সিলেটে ফরেনসিক ল্যাব না থাকায় বিলম্ব হচ্ছে  মামলার তদন্তে

সিলেটে ফরেনসিক ল্যাব না থাকায় বিলম্ব হচ্ছে  মামলার তদন্তে

রয়েল ভিউ ডেস্ক :
সিলেটে ফরেনসিক ল্যাব না থাকায় চাঞ্চল্যকর মামলার তদন্তে বিলম্ব হচ্ছে। ময়নাতদন্ত প্রতিবেদন আসার পরও শুধুমাত্র  ফরেনসিক রিপোর্ট না আসায় আটকে যাচ্ছে অনেক মামলার তদন্ত কার্যক্রম। চাঞ্চল্যকর অনেক মামলার তদন্তে এমন ঘটনা ঘটছে। সংশ্লিষ্ট সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে। 
সংশ্লিষ্টদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, বর্তমানে ভিসেরা কেমিক্যাল রিপোর্টের জন্যে চট্টগ্রামে ও ডিএনএ-রিপোর্টের জন্যে ঢাকায় সিআইডি'র ফরেনসিক ল্যাবে সিলেট অঞ্চলের নমুনা পরীক্ষা করা হয়। 
জানা গেছে, ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে গেল ২০২১ সালে মোট ৭৯৮টি মরদেহের পোস্টমর্টেম বা ময়নাতদন্ত করা হয়েছে। এর মধ্যে ভিসেরা কেমিক্যাল (বিষক্রিয়া) রিপোর্টের জন্যে প্রায় ৫০০ টি নমুনা চট্টগ্রামে সিআইডি'র ল্যাবে পরীক্ষার জন্য পাঠানো হয়। অপরাধী শনাক্তের জন্যে ডিএনএ রিপোর্ট পেতে প্রায় ২০০টি ডিএনএ নমুনা রাজধানী ঢাকায় সিআইডি'র ফরেনসিক ল্যাবে পাঠানো হয়েছে। ভিসেরা কেমিক্যাল রিপোর্ট সাধারণত এক থেকে তিন মাসের মধ্যেই পাওয়া যায়। কিন্তু ডিএনএ রিপোর্ট পেতে অনেক সময় ৬ মাসেরও বেশি সময় লেগে যায়। অবশ্য রিপোর্ট বিলম্বে পাওয়ার নানা কারণও রয়েছে বলে সূত্র জানিয়েছে।
ফরেনসিক ল্যাবে রাসায়নিক, ব্যালিস্টিকস, হস্তলিপি, ফিঙ্গারপ্রিন্ট, ফুটপ্রিন্ট ও জালনোট শনাক্ত ছাড়াও ভিসেরা, নারকোটিক ও অ্যাসিড টেস্টসহ আরও কয়েকটি বিষয়ে পরীক্ষা করা হয়ে থাকে। এছাড়া সব ধরনের মাদকদ্রব্য, মৃত মানুষের ভিসেরা, কবর থেকে তোলা হাড়, চুল, মাটি ও সফট টিস্যু, বিষাক্ত বা চেতনানাশক পদার্থের উপস্থিতি, আলামতে রক্তের উপস্থিতি, বিস্ফোরক দ্রব্য, দাহ্য পদার্থসহ বিভিন্ন আলামতের রাসায়নিক বিশ্লেষণ করা হয়।
 ডিএনএ পরীক্ষার মাধ্যমে অপরাধীর উপস্থিতি শনাক্ত করা যায়। ‘ক্রাইম সিন’ থেকে সংগৃহীত ফিঙ্গার প্রিন্ট থেকে দৃশ্যমান ও অদৃশ্যমান আঙ্গুলের ছাপের সঙ্গে সন্দেহভাজনদের আঙ্গুলের ছাপ পরীক্ষা করা হয়। শুধুমাত্র ফরেনসিক ল্যাবের পরীক্ষায় অপরাধী শনাক্তের ফলে অনেক ক্লুলেস ঘটনার রহস্য উদঘাটিত হচ্ছে। 
বর্তমানে রাজধানী ঢাকা, চট্টগ্রাম ও রাজশাহীতে ফরেনসিক ল্যাবের কার্যক্রম চলমান রয়েছে। মামলার দীর্ঘসূত্রতা দূরীকরণ ও ন্যায় বিচার নিশ্চিতের লক্ষ্যে সিলেটেও এই ফরেনসিক ল্যাব স্থাপন জরুরি বলে সংশ্লিষ্টরা সিলেটের ডাককে জানিয়েছেন। 
বিশেষজ্ঞদের মতে, সিলেট থেকে চট্টগ্রাম কিংবা ঢাকার ল্যাবে নমুনা পাঠানোর প্রক্রিয়ায় বেশ কয়েক দিন লেগে যায়। নমুনা সংগ্রহের পর তা সংরক্ষণ, পুলিশ কর্তৃক আদালতের অনুমতির জন্য বিষয়টি উপস্থাপন ও পরীক্ষার অনুমোদনের আদেশ নিতে হয়। তাৎক্ষণিকভাবে নমুনা পরীক্ষাগারে প্রেরণ না করার ফলে অনেক সময় নমুনা পুরোপুরি ঠিক নাও থাকতে পারে বলে শঙ্কা থেকে যায়। কিন্তু সিলেটে ফরেনসিক ল্যাব থাকলে তাৎক্ষণিকভাবে নমুনাটি ল্যাবে দেয়া সম্ভব হতো। এর ফলে রিপোর্টটিও তরতাজা পাওয়া যাবে। নিশ্চিত হবে ন্যায় বিচার। এমন প্রেক্ষাপটে তারা সিলেটে দ্রুত ফরেনসিক ল্যাব স্থাপনের দাবি জানিয়েছেন। 
সিলেটের নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালের স্পেশাল পিপি এডভোকেট রাশিদা সাঈদা খানম বলেন,  ভিসেরা রিপোর্টের জন্য ল্যাবে যায়; কিন্তু সঠিক সময়ে সেটি না পাওয়ায় তদন্ত কর্মকর্তা মামলার তদন্ত দ্রুত শেষ করতে পারেন না। সিলেটে ফরেনসিক ল্যাব স্থাপন হলে মামলার তদন্তে সময়ও কমে আসবে। 
সিলেট জেলার পিপি এডভোকেট নিজাম উদ্দিন বলেন, সিলেটের আইনশৃঙ্খলা কমিটির সভায় সম্প্রতি বিষয়টি নিয়ে আলোচনা হয়েছে। সভায় সিলেটে ফরেনসিক ল্যাব স্থাপনের জন্যে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ বরাবরে চিঠি পাঠানোর সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়। এই ল্যাবটি সিলেটে স্থাপন হলে সিলেট অঞ্চলের চাঞ্চল্যকর মামলাগুলোর তদন্ত কার্যক্রমে সময়ক্ষেপন অনেকটা কমে আসবে। 
সিলেট এম.এ.জি ওসমানী মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালের ফরেনসিক মেডিসিন বিভাগের বিভাগীয় প্রধান ও সহকারী অধ্যাপক ডা. মো. শামছুল ইসলাম সিলেটের ডাককে বলেন, বর্তমানে একই কাজ কয়েকটি বিভাগকে করতে হচ্ছে। ভিকটিমের বয়স নির্ধারণের কাজ করছে রেডিওলজি ও ইমেজিং বিভাগ। সেক্সুয়ালের ক্ষেত্রে মাইক্রোবায়োলজি বিভাগ  কাজ করছে। মৃত্যুর পূর্বে ধর্ষিত হয়েছে কিনা তার জন্যে প্যাথলজি বিভাগ কাজ করে। বিষক্রিয়ার সন্দেহ হলে ভিসেরা কেমিক্যাল রিপোর্টের জন্য চট্টগ্রামে ও ডিএনএ রিপোর্টের জন্যে ঢাকায় সিআইডি'র  ফরেনসিক ল্যাবে নমুনা পাঠানো হয়। কিন্তু সিলেটে ফরেনসিক ল্যাব স্থাপন হলে এক জায়গায় সকল রিপোর্ট কম সময়ের মধ্যে তৈরি হবে। এতে সময়ও অনেক কমে আসবে। ওসমানী মেডিকেল কলেজে এজন্যে দক্ষ লোকও রয়েছে। শুধুমাত্র কয়েকটি বিষয়ে প্রয়োজনীয় প্রশিক্ষণ দেয়া হলে সিলেটের লোকজনই সিলেটের ফরেনসিক ল্যাব পরিচালনা করতে পারবে। 
পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি)-এর সিলেটের বিশেষ পুলিশ সুপার সুজ্ঞান চাকমা  বলেন, সিআইডি’র মামলাগুলোর ক্ষেত্রে সমস্যা হচ্ছে না। অন্য সংস্থার তদন্ত কার্যক্রম ফরেনসিক ল্যাবের কারণে বিলম্ব হচ্ছে। এর কারণ উল্লেখ করে তিনি বলেন, যেমন ডিএনএ ওসমানী হাসপাতালের সংশ্লিষ্ট বিভাগ সংগ্রহ করে তা ঢাকা মেডিকেলে পাঠিয়ে দেয়। কিন্তু ঢাকা মেডিকেলের ল্যাব নষ্ট থাকায় এখন আর ডিএনএ রিপোর্ট হয় না। এর ফলে আদালতের দ্বারস্থ হয়ে ডিএনএগুলো সিআইডি'র ল্যাবে পাঠানো হয়। সিলেটে ফরেনসিক ল্যাব স্থাপন হলে এ সকল সমস্যা থাকবে না বলে জানান তিনি। 
তিনি জানান, সিলেটে ফরেনসিক ল্যাব স্থাপনের উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। পুলিশ সদর দপ্তর হয়ে এ সংক্রান্ত প্রস্তাবনাটি স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের অনুমোদন পেয়েছে। বর্তমানে ভূমি মন্ত্রণালয়ে প্রস্তাবনাটি অনুমোদনের অপেক্ষায় রয়েছে। সিলেটে ফরেনসিক ল্যাবটি স্থাপন হলে সিলেট বিভাগের ৪ জেলাসহ পার্শ্ববর্তী ব্রাহ্মণবাড়িয়া, কিশোরগঞ্জ জেলার মামলা তদন্তে ল্যাবটি কাজে লাগবে। এর ফলে চাঞ্চল্যকর মামলার তদন্তে সময়ও কম লাগবে।- দৈনিক সিলেটের ডাক