শারদীয় দুর্গোৎসবের  মহাসপ্তমী আজ

শারদীয় দুর্গোৎসবের  মহাসপ্তমী আজ

সুনীল সিংহ :

শারদীয় দুর্গা পূজার মহাসপ্তমী আজ শনিবার। মূলতঃ দুর্গাপূজার মূল পর্বও শুরু হচ্ছে আজ। এদিন দেবী নব পত্রিকা বাসিনী রূপে পূজো নেবেন ভক্তদের কাছ থেকে। শঙ্খধ্বনি, উলু ধ্বনি আর নব পত্রিকায় প্রবেশের মধ্য দিয়ে শুরু হবে দেবী দুর্গার আরাধনা। মহাসপ্তমীতে ষোড়শ উপাদানে অর্থাৎ ষোলটি উপাদানে দেবীর পূজো হবে। সকালে ত্রিণয়নী দেবীর চক্ষুদান করা হবে। দেবীকে আসন, বস্ত্র, নৈবেদ্য, ¯œানীয়, পুষ্পমালা, চন্দন, ধূপ ও দীপ দিয়ে পূজা করবেন ভক্তরা।

জীবের দুর্গতি হরণ করেন বলে তিনি দুর্গা। আবার তিনি দুর্গম নামের অসুরকে বধ করেছিলেন বলেও দুর্গা নামে পরিচিতা হন। তিনি শক্তিদায়িনী অভয়দায়িনী। যুগে যুগে বিভিন্ন সংকটের সময় তিনি মর্ত্য ধামে আবির্ভূত হয়েছেন বিভিন্ন রূপে, বিভিন্ন নামে। তাই, তিনি আদ্যাশক্তি, ব্রহ্মা সনাতনী। দুর্গা, মহিষ মর্দিনী, কালিকা, ভারতী, অম্বিকা, গিরিজা বৈষ্ণবী, কৌমারী, বাহারী, চন্ডী লক্ষ্মী, উমা, হৈমবতী, কমলা, শিবানী, যোগনিদ্রা নামেও পূজিতা।

মার্কেন্ডেয় পুরাণ মতে, মহিষাসুর নামক অসুর স্বর্গ থেকে দেবতাদের বিতারিত করে স্বর্গ অধিকার করে। এতে দেবতারা ব্রহ্মার শরণাপন্ন হন। ব্রহ্মা এর প্রতিকারের জন্য মহাদেব ও অন্য দেবতাদের নিয়ে বিষ্ণুর কাছে উপস্থিত হন। মহিষাসুর তাকে কোন পুরুষ বধ করতে পারবেন না বলে বর লাভ করেছিলেন। তাই, বিষ্ণু দেবতাদের পরামর্শ দেন যে, প্রত্যেক দেবতা নিজ নিজ তেজ ত্যাগ করে একটি নারী মূর্তি সৃষ্টি করবেন। এরপর সমবেত দেবতারা তেজ ত্যাগ করতে আরম্ভ করেন। তাদের মধ্যে মহাদেবের তেজে মুখ, যমের তেজে চুল, বিষ্ণুর তেজে বাহু, চন্দ্রের তেজে বক্ষ, ইন্দ্রের তেজে কটিদেশ, বরুণের তেজে জঙ্ঘা ও উরু, পৃথিবীর তেজে নিতম্ব, ব্রহ্মার তেজে পদযুগল, সূর্যের তেজে পায়ের আঙুল, বসুগণের তেজে হাতের আঙুল, কুবেরের তেজে নাসিকা, প্রজাপতির তেজে দাঁত, অগ্নির তেজে ত্রিণয়ন, সন্ধ্যার তেজে  ব্রু, বায়ুর তেজে কান এবং অন্যান্য দেবতার তেজে শিবারূপী দুর্গার সৃষ্টি। 

এরপর দেবতারা তাকে বস্ত্র, পোশাক ও অস্ত্র দান করেন। মহাদেব দিলেন শূল, বিষ্ণু দিলেন চক্র, বরুণ দিলেন শঙ্খ, অগ্নি দিলেন শক্তি, বায়ু দিলেন ধনু ও বাণপূর্ণ তুণ, ইন্দ্র দিলেন বজ্র, ঐরাবত দিলেন ঘণ্টা, যম দিলেন কালদন্ড, ব্রহ্মা দিলেন অক্ষমালা ও কমন্ডলু, সূর্য দিলেন রশ্মি, কালখক্ষ ও নির্মল চর্ম, ক্ষিরোদসাগর দিলেন অক্ষয় বস্ত্রসহ বিভিন্ন অলংকার ও আভরণ, বিশ্বকর্মা দিলেন পরশু সহ নানাবিধ অস্ত্র, অভেদ্য কবচমালা, হিমালয় দিলেন সিংহ, কুবের দিলেন অমৃতের পান পাত্র, শীষনাগ দিলেন নাগাহার, অন্য দেবতারা দিলেন সাধ্যমত উপহার।
দুর্গতি নাশিনী দেবী দুর্গার আগমনে ভক্ত পূণ্যার্থীরা আজ শনিবার পূজামন্ডপে সমবেত হবেন আনন্দ ও শ্রদ্ধাপূর্ণ চিত্তে। পূজা শেষে সকলে মিলে জগজ্জননী দুর্গার চরণে নিবেদন করবেন পুষ্পাঞ্জলি। সুখ-শান্তি, সমৃদ্ধি ও বৈশ্বিক মহামারি করোনাসহ সকল অশুভ অপশক্তি থেকে মুক্তি কামনায় সমাগত পূণ্যার্থীদের কন্ঠে সমস্বরে উচ্চারিত হবে শান্তির মন্ত্র। নানা বয়স ও শ্রেণী পেশার মানুষের উপস্থিতিতে প্রতিটি মন্দির প্রাঙ্গণ পরিণত হবে মহাতীর্থে। 
এদিন বিকেল থেকে প্রতিমা দেখতে দর্শণার্থীদের ঢল নামবে মন্ডপে মন্ডপে, প্রতিটি মন্দির এলাকা পরিণত হবে জনারণ্যে। দিনব্যাপী প্রতিটি মন্দিরে ও বিভিন্ন স্থানে চলবে সদ গ্রন্থাদি পাঠ, ধর্মসভা, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। সন্ধ্যায় রঙ-বেরঙের আলোয় আলোকিত করা হবে পূজা মন্ডপগুলো। সন্ধ্যার পর বিভিন্ন স্থানে আরতি প্রতিযোগিতা, ধর্মীয় সঙ্গীতানুষ্ঠান, নাটকসহ অন্যান্য ঐতিহ্যবাহী অনুষ্ঠানমালার আয়োজন করা হয়েছে। এসব অনুষ্ঠানাদি দেখতে দর্শণার্থীদের ঢল নামবে। ভিড় থাকবে নগরী সহ সকল পূজা মন্ডপে।