স্বাগত হে বসন্ত

স্বাগত হে বসন্ত

আহমাদ সেলিম :
‘হে কবি! নীরব কেন- ফাগুন যে এসেছে ধরায়, বসন্তে বরিয়া তুমি লবে না কি তব বন্দনায়?’ কবি বেগম সুফিয়া কামাল বসন্তের আবেদনকে এভাবেই তুলে ধরেছেন। আর কবি সুভাষ মুখোপাধ্যায়ের কথায়, ‘ফুল ফুটুক আর না ফুটুক/আজ বসন্ত’।
ঋতুরাজ বসন্তের প্রথম দিন পয়লা ফাল্গুন আজ। সবুজ গাছে রঙিন ফুল ফোটানোর প্রহর আজ। গাছের সবুজ কঁচিপাতা আর বসন্তের দূত কোকিল জেগে ওঠবে দরাজ কন্ঠে। স্বাগত হে বসন্ত। প্রাণ খুলে তাই কবির ভাষায় বলা যায়, ‘আহা আজি এ বসন্তে/এতো ফুল ফোটে/এতো বাঁশি বাজে/এতো পাখি গায়’। ষড়ঋতুর দেশে আবহমান গ্রামবাংলার প্রকৃতিতেই মূলতঃ বসন্ত জানান দেয় তার আগমনী বার্তায়। গ্রামের মেঠোপথ, নদীর পাড়, গাছ, মাঠভরা ফসলের ক্ষেত বসন্তের রঙে রঙিন হয়ে উঠবে আজ। তবে নগর জীবনেও বসন্ত ছন্দ তোলে মৃদু হিল্লোলে। কংক্রিটের নগরীতে কোকিলের কুহুস্বর ধ্বনিত হয় ফাগুনের আগমন সামনে রেখে। যানজট, কোলাহল ছাপিয়েও যেটুকু সবুজ খুঁজে পাওয়া যায় নগরে, একেই অতি আপন করে নেন নগরের কর্মব্যস্ত মানুষ। আজ ফাগুন হাওয়ার দোল লাগবে বাংলার তরুলতা আর দূরের দিগন্তবিস্তৃত মাঠে। বসন্ত সমীরণে রঙিন হয়ে উঠছে প্রকৃতির মায়াবী ক্যানভাস। শীতে খোলসে ঢুকে থাকা কৃষ্ণচূড়া, রাধাচূড়া, নাগলিঙ্গম এখন করোনার মধ্যেও অলৌকিক স্পর্শে জেগে উঠেছে। তবে বসন্ত শুধুু অশোক-পলাশ-শিমূলেই উচ্ছ্বাসের রং ছড়ায় না, আমাদের ঐতিহাসিক রাষ্ট্রভাষা আন্দোলনে শহীদদের রক্তরঙিন পুষ্পিত রক্তের স্মৃতির ওপরও রং ছড়ায়। একুশের পলাশরাঙা দিনের সঙ্গে তারুণ্যের সাহসী উচ্ছ্বাস আর বাঁধভাঙা আবেগের জোয়ার যেন মিলেমিশে একাকার হয়ে আছে। তবে প্রকৃতির নিয়মে বসন্ত এলেও করোনার কাছে জীবন অনেকটা অসহায়। তাই, বসন্তের চিরচেনা সেই রূপ দেখা যাবেনা পথে-প্রান্তরে। তরুণীরা বাসন্তী রঙের শাড়ি পরে খোঁপায় হলুদ গাঁদা, পলাশসহ নানা ফুল গুঁজে আর তরুণরা পাঞ্জাবি ও ফতুয়ায় নতুন করে নিজেদের রাঙাবে না বসন্ত আবহে। গত বছরের মতো এবারও সিলেটে বড় পরিসরে কোনো উৎসব কিংবা উচ্ছ্বাস থাকছেনা। শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে নেই বিশেষ কোনো অনুষ্ঠানের আসর। তবে বেশ কিছু সাংস্কৃতিক প্রতিষ্ঠান, সংগঠন ভার্চুয়াল অনুষ্ঠান করছে। তাদের উদ্যোগে রয়েছে সাংস্কৃতিক প্রতিযোগিতা। একইভাবে শীতের সঙ্গে তুলনা করে অনেক স্থানে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলবে ছোট পরিসরে বসন্তকালের পিঠা উৎসবও। চলবে মুঠোফোন, ফেসবুক, টুইটার ইত্যাদি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে তরুণ তরুণীদের বসন্তের শুভেচ্ছা বিনিময়। বাঙালির জীবনে বসন্তের উপস্থিতি অনাদিকাল থেকেই। সাহিত্যের প্রাচীন নিদর্শনেও বসন্ত ঠাঁই করে নিয়েছে তার আপন মহিমায়। বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর থেকে শুরু করে আধুনিককালের বাউল কবির মনকেও বারবার দুলিয়েছে ঋতুরাজ বসন্ত। একইসাথে বসন্তে আষ্টেপৃষ্ঠে জড়িয়ে আছে বাংলার গৌরবময় ঐতিহ্য, বাঙালিসত্তা। সে ঐতিহ্যের ইতিহাসকে ধরে রাখতে পারলেই বসন্ত উৎসবের সঙ্গে সঙ্গে নতুন প্রজন্ম ছড়িয়ে দিতে পারবে বাঙালি চেতনাকে। বঙ্গাব্দ ১৪০১ সাল থেকে প্রথম ‘বসন্ত উৎসব’ উদযাপন করার রীতি চালু হয়। শিল্প সাহিত্য ও সাংস্কৃতিক সংগঠন চারুবাক এর প্রধান বিশিষ্ট নাট্য ও বাচিকশিল্পী জ্যোতি ভট্টাচার্য্য জানান, বছরের বারো মাসই আমাদের কার্যক্রম চলছে, তবে করোনার কারণে সেগুলো হচ্ছে ভার্চুয়ালি। বসন্ত নিয়ে এবার আমরা বিশেষ কোনো আয়োজন রাখিনি। পরিস্থিতি স্বাভাবিক না হওয়া পর্যন্ত উন্মক্ত অনুষ্ঠানে আমরা যাচ্ছিনা। তবে শিল্পকলায় থাকছে করোনা বিধিনিষেধ মেনে বিভিন্ন সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান।