সিলেটে প্রথমবারের মতো ‘কক্লিয়ার ইমপ্ল্যান্ট সাজারি’ সফলভাবে সম্পন্ন

সিলেটে প্রথমবারের মতো ‘কক্লিয়ার ইমপ্ল্যান্ট সাজারি’ সফলভাবে সম্পন্ন

রয়েল ভিউ ডেস্ক:
ঢাকার বাইরে সিলেট এমএজি ওসমানী মেডিকেল কলেজ (সিওমেক)  হাসপাতালে প্রথমবারের মতো দুই জন্মবধির শিশুর কক্লিয়ার ইমপ্ল্যান্ট সার্জারি সফলভাবে সম্পন্ন হয়েছে। গতকাল বুধবার ঢাকার এবং ওসমানী হাসপাতালের নাক-কান-গলা ও হেড সার্জারি বিভাগের একদল দক্ষ সার্জন-চিকিৎসক দুটি টিমে ভাগ হয়ে অস্ত্রোপচারের মাধ্যমে আদ্রিকা রায় কথা (৪) ও তাসফিয়া জান্নাত (২)  নামের দুই জন্মবধির (প্রবণ ও বাক প্রতিবন্ধী) শিশুর কানে কক্লিয়ার ইমপ্ল্যান্ট স্থাপন করেন। অপারেশনের পর তারা সুস্থ আছে বলে জানিয়েছেন অপারেশন টিমের সদস্যরা। 

জানা গেছে, কক্লিয়ার ইমপ্ল্যান্ট সার্জিকেল টিমের প্রধান নাক-কান-গলা ও হেড সার্জারি বিভাগের বিভাগীয় প্রধান অধ্যাপক ডা. মনিলাল আইচ লিটুর সার্বিক তত্বাবধানে প্রথম অপারেশন টিমের নেতৃত্বে ছিলেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের একই বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ডা. কানু লাল সাহা।

টিমের বাকি সদস্যরা হলেন- সিওমেক-এর নাক-কান-গলা ও হেড সার্জারি বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ডা.কৃষ্ণকান্ত ভৌমিক, ডা.হাসান আতিক চৌধুরী, ডা. তারিকুল ইসলাম ও ডা. অরূপ রাউৎ।

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের সহযোগী অধ্যাপক ডা.হারুনুর রশীদ তালুকদার ইয়ামিন-এর নেতৃত্বে দ্বিতীয় অপারেশন টিমের  সদস্যরা হলেন- সিওমেক-এর সহকারী অধ্যাপক ডা. মো. শাহ কামাল, ডা. মেশকাত রায়হান, ডা. মাছুম বিল্লাহ ও ডা. বিনয় সেন।

অপারেশন টিমে আরও সদস্য হিসেবে ছিলেন- সহযোগী অধ্যাপক ডা.ইমাদ হোসেন চৌধুরী, 'কক্লিয়ার  ইমপ্ল্যান্ট কার্যক্রম'র কর্মসূচি পরিচালক ও সহকারি অধ্যাপক ডা. নূরুল হুদা নাঈম, সহকারী অধ্যাপক ডা. মুখলেছুর রহমান শামীম, সহকারী অধ্যাপক ডা. আব্দুল কাইয়ুম আনসারী, আবাসিক সার্জন ডা. এম. নূরুল ইসলাম, জুনিয়র কনসালটেন্ট ডা. দেবাশীষ বসু, রেজিস্ট্রার ডা. সুশান্ত সিংহ, রেজিস্ট্রার ডা.আব্দুল হাফিজ শাফী ও ডা. জহিরুল  ইসলাম।

অডিওলজিস্ট হিসেবে ছিলেন সহকারী অধ্যাপক শিবা জি (ভারত) ও আনোয়ার  শাহাদাত। এনেস্থেশিওলজিস্ট'র দায়িত্ব পালন করেন ডা. ফুজায়েল আহমেদ, ডা.নিঝুম দাশ, ডা. রায়হান আহমেদ।
ওসমানী হাসপাতালের নাক-কান-গলা বিভাগের রেজিস্ট্রার ডা.আব্দুল হাফিজ শাফী জানান, প্রাথমিকভাবে দু’টি শিশুর কক্লিয়ার অপারেশন সম্পন্ন হয়েছে। পরবর্তীতে আরো কয়েকটি শিশুর কক্লিয়ার সার্জারি করা হবে বলে জানান তিনি। 
জটিল এই অপারেশনের সময় নাক-কান-গলা ও হেড-নেক সার্জন সোসাইটির সভাপতি এবং বিএসএমএমইউ এর এ বিভাগের সাবেক-চেয়ারম্যান দেশবরেণ্য অধ্যাপক ডা. আবুল হাসনাত জোয়ারদার, সিওমেক অধ্যক্ষ অধ্যাপক ডা. ময়নুল হক ও সিওমেক হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল ডা. মাহবুবুর রহমান ভূঁইয়া সার্বক্ষণিক খোঁজখবর রাখেন এবং প্রয়োজনীয় পরামর্শ দেন।
সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের অধীনে পরিচালিত এ 'কক্লিয়ার ইমপ্ল্যান্ট কার্যক্রম' ২০১১ সালে প্রথম বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে চালু হয়। পরবর্তীতে তা জাতীয় নাক-কান-গলা ইনস্টিটিউট ও সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে চালু হয়। বুধবার থেকে সিলেটে এ কার্যক্রম  চালু হলো। সংশ্লিষ্টদের মতে, শুধু অপারেশন এর উপর এই অত্যাধুনিক চিকিৎসা পদ্ধতির সফলতা নিভরশীল নয়, অপারেশন এর একটি অংশ মাত্র। অপারেশনের উপযোগী সঠিক রোগী নির্বাচন,পরীক্ষা-নিরীক্ষা,অডিওথেরাপী, স্পীচ থেরাপী,অডিওভার্বাল থেরাপী, রিহ্যাবিলিটেশন এবং আজীবন ফলো আপ করা এসবের উপর এর সফলতা অনেকটাই নির্ভর করে।
বিশেষজ্ঞরা জানান, জন্মবধির অনেক শিশু কানে না শুনতে পারার দরুণ কথাবলা ও শিখতে পারে না। এসব শিশু ব্যক্তি ও সামাজিক জীবনে নানা বঞ্চনার ও অসুবিধার সম্মুখীন হয়। কক্লিয়ার ইমপ্ল্যান্ট তাদের সে অন্ধকার দশা থেকে মুক্তি লাভের এক আলোকবর্তিকা।