ্ট লেখক-কলামিস্ট ড. মুহম্মদ জাফর ইকবাল ও ড. ইয়াসমিন হক দম্পতি বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে আসেন এবং শিক্ষার্থীদের অনশন ভাঙার জন্য অনুরোধ করেন। পরবর্তীতে শিক্ষার্থীরা তাদের ডাকে সাড়া দিয়ে ১৬৩ ঘণ্টা পর বুধবার সকাল ১০টা ২০ মিনিটে অনশন ভাঙেন।