সারাদেশে নানা আয়োজনে বর্ষবরণ

সারাদেশে নানা আয়োজনে বর্ষবরণ

রয়েল ভিউ ডেস্ক:
দুই বছর পর আবারও বাংলা বর্ষবরণের উচ্ছ্বাসে মেতেছে সারাদেশ। পুরানো সব জঞ্জালকে ধুয়ে মুছে ফেলে নতুন বছরে ভালো কিছু করার প্রত্যয়ে বরণ করা হচ্ছে বাংলা নতুন বছরকে। বর্ষবরণ উপলক্ষে জেলায় জেলায় নানা কর্মসূচি পালন করা হচ্ছে। সরকারি ও বেসরকারি ব্যবস্থাপনায় আয়োজিত এসব অনুষ্ঠানের মধ্য রয়েছে বর্ণাঢ্য শোভাযাত্রা, আনন্দ মিছিল, ছবি আঁকা, বৈশাখী মেলা ইত্যাদি।

চট্টগ্রাম : বাংলা বর্ষবরণের উচ্ছ্বাসে মেতেছে চট্টগ্রামবাসী। নগরের ডিসি হিল, সিআরবির শিরীষতলা, শিল্পকলা একাডেমি ও চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়সহ বিভিন্ন স্থানে চলছে নতুন বছরকে বরণ করে নেওয়ার নানান আয়োজন। সকাল থেকে সামাজিক-সাংস্কৃতিক সংগঠনের কর্মীরা ‘এসো হে বৈশাখ, এসো এসো’ গানে বরণ করে নেন বাংলা নববর্ষকে।

বরিশাল : সূচনা সংগীত, ঢাকের শব্দ, মুক্তিযোদ্ধা ও গুণীজন সম্মাননা এবং রাখি পরিয়ে বরিশালে বর্ণাঢ্য মঙ্গল শোভাযাত্রার মধ্যদিয়ে নববর্ষ ১৪২৯ উদযাপিত হচ্ছে। জেলা প্রশাসন, চারুকলা বিদ্যালয় বরিশাল, উদীচী শিল্পী গোষ্ঠী, বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়সহ নানা সাংস্কৃতিক সংগঠন ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠান পৃথকভাবে বর্ষ বরণের উৎসব উদযাপন করছে।

চাঁদপুর : করোনার কারণে দুই বছর পর সারাদেশের ন্যায় চাঁদপুরেও পহেলা বৈশাখ উদযাপন করা হচ্ছে। সকালে হাসান আলী উচ্চবিদ্যালয় মাঠ থেকে মঙ্গল শোভাযাত্রা শুরু হয়। এ সময় উপস্থিত ছিলেন জেলা প্রশাসক অঞ্জনা খান মজলিশ, পুলিশ সুপার মিলন মাহমুদ, জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি নাছির উদ্দিন আহমেদ, সাধারণ সম্পাদক আবু নঈম পাটোয়ারী দুলালসহ অন্যরা।

চাঁপাইনবাবগঞ্জ : চাঁপাইনবাবগঞ্জে বাংলা নতুন বছরকে বরণ করে নিতে মঙ্গল শোভাযাত্রা হয়েছে। নানা আয়োজনের মধ্যদিয়ে পুরাতন বছরের সকল গ্লানি মুছে চাঁপাইনবাবগঞ্জে সব বয়সের মানুষ মেতে উঠে বর্ষবরণের উৎসবে। বর্ষবরণ উপলক্ষে জেলা প্রশাসনের উদ্যোগে ঢাক-ঢোল, রং বেরং এর প্লাকার্ড ফেস্টুন ও বাদ্য’র মধ্য দিয়ে মঙ্গল শোভাযাত্রা শহর প্রদক্ষিণ করে। 

সকাল ৯টায় জেলা প্রশাসক কার্যালয় চত্বরের সামনে থেকে মঙ্গল শোভাযাত্রাটি বের হয়ে বিভিন্ন সড়ক প্রদক্ষিন শেষে বঙ্গবন্ধু মুক্তমঞ্চের সামনে গিয়ে শেষ হয়। পরে আলোচনাসভায় মিলিত হয়। মঙ্গল শোভাযাত্রায় লোকজ সংস্কৃতি ফুটিয়ে তুলতে পাখি, প্যাঁচা, ঘোড়া, পালকি, হ্যারিকেন, মাছ ধরার জাল, পতুলসহ বিভিন্ন প্রানীর প্রতিকৃতি দেখা যায়। তবে অন্যবারের মত গ্রাম বাংলার নানা উপকরণ হাতে নিয়ে নেচে-গেয়ে ওঠার সেই চিত্র দেখা যায়নি। তবে মহামারি করোনাভাইরাসের কারণে গত দুই বছর বন্ধ থাকার পর মঙ্গল শোভাযাত্রায় অংশ নিতে পেরে উল্লাস ও উৎসাহের কমতি ছিলনা সাধারণ মানুষের। 

শোভাযাত্রায় চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলা প্রশাসক একেএম গালিভ খান, অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক জাকিউল ইসলাম, কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক কৃষিবিদ মোহাম্মদ নজরুল ইসলাম, সদর উপজেলা নির্বাহী অফিসার ইফফাত জাহানসহ প্রশাসনের বিভিন্নস্তরের কর্মকর্তা ও কর্মচারীবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন। 

এছাড়াও শোভাযাত্রায় অংশগ্রহন করে বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠন। পরে বর্ষবরণের মূল আয়োজন সংগীত, আবৃত্তি ও নৃত্য পরিবেশিত হয়। সকাল ৯টায় জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের সমনে থেকে শুরু হওয়া মঙ্গল শোভাযাত্রায়, লোকজ মোটিভ ফুটিয়ে তোলা হয়।

উৎসব আমেজে সীমিত পরিসরে যশোরে বঙ্গাব্দ ১৪২৯ ।

রাজশাহী: উৎসবমুখর পরিবেশে বাংলা নববর্ষ পালিত হয়েছে। সকালে সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোটের আয়োজনে রাজশাহীর আলুপট্টিপদ্মাপাড়ের বটতলায় "নব আনন্দে জাগো আজি নব রবি কিরণে " শিরোনামে অনুষ্ঠানে গান, কবিতা ও নৃত্য পরিবেশন হয়। পরে আলুপট্টি থেকে মঙল শোভাযাত্রা বের হয়। এছাড়া বিভিন্ন সংগঠন ও প্রতিষ্ঠানে বাংলা নববর্ষের বিভিন্ন আয়োজন করা হয়েছে।

যশোর : মঙ্গল শোভাযাত্রা, সঙ্গীত, নৃত্য, কবিতা আবৃত্তির মধ্য দিয়ে যশোরে বঙ্গাব্দ ১৪২৯ বরণ করে নেওয়া হয়েছে। করোনা মহামারীর দম বন্ধ সময়ের দুই বছর পর বাঙালির প্রাণের উৎসব বর্ষবরণ বেশ জাঁকজমকপূর্ণ পরিবেশেই পালন হয়। তবে, পবিত্র রমজানের কারণে অনুষ্ঠান সংক্ষিপ্ত করা হয়েছে।

সকাল ৭টা ১ মিনিটে যশোর পৌরপার্কে উদীচী শিল্পী গোষ্ঠীর আয়োজন করা সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। কবিগান, পালাগান, পঞ্চকবির গান, আধুনিক গান, লোকসঙ্গীত, লোকনৃত্য, বাউল গান পরিবেশন করে সংগঠনের দুই শ' কর্মী। এছাড়া পুনশ্চ যশোর মুসলিম একাডেমি স্কুল মাঠে এবং তির্যক যশোর ডা. আব্দুর রাজ্জাক কলেজে অনুরূপভাবে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করে।

যশোরের ৩২ টি সাংস্কৃতিক সংগঠনের মধ্যে তিনটি সংগঠন পৃথকভাবে তাদের অনুষ্ঠান করলেও অপর সংগঠনগুলো সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোটের উদ্যোগে বর্ষবরণ পর্ষদের ব্যানারে যশোর টাউন হল মাঠে অনুষ্ঠানের আয়োজন করে।

এরপর সকাল সোয়া ৯টার দিকে যশোর টাউন হল মাঠ থেকে সম্মিলিতভাবে মঙ্গল শোভাযাত্রা বের হয়। শোভাযাত্রাটি শহরের প্রধান প্রধান সড়ক প্রদক্ষিণ করে। শোভাযাত্রায় যশোরের জেলা প্রশাসক, পুলিশ সুপার, পৌরমেয়রসহ বিভিন্ন রাজনীতিক, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক ব্যক্তি ছাড়াও সাধারণ মানুষ অংশগ্রহণ করেন। শোভাযাত্রায় বড় বড় পুতুলসহ বিভিন্ন মুখোস ও গরুরগাড়িসহ গ্রামবাংলার চিরায়ত বিভিন্ন সামগ্রী বহন করা হয়।

দীর্ঘ বিরতীর পর বর্ষবরণের অনুষ্ঠানে যোগ দিতে পেরে স্বস্তি প্রকাশ করেছেন সাধারণ মানুষ। বর্ষবরণের এ অনুষ্ঠান দেশে সকল ধর্ম বর্ণের মানুষের মধ্যে সম্প্রতির বন্ধন সৃষ্টি করবে এমনটা আশা তাদের। এদিকে জেলা প্রশাসক জানিয়েছেন, যশোরে সুন্দরভাবে নববর্ষ উদযাপন হচ্ছে। সার্বিক আয়োজনে ব্যাপক নিরাপত্তা রয়েছে বলে জানান তিনি।

নাটোর: জেলা প্রশাসনের আয়োজনে বিভিন্ন কর্মসুচির মধ্য দিয়ে নাটোরে পালিত হচ্ছে বাংলা নববর্ষ। এ উপলক্ষে আজ বৃহস্পতিবার সকাল সাড়ে ৮ টার দিকে শহরের মহারাজা জগদীন্দ্র নাথ উচ্চ বিদ্যালয় প্রাঙ্গন থেকে এক বর্ণাঢ্য শোভাযাত্রা বের করা হয়। শোভাযাত্রায় বিভিন্ন সংগঠন, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বিভিন্ন প্রতীক নিয়ে অংশ নেয়। নাটোর-৪ আসনের সংসদ সদস্য ও জেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি অধ্যাপক আব্দুল কুদ্দুস, জেলা প্রশাসক শামীম আহমেদ ও পুলিশ সুপার লিটন কুমার সাহার নেতৃত্বে শোভাযাত্রাটি এলাকার প্রধান সড়ক প্রদক্ষিণ করে অর্ধবঙ্গেশ্বরী রাণী ভবানী রাজবাড়ি চত্বরের মুক্ত মঞ্চে গিয়ে শেষ হয়। সেখানে মুক্তমঞ্চে আয়োজন করা হয় আলোচনা সভা ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের। এ ছাড়া একই স্থানে আয়োজন করা হয় গ্রামীন মেলা। মেলায় রয়েছে বিভিন্ন খেলনা সামগ্রীর সমাহারে ১১ টি ষ্টল। শোভাযাত্রা সহ সকল অনুষ্ঠান ও মেলা নির্বিঘ্নে করতে পুলিশ প্রশাসন বিশেষ ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে। জেলার বিভিন্ন উপজেলাতেও বাংলা নববর্ষ পালনে বিভিন্ন কর্মসূচি হাতে নিয়েছে উপজেলা প্রশাসন।

ময়মনসিংহ: পহেলা বৈশাখ বাংলা নববর্ষ উপলক্ষে ময়মনসিংহে বর্নিল-বর্ণাঢ্য মঙ্গল শোভাযাত্রাসহ নানা অনুষ্ঠানমালার আয়োজন করেছে জেলা প্রশাসন। সকাল ৯টায় নগরীর স্টেশন রোড থেকে বিশাল বর্ণাঢ্য মঙ্গল শোভাযাত্রা বের হয়ে নগরীর প্রধান সড়ক প্রদক্ষিণ শেষে জয়নুল আবেদিন পার্কের বৈশাখী মঞ্চে গিয়ে শেষ হয়। মঙ্গল শোভাযাত্রার উদ্বোধন করেন গৃহায়ন ও গণপূর্ত প্রতিমন্ত্রী শরীফ আহমেদ এমপি। এসময় বিভাগীয় কমিশনার শফিকুর রেজা বিশ্বাস, ভারপ্রাপ্ত ডিআইজি শাহ আবিদ হোসেন, জেলা প্রশাসক এনামুল হক, পুলিশ সুপার আহমার উজ্জামানসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক-সামাজিক-সাংস্কৃতিক সংগঠনের নেতৃবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন। নগরবাসীর নজর কাড়তে মঙ্গল শোভাযাত্রায় আবহমান গ্রামবাংলার ঐতিহ্যের ও হারিয়ে যাওয়া সবকিছু জীবন্ত রূপে ফুটিয়ে তোলা হয়। এসময় রাস্তার দু’ধারে শতশত উৎসুক নগরবাসী ভিড় করে।