সিলেটে বিএনপির ইফতারে গরুর আখনি পরিবেশনকে কেন্দ্র করে ক্ষোভ

সিলেটে বিএনপির ইফতারে গরুর আখনি পরিবেশনকে কেন্দ্র করে ক্ষোভ

রয়েল ভিউ ডেস্ক :
সিলেট মহানগর বিএনপি আয়োজিত ইফতার মাহফিলে অমুসলিম নেতাকর্মীদের গরুর মাংসের আখনি পরিবেশনের অভিযোগ পাওয়া গেছে। এনিয়ে দলটির অমুসলিম নেতাকর্মীদের ক্ষোভ দেখা দিয়েছে। অনেকেই এ ঘটনাকে সাম্প্রদায়িক আচরণ আখ্যায়িত করে সমালোচনা করছেন।

বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় সিলেট নগরের একটি কনভেনশন সেন্টারে ইফতার মাহফিলের আয়োজন করে সিলেট মহানগর বিএনপি। এতে প্রধান বক্তা হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু।

ইফতার মাহফিলে অংশ নেওয়া বিএনপির একাধিক নেতা জানান, ইফতার শুরুর আগেই প্রতিটি চেয়ারের সামনে খাবার সম্বলিত প্লেট পরিবেশন করা হয়। প্রত্যেক প্লেটেই গরুর মাংস দিয়ে তৈরি আখনি, ছোলা, পিয়াজু, খেজুর, আলুর চপ ছিলো।

এই ইফতার মাহফিলে বিএনপির বিভিন্ন পর্যায়ের অন্তত ২০ জন অমুসলিম নেতাকর্মী অংশ নেন। এছাড়া আমন্ত্রিত হয়ে যাওয়া সাংবাদিকদের মধ্যেও কয়েকজন অমুসলিম ছিলেন। ইফতারে তাদের জন্য আলাদা ব্যবস্থা ছিলো না বলে জানিয়েছেন উপস্থিতরা।

এতে ইফতার মাহফিল চলাকালেই ক্ষোভ প্রকাশ করেন দলটির কয়েকজন নেতা। রাতে ফেসবুকেও অনেকে এমন কান্ডের সমালোচনা করেন।

ইফতার মাহফিলে অংশ নেওয়া সিলেটের দক্ষিণ সুরমা উপজেলা স্বেচ্ছাসেবক দলের নেতা মন্টু নাথ ফেসবুকে লেখেন- 'আপনারা ইফতার করলেন, আর আমরা (সনাতন ধর্মীরা) হা করে তাকিয়ে তাকিয়ে দেখেই গেলাম। সিলেট জেলা ও মহানগর বিএনপি'র ইফতার মাহফিলে অমুসলিমদের জন্যে নাই কোনো খাবারের ব্যাবস্থা।

আমরা রোজা রাখি না অথবা দিনের বেলা খেয়ে দেয়ে ঘর থেকে বাহির হই এই ভেবে কোন ব্যাবস্থা করা হয়নি !? নাকি? অন্য কোন সমস্যা !??  সম্প্রীতির বাংলাদেশ, সম্প্রীতির রাজনীতির নতুন কোন সংজ্ঞা আবিষ্কার হলে সেটা আমার জানা নেই। আমরা যেহেতু স্বাধীনতার ঘোষক শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের আদর্শিক রাজনীতিতে বিশ্বাসী, সেহেতু আমরা ছিলাম, আছি, থাকবো - এতে কোন সন্দেহ নেই। আমরা যেহেতু আপনাদের পিছু ছাড়ছিনা, আর আপনারা আমাদের জন্যে অন্য কোন আয়োজন করতে পারছেন না। সেহেতু আমাদেরকে আপনারা সার্ভিস ও সেচ্ছাসেবকের কার্ড গলায় ঝুলিয়ে দ্বায়িত্ব দিতে পারতেন। আমরা সার্ভিস ও সেবা দিয়ে সময়ক্ষেপন করতাম। তখন আমরা আমাদের পরিবার, পরিজন, সহযোদ্ধা ও জুনিয়র সহ অনেকের কাছে লজ্জা থেকে রেহাই পেতাম। আমরা বলতাম আমরা কাজের দ্বায়িত্বে ছিলাম।  হা করে থাকিয়ে থাকতাম না। তারাও ব্যাপারটি বুজে নিত।
বিঃদ্রঃ - সিলেট জেলা বিএনপি'র ইফতার মাহফিলেও ঠিক এই রকম আমরা হা করে বাতাস গ্রহণ করেছি।'

ইফতার মাহফিলে অংশ নিয়েছিলেন সিলেট মহানগরের ১৬ নং ওয়ার্ড ছাত্রদলের আহ্বায়ক কনক কান্তি দাস। তিনিও ফেসবুকে এ ঘটনার সমালোচনা করে স্ট্যাটাস দিয়েছেন।

কনক শুক্রবার বলেন, বিএনপির মতো দলের পক্ষে এমনটি করা উচিত হয়নি। ওই অনুষ্ঠানে গিয়ে আমরা অমুসলিম সকল নেতাকর্মীরাই বিব্রত হয়েছেন। মহানগর বিএনপির আহ্বায়ক কমিটিতেও অমুসলিম সদস্য রয়েছেন। তারপরও তারা এটাি কিভাবে করেন?

তিনি বলেন, এরকম ঘটনা বিএনপির আদর্শ ও অসাম্প্রদায়িক চেতনার সাথে বেমানান।

তবে সিলেট মহানগর বিএনপির সদস্য সচিব মিফতাহ সিদ্দিকী এ ঘটনাকে 'অনাকাঙ্খিত ভুল' হিসেবে আখ্যায়িত করেছেন। মিফতা শুক্রবার বলেন, তাড়াহুড়ো করে আয়োজন করতে গিয়ে এই ভুল হয়ে গেছে। এটা অনাকাঙ্খিত। এজন্য আমি দুঃখ প্রকাশ করছি।

এই ইফতার মাহফিলে পূর্বে আলোচনা পর্বে বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা খন্দকার আব্দুল মোক্তাদির, ড. এনামুল হক এনাম, কেন্দ্রীয় নির্বাহী সদস্য সিটি মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী, সিলেট মগানগর বিএনপির আহ্বায়ক আব্দুল কাইয়ুম জালালী পংকীসহ জেলা ও মহানগর কমিটির নেতারা বক্তব্য রাখেন।

অনুষ্ঠানে ভিডিও কনফারেন্সে বক্তব্য রাখেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান।