শেষ রক্ষা পেতে সরকার পুরানো খেলা শুরু করেছে: রিজভী

শেষ রক্ষা পেতে সরকার পুরানো খেলা শুরু করেছে: রিজভী

রয়েল ভিউ ডেস্ক:
শেষ রক্ষা পেতে সরকার আবারও সেই পুরানো খেলা শুরু করেছে বলে অভিযোগ করেছেন বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম-মহাসচিব অ্যাডভোকেট রুহুল কবির রিজভী। 

তিনি বলেন, আওয়ামী জালেম সরকারের বিরুদ্ধে জনগণ ফুঁসে উঠেছে। তাদের সকল অন্যায় অবিচার অপকর্মের বিচার দেশের জনগণ করবেই। আর যারা এই নিশিরাতের সরকারকে সহযোগিতা করছেন তারা এসব বন্ধ করুন। জনগণের পায়ের আওয়াজ শুনুন।

বুধবার (৩০ নভেম্বর) দুপুরে নয়াপল্টনে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে রুহুল কবির রিজভী এসব কথা বলেন। 

রিজভী বলেন, এই নিশিরাতের মাফিয়া সরকার পতনের শেষ প্রান্তে পৌঁছে এসে ১০ ডিসেম্বর বিএনপির কর্মসূচিকে নিয়ে ‘পোড়া মাটি নীতি’ অবলম্বন করেছে। আওয়ামী ফ্যাসিবাদ টিকিয়ে রাখার জন্য বিরোধী দলীয় কর্মসূচিকে বানচাল করতে নানা উদ্যোগ গ্রহণ করেছে। বিএনপির নেতাকর্মীদের হত্যা-নির্যাতন ও মিথ্যা মামলা দিয়ে গ্রেপ্তার করা হচ্ছে।

বিএনপির এই মুখপাত্র বলেন, নারায়ণগঞ্জে পুলিশের মামলায় জাপানে থাকা প্রবাসী ছাত্রদল নেতা গায়েবি আসামি (সূত্র-ডেইলি স্টার)। সেই পুরনো কায়দায় সারাদেশে আবারও গায়েবি মামলার হিড়িক চলছে।

বিএনপির জাতীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য মাহবুবুল ইসলাম মাহবুবকে গতরাতে ডিবি পুলিশ পরিচয়ে মোহাম্মদপুরের বাসা থেকে উঠিয়ে নিয়ে গেলেও এখনও পর্যন্ত তার কোন হদিস দিচ্ছে না। এ নিয়ে দল ও তার পরিবার গভীর উৎকণ্ঠায় রয়েছে। তাকে ডিবি পুলিশই তুলে নিয়ে গেছে। তিনি অবিলম্বে তাকে জনসমক্ষে হাজির করার আহবান জানান।

রিজভী অভিযোগ করে বলেন, গত রবিবার সাবেক ছাত্রদল নেতা ও ২০১৮ সালের শরীয়তপুর-৩ আসনের বিএনপি মনোনীত ধানের শীষের প্রার্থী মিয়া নুরুদ্দীন অপুকে দুদুকের একটি ফরমায়েশি ভুয়া মামলায় ডান্ডাবেড়ি পরিয়ে আদালতে হাজির করা হয়। তিনি প্রচন্ড অসুস্থ। বিএনপি’র একজন সাবেক সংসদ সদস্য প্রার্থীকে এহেন নিপীড়ন-নির্যাতন-অসম্মান নজিরবিহীন। কোন সভ্য সমাজে এই ধরনের জুলুম-নির্যাতন-ডান্ডবেড়ি পরানোর মতো ন্যাক্কারজনক ঘৃণ্য-বর্বরোচিত চরম মানবাধিকার লঙ্ঘনের কাজ হতে পারে না। মিয়া নূর উদ্দিন অপু কোন খুন বা ডাকাতি মামলার আসামি নন। তিনি বর্তমান ফ্যাসিস্ট সরকারের ষড়যন্ত্রমূলক মিথ্যা মামলার আসামি।

তিনি বলেন, জাতিসংঘের অর্থনৈতিক ও সামাজিক পরিষদ কারাবন্দিদের জন্য রাষ্ট্রের তরফ থেকে অনুসৃত যে ন্যুনতম নীতিমালা তৈরি করেছে সেখানকার ৩৩ নং অনুচ্ছেদে ডান্ডাবেড়ি পরানোকে অমানবিক বলা হয়েছে। ২০১৭ সালের ১৩ মার্চ এবং ২০১৮ সালের ৮ অক্টোবর বাংলাদেশের হাইকোর্ট বেঞ্চ কোনো আদালতের এজলাসে বিচারাধীন আসামিকে ডান্ডাবেড়ি পরিয়ে কাঠগড়ায় তোলার বিরুদ্ধে কঠোর নির্দেশনা দিয়েছে। তাকে দীর্ঘদিন কারাগারে আটকিয়ে রাখা হয়েছে, জামিনও দেয়া হচ্ছে না-যা অমানবিক ও মানবাধিকারের লঙ্ঘন।

রিজভী অবিলম্বে মিয়া নুর উদ্দিন অপুর মুক্তি প্রদান এবং ডান্ডাবেড়ী পরিয়ে হাতে হ্যান্ডকাপ দিয়ে আদালতে তোলার জন্য দায়ী কারা কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য আহ্বান জানাচ্ছি। 

সারাদেশে বিএনপির নেতাকর্মীদের ওপর হামলা-মামলা-গ্রেপ্তারের চিত্র তুলে ধরে তিনি আরও বলেন, রাজশাহী জেলাধীন বাগমারা উপজেলা বিএনপি’র সিনিয়র যুগ্ম আহবায়ক ও গণিপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান অ্যাডভোকেট মনিরুল ইসলাম রঞ্জুকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ।

জামিন হওয়ার পরেও গত ২৮ নভেম্বর ঢাকা মহানগর উত্তর বিএনপি’র সাবেক সহ-সাধারণ সম্পাদক মো. আশরাফুজ্জাহান জাহানকে কারাফটক থেকে পুনরায় গ্রেপ্তার করা হয়েছে। ঢাকা মহানগর দক্ষিণ-ডেমরা থানাধীন ৬৪ (পূর্ব) নং ওয়ার্ড বিএনপি’র সহ-সভাপতি জাকির হোসেন বাবুল এবং সহ-কোষাধ্যক্ষ মজিবুর রহমানকে গ্রেপ্তারে করেছে পুলিশ।

রিজভী আরও বলেন, গাজীপুরের শ্রীপুর, কালিয়াকৈর, কালীগঞ্জে বিএনপি’র কেন্দ্রীয় নেতা হুমায়ুন কবির খান, কালিয়াকৈর উপজেলা বিএনপি’র সভাপতি হেলাল উদ্দিন, সাধারণ সম্পাদক পারভেজ আহমেদসহ অসংখ্য নেতাকর্মীর নামে চারটি গায়েবি মামলা দায়ের করা হয়েছে। এসব মামলার বাদী পুলিশ এবং আওয়ামী লীগের ক্যাডাররা।

ঝালকাঠি জেলাধীন রাজাপুর উপজেলা বিএনপি'র সভাপতি অ্যাডভোকেট তালুকদার আবুল কালাম আজাদ, সাধারণ সম্পাদক মো. নাসিম উদ্দিন আকনসহ বিএনপি, যুবদল, স্বেচ্ছাসেবক দল, ছাত্রদলের ২৬ নেতাকর্মীর নাম উল্লেখ করে এবং অজ্ঞাত নামা ৮০ জনকে আসামি করে বিস্ফোরক আইনে গায়েবি মামলা দায়ের করেছে উপজেলা আওয়ামী লীগের দপ্তর সম্পাদক।

সংবাদ সম্মেলনে বিএনপির বিএনপির যুববিষয়ক সম্পাদক মীর নেওয়াজ আলী নেওয়াজ, সহ-স্বাস্থ্য বিষয়ক সম্পাদক ডা. রফিকুল ইসলাম, নির্বাহী কমিটির সদস্য তারিকুল ইসলাম তেনজিং প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।