সুরঞ্জিত সেনগুপ্তের ষষ্ঠ মৃত্যুবাষির্কী আজ

সুরঞ্জিত সেনগুপ্তের ষষ্ঠ মৃত্যুবাষির্কী আজ

রয়েল ভিউ ডেস্ক:
বর্ষীয়ান আওয়ামী লীগ নেতা, মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম সংগঠক ও সাবেক মন্ত্রী সুরঞ্জিত সেনগুপ্তের ষষ্ঠ মৃত্যুবার্ষিকী আজ রোববার। ২০১৭ সালের এই দিনে রাজধানীর ল্যাবএইড হাসপাতালে মারা যান তিনি।

বর্ণাঢ্য রাজনৈতিক জীবনের অধিকারী সুরঞ্জিত সেনগুপ্তের জন্ম ১৯৪৫ সালের ৫ মে সুনামগঞ্জের আনোয়ারাপুর গ্রামে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতকোত্তর ও পরে ঢাকা সেন্ট্রাল ল কলেজ থেকে আইনে স্নাতক ডিগ্রি লাভ করেন তিনি। 

তার রাজনৈতিক জীবন শুরু হরু বামপন্থি রাজনীতির মধ্য দিয়ে। ছাত্রজীবনে ছাত্র ইউনিয়নের পক্ষে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের জগন্নাথ হলের ভিপি প্রার্থী হয়েছিলেন তিনি। পরে ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টিতে (ন্যাপ) যোগ দেন। ১৯৬৭ সালে ন্যাপ পিকিং ও মস্কো ধারায় বিভক্ত হলে মাওলানা ভাসানীকে ত্যাগ করে অধ্যাপক মোজাফফর আহমদের নেতৃত্বাধীন অংশের ন্যাপে যোগ দেন তিনি।

১৯৭০-এর নির্বাচনে আওয়ামী লীগের বাইরে ন্যাপ থেকে প্রাদেশিক পরিষদ সদস্য নির্বাচিত হয়ে দেশবাসীকে তাক লাগিয়ে দেন তিনি। ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধে সক্রিয় অংশগ্রহণ করেন। দেশ স্বাধীন হওয়ার পর সংবিধান প্রণেতা কমিটির অন্যতম সদস্য হিসেবে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন। স্বাধীনতা পরবর্তী সময়ে মোট সাতবার সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছিলেন। এর মধ্যে ন্যাপের ভাঙনের পর এন.এ.পি. থেকে ১৯৮৬ এর নির্বাচনে এবং ১৯৯১ এর নির্বাচনে গণতন্ত্রী পার্টি থেকে জয়ী হন। এই সময়ে একতা পার্টি নামের আলাদা দলও গড়ে তুলেছিলেন।

১৯৯১ সালের পঞ্চম সংসদের সদস্য থাকাকালেই আওয়ামী লীগে যোগ দিয়ে সুরঞ্জিত প্রথমে দলের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য এবং পরে সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য হন। ১৯৯৬ সালের সংসদ নির্বাচনে হেরে গেলেও পরে হবিগঞ্জের একটি আসনে উপনির্বাচন করে বিজয়ী হন তিনি। ওই সময় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সংসদ বিষয়ক উপদেষ্টা নিযুক্ত হন। ২০০১ ও ২০০৮ সালের নির্বাচনেও আওয়ামী লীগের মনোনয়নে নির্বাচিত হন। ২০০৮ সালের নির্বাচনে আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন মহাজোটের নিরঙ্কুশ বিজয়ের পর আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতির দায়িত্ব পান।

তিনি ২০১১ সালের ২৮ নভেম্বর নবগঠিত রেলপথ মন্ত্রী হিসেবে শপথ নেন। কিন্তু ব্যক্তিগত সহকারীর দুর্নীতির দায় মাথায় নিয়ে ২০১২ সালের ১৬ এপ্রিল মন্ত্রীর পদ থেকে পদত্যাগ করেন। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তার পদত্যাগপত্র গ্রহণ না করে দপ্তরবিহীন মন্ত্রী হিসেবে তার মন্ত্রীসভায় রেখে দেন। পরে ব্যক্তিগত সহকারীর অর্থ কেলেঙ্কারির ঘটনা তদন্ত করে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) সুরঞ্জিতকে নির্দোষ ঘোষণা করলে আবারও রাজনীতিতে সক্রিয় হন তিনি। ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারির নির্বাচনে আওয়ামী লীগ আবারও ক্ষমতায় এলে তিনি আবারও আইন মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি মনোনীত হন। মৃত্যুর আগ পর্যন্ত তিনি এ দায়িত্ব পালন করে গেছেন।

২০১২ ও ২০১৬ সালে অনুষ্ঠিত আওয়ামী লীগের দু'টি সম্মেলনেই দলের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য মনোনীত হন সুরঞ্জিত। একই সঙ্গে তিনি ছিলেন দলের মনোনয়ন বোর্ডেরও একজন সদস্য। মৃত্যুর আগ পর্যন্ত দলীয় এসব পদে দায়িত্ব পালন করে গেছেন তিনি। সুরঞ্জিতের স্ত্রী জয়া সেনগুপ্তা বর্তমানে তার আসন সুনামগঞ্জ-২ এর নির্বাচিত সংসদ সদস্য।

দিনটি উপলক্ষে আওয়ামী লীগ ও প্রয়াত এই নেতার পরিবারের পক্ষ থেকে আজ বিভিন্ন কর্মসূচি হাতে নেওয়া হয়েছে। কর্মসূচিতে রয়েছে তাঁর প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন, প্রার্থনা, স্মরণসভা প্রভৃতি। দিরাই ও শাল্লা উপজেলা আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনের উদ্যোগে নানা কর্মসূচি নেওয়া হয়েছে।