শ্রীমঙ্গলে ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর সন্তানরা পড়ছে নিজস্ব হরফে বই

শ্রীমঙ্গলে ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর সন্তানরা পড়ছে নিজস্ব হরফে বই

রয়েল ভিউ ডেস্ক :
মৌলভীবাজার জেলায় প্রায় ৯০ টিরও বেশি ক্ষুদ্র নৃ-জাতি গোষ্ঠীর বসবাস। এদের অধিকাংশেরই বসবাস শ্রীমঙ্গল উপজেলায়। ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর নিজেদের সংস্কৃতি রয়েছে। এছাড়াও রয়েছে নিজের স্বরলিপি। কিন্তু সংরক্ষণের অভাবে অনেক জাতি হারিয়ে ফেলেছেন তাদের নিজস্ব ভাষার হরফ। হারিয়ে যাওয়া এই হরফ সংরক্ষণ করে রোমান্স ভাষায় ছাপিয়ে পাঁচটি ক্ষুদ্র নৃ-জাতিগোষ্ঠীর জন্য কয়েক হাজার বই বিতরণ করেছেন শ্রীমঙ্গল উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা। যা জেলা জুড়ে আদিবাসীদের মধ্যে সারা জাগিয়েছে। 

ক-কে কোক, খ-কে সাম, গ-কে লাই, ঘ-কে মিত, ঙ-কে পা। এভাবেই মৌলভীবাজারের শ্রীমঙ্গলের এই মনিপুরি, খাসি, সাদ্রিসহ পাঁচটি আদিবাসী জাতি গোষ্ঠীর শিশুরা বাংলাভাষার পাশাপাশি এখন তাঁদের নিজস্ব ভাষার হরফের বই পড়ছে। 

মৌলভীবাজার জেলার সাত উপজেলায় প্রায় লক্ষাধিক আদিবাসীর বসবাস। যাদের মধ্যে বেশির ভাগের বসবাস শ্রীমঙ্গল উপজেলায়। এর মধ্যে খাসি, মনিপুরি, গারো, সাদ্রি, সাঁওতাল, মুন্ডা, ত্রিপুরা ও পাঙনসহ ৩৭টি জাতি রয়েছে সরকারি তালিকায়। যাদের প্রত্যেকেরই ছিল নিজস্ব ভাষা ও সংস্কৃতি। যা আজ বিলুপ্তির পথে। 

শ্রীমঙ্গল উপজেলা আদিবাসী সমন্বয়ক তাজুল ইসলাম জাবেদ জানান, শ্রীমঙ্গল উপজেলায় প্রায় বিলুপ্ত হতে বসা ভাষা সংরক্ষণে এগিয়ে এসেছেন শ্রীমঙ্গল উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা নজরুল ইসলাম। তিনি নিজের দায়িত্বের বাইরে অতিরিক্ত দায়িত্ব নিয়ে বাংলাদেশ ও ভারতের বিভিন্ন জায়গা থেকে মনিপুরি, খাসি, সাদ্রিসহ পাঁচটি জাতি গোষ্ঠীর স্বরলিপি সংগ্রহ করে বই আকারে প্রকাশ করেন। যে সব বিদ্যালয়ে আদিবাসী শিশুরা পড়ে এ রকম ৮৪টি বিদ্যালয়ে সেগুলো বিতরণ করেন। 

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা নজরুল ইসলাম জানান, শ্রীমঙ্গল উপজেলায় যে সকল নৃ-গোষ্ঠী রয়েছে তাদের মধ্যে পাহাড়ি এলাকার ১২টি স্থানে রয়েছে খাসিয়া বা খাসি সম্প্রদায়। দুটি গ্রামে বসবাস করেন মণিপুরি সম্প্রদায়। প্রায় পাঁচটি প্রত্যন্ত এলাকায় বসবাস করেন ত্রিপুরা সম্প্রদায়, চা বাগানের উঁচু ও প্রত্যন্ত এলাকায় বসবাস করেন গারো, ওঁরা/উরাং, সাঁওতাল, মুন্ডা, মালপাহাড়ী, পাহাড়ি, কোল বা কল, হাজং, কন্দ, কড়া বা মুদি, গন্জু, গড়াইত, তেলী, তুরি বা মিধা, পাত্র, বাগতী বা বাকতি, বড়াইক বা বাড়াইক, ভূমিজ, মালো বা ঘাসিমালো, মাহালি, মুসহর বা রিকিয়াস, রাজুয়ার, লোহার বা কর্মকার, শবর, খারিয়া, খেড়োয়ার, তংলা, ভিল বা ভীম শহরা বা তেলেঙ্গা, ভূইমালী বা ভূঁইয়া, পাঙন (মণিপুরী মুসলিম), এ ছাড়াও চাকমা, বর্মণ বা কোর, জাতি শহর এলাকায় বসবাস করেন। তিনি জানান, এদের প্রত্যেকেরই রয়েছে নিজস্ব ভাষা ও সংস্কৃতি। যার অধিকাংশই হারিয়ে গেছে। এই ভাষাগুলো সংরক্ষণের বিষয়টি তাঁকে বেশ তাড়না দেয়। তিনি তাঁদের প্রবীণ এবং শিক্ষিত লোকগুলোর সঙ্গে যোগাযোগ করেন। তাঁদের মাধ্যমে আরও একাধিক সোর্সে যোগাযোগ করে তিনি এদের মধ্যে পাঁচটি ভাষার বই সংগ্রহ করতে পেরেছেন। যা ৮ / ১০টি ক্ষুদ্র নৃ-জাতি গোষ্ঠীর ভাষা-ভাষির মানুষের সঙ্গে মিল রয়েছে। তিনি তাদের বর্ণমালাকে বোঝার জন্য তাঁদের বর্ণমালা দিয়ে সে উচ্চারণকে বাংলায় এবং রোমান হরফে প্রকাশ করে ৮৪টি বিদ্যালয়ে কয়েক হাজার বই ছেপে দিয়েছেন। 

এ ব্যাপারে শ্রীমঙ্গল রামনগর মনিপুরি পাড়ার জনপ্রতিনিধি জয়া শর্মা জানান, বইগুলো পাওয়ায় তাঁদের বেশ উপকার হয়েছে। 

এ ব্যাপারে শ্রীমঙ্গল লাউয়াছড়া খাসি পুঞ্জির বাসিন্দা সাজু মাচিয়াং ও ফিলা পত্নী জানান, এমন একটি সুযোগ তাঁরা পাবেন ভাবতেই পারেননি। এই বইগুলো পাওয়ায় তারা নিজের ভাষার হরফ শিখার সুযোগ পেলেন। একই কথা জানান চা শ্রমিক নেতা পংকজ কন্দ। তিনি জানান, তাঁরা সাদ্রী ভাষার বই পেয়েছেন। তাঁদের নিজেদের হরফ এবং ভাষার বই আছে অনেকেই তা জানত না। 

এদিকে শ্রীমঙ্গলে বই দেওয়ার খবর জেলার অন্যান্য উপজেলার আদিবাসীদের মধ্যে ছড়িয়ে পড়লে তারাও সরকারের কাছে দাবি করছেন বই ও তাদের মধ্য থেকে শিক্ষক নিয়োগ দেওয়ার জন্য।