সিলেটে বৈদ্যুতিক বিলের ঝামেলা এড়ানোর উদ্যোগ

সিলেটে বৈদ্যুতিক বিলের ঝামেলা এড়ানোর উদ্যোগ

আনাস হাবিব কলিন্স
সিলেট বিভাগে বিদ্যুৎ গ্রাহকদের বিল পরিশোধের ঝামেলা এড়াতে সাড়ে ৩ লাখ প্রি-পেমেন্ট মিটার স্থাপন করা হচ্ছে। চলতি বছরের মধ্যেই গ্রাহকদের বিনামূল্যে প্রি-পেমেন্ট মিটার স্থাপন করে দেয়া হবে। বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড (বিউবো) সিলেট অঞ্চলের প্রধান প্রকৌশলী আব্দুল কাদির এ তথ্য নিশ্চিত করে বলেন, সিলেটে প্রি-পেমেন্ট মিটার স্থাপনে ইতোমধ্যে মন্ত্রণালয় থেকে টেন্ডার সম্পন্ন হয়েছে। দু’এক মাসের মধ্যেই এসব মিটার সিলেট এসে পৌঁছবে। পর্যায়ক্রমে এসব মিটার স্থাপন প্রক্রিয়া সম্পন্ন হলে বিদ্যুতের সামগ্রিক চাহিদা পাল্টে যাবে। প্রসঙ্গক্রমে তিনি বলেন, মিটার স্থাপনের অন্যতম উদ্দেশ্য হচ্ছে, বিদ্যুতের অপচয়রোধ এবং এর শতভাগ ব্যবহার নিশ্চিত করা। তিনি জানান, প্রি-পেমেন্ট মিটারে অত্যাধুনিক সুবিধা থাকা সত্ত্বেও কিছু গ্রাহক এ মিটার স্থাপনের ব্যাপারে অনীহা দেখান। স্বার্থান্বেষী মহলও ওই মিটার সম্পর্কে অপপ্রচার চালাচ্ছেন। অথচ, বাস্তবে প্রি-পেমেন্ট মিটার সংশ্লিষ্ট গ্রাহকদের বিল সংক্রান্ত সকল অসঙ্গতি দূর করবে। এ ব্যাপারে সচেতনতা সৃষ্টিতে সকল মহলের সহযোগিতা কামনা করেন তিনি। 

জানা যায়, ২০১৮ সালে বিউবো বিক্রয় ও বিতরণ বিভাগ-২ এর আওতাধীন সিলেট নগরীর একাংশ ও আশপাশ এলাকার প্রি-পেমেন্ট মিটারের কাজ শুরু হয়। প্রথম ধাপে তিনটি উপকেন্দ্র এবং ১৭টি ফিডারের আওতাধীন ৭৫ হাজার গ্রাহককে প্রি-পেমেন্ট মিটারের আওতায় আনার পরিকল্পনা নিয়ে কাজ শুরু হয়। ইতোমধ্যে বিউবো’র ওই অঞ্চলের প্রায় ৮০ ভাগ গ্রাহক প্রি-পেমেন্ট মিটারের সুবিধা গ্রহণ করছেন। এছাড়া, বিক্রয় ও বিতরণ বিভাগ-৫ এর ৬৩ ভাগ গ্রাহককেও প্রি-পেমেন্ট মিটারের আওতায় আনা হয়েছে বলে জানান প্রধান প্রকৌশলী। 
প্রি-পেমেন্ট মিটারের সুবিধা সম্পর্কে সংশ্লিষ্টরা জানান, প্রি-পেমেন্ট মিটার ব্যবহারকারীরা নির্ধারিত ভেন্ডিং সেন্টার এবং ব্যাংক থেকে কার্ড সংগ্রহ করে বিদ্যুৎ সঞ্চালন অব্যাহত রাখতে পারেন। এতে ঘরে বসেই গ্রাহক মিটার রিচার্জ করার সুযোগ পাচ্ছেন। ফলে, গ্রাহক প্রি-পেইড মিটারে অতিরিক্ত বিল আসার সম্ভাবনা এবং ব্যাংকে যাওয়ার ঝামেলা থেকে পরিত্রাণ পাবেন। মিটারের দাম গ্রাহকদের কাছ থেকে কিস্তিতে এবং দীর্ঘ সময়ে আদায় করা হয়ে থাকে। প্রি-পেমেন্ট মিটার ব্যবহার বিদ্যুৎ সাশ্রয়ী বলে জানান। নতুন প্রযুক্তির এ মিটারে ইউনিটের অবস্থা, মিটারের তথ্য দেখার শর্টকোড লিস্ট, রিলে সংযোগ বিচ্ছিন্নকরণ এবং ডিসপ্লেতে কোড দেখার  ব্যবস্থা রয়েছে।

প্রি-পেমেন্ট মিটারে অত্যাধুনিক ব্যবস্থা থাকা সত্ত্বেও কিছু গ্রাহক এ মিটার স্থাপনে নানা অজুহাত দেখাচ্ছেন। বকেয়া পরিশোধের ভয়ে অনেক গ্রাহক প্রি-পেমেন্ট মিটার লাগাতে অনীহা প্রকাশ করছেন। প্রি-পেমেন্ট মিটারের আরেকটি ভালো দিক হচ্ছে, মিটার ব্যবহারকারীদের কার্ডের রিচার্জ মেয়াদ সরকারি বন্ধের দিন শেষ হলেও বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন হবে না। তাছাড়া, বিকেল ৫টার পর কার্ডের মেয়াদ শেষ হলেও পরদিন সকাল ১০ টা পর্যন্ত বিদ্যুৎ সংযোগ অব্যাহত থাকবে। এমনকি, মোবাইলের ন্যায় ইমার্জেন্সী ব্যালেন্স নেয়ার সুযোগ রয়েছে প্রি-পেমেন্ট মিটারে। দু’এক মাসের মধ্যে গ্রাহকরা মোবাইলে প্রি-পেমেন্ট মিটার কার্ড ক্রয়ের সুবিধা পাবেন।

প্রি-পেমেন্ট মিটার স্থাপন প্রসঙ্গে সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন) সিলেট-চ্যাপ্টারের সভাপতি ফারুক মাহমুদ চৌধুরী বলেন, বিদ্যুতের অপচয়রোধে নি:সন্দেহে এটি ভাল উদ্যোগ। মিটারের সুফল সম্পর্কে মানুষকে সচেতন করার ওপর গুরুত্ব আরোপ করেন তিনি। সেই সাথে বকেয়া থাকা গ্রাহকদের কিস্তিতে বিল পরিশোধের সুযোগ দিতে বিউবো কর্তৃপক্ষের প্রতি আহবান জানান। বিউবো বিক্রয় ও বিতরণ বিভাগ-১ এর নির্বাহী প্রকৌশলী ফজলুল করিম মো. ফজলুল করিম জানান, গত বছরের জুন থেকে দুটি উপকেন্দ্রসহ ২০টি ফিডারের আওতাধীন প্রায় ৭০ হাজার গ্রাহককে প্রি-পেমেন্ট মিটারের আওতায় আনতে কাজ শুরু হয়েছে। ইতোমধ্যে ১ হাজার ২শ’ গ্রাহক নিজ খরচে প্রি-পেমেন্ট মিটার স্থাপন করেছেন। সকল নতুন সংযোগের বেলায় প্রি-পেমেন্ট মিটার স্থাপন বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। তবে, টেন্ডারের মাধ্যমে মিটার এলে বিনামূল্যে গ্রাহকদের প্রি-পেমেন্ট মিটার সরবরাহ করার কথা জানান। এক্ষেত্রে মিটার প্রতি খরচ হচ্ছে ৫-৬ হাজার টাকা। ইস্টার্ণ, হোসাফ, এফজিএফ, জেএফজে-এর মিটার ব্যবহারের কথা জানান ওই প্রকৌশলী। 

সংশ্লিষ্টরা জানান, সিলেট অঞ্চলের ১২টি ইলেক্ট্রিক সাপ্লাই (বিদ্যুৎ সঞ্চালন) লাইন প্রি-পেমেন্ট মিটারের আওতায় আসছে। এর মধ্যে নগরী ছাড়াও রয়েছে বিউবোর অন্তর্ভূক্ত সিলেটের জৈন্তাপুর, সুনামগঞ্জ, দিরাই, জগন্নাথপুর, ছাতক, হবিগঞ্জ, মৌলভীবাজার এবং কুলাউড়া। 

বিউবো বিক্রয় ও বিতরণ বিভাগ-২ এর আওতাধীন প্রি-পেমেন্ট মিটার গ্রাহকরা বর্তমানে নগরীর শাহজালাল উপশহরস্থ ১৪ নং রোডের বি-ব্লকের বনরূপ ৪২নং বাসায় অবস্থিত ভেন্ডিং সেন্টার থেকে কার্ড ক্রয় করছেন। এছাড়া, ন্যাশনাল ব্যাংক মিরাবাজার শাখা, নগরীর নয়াসড়কস্থ স্ট্যান্ডার্ড ব্যাংক, মহাজনপট্টিস্থ এনসিসি ব্যাংক, ইউসিবিএল ব্যাংক শিবগঞ্জ পয়েন্ট, সাউথ বাংলা এগ্রিকালচার এন্ড কমার্স (এসবিএসি) ব্যাংক ইসলামপুর শাখা এবং ওয়ান ব্যাংক ইসলামপুর শাখা থেকে প্রি-পেমেন্ট মিটার গ্রাহকদের কার্ড সংগ্রহের সুযোগ রয়েছে।

সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, পর্যায়ক্রমে দেশের সব বিদ্যুৎ গ্রাহককে প্রি-পেমেন্ট মিটারের আওতায় আনার সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। এরই ধারাবাহিকতায় সিলেটেও শুরু হয়েছে এ কার্যক্রম। ২০০৫ এবং ২০০৯ সালে দু’দফায় সিলেট নগরীর বিউবো বিক্রয় ও বিতরণ বিভাগ-২ এর অন্তর্ভূক্ত উপশহর, হাওয়াপাড়া ও কালিঘাটে ১৪ হাজার গ্রাহককে প্রি-পেমেন্ট মিটার স্থাপন করে দেয়া হয়। চলতি বছরের মার্চ মাস থেকে পুনরায় প্রি-পেমেন্ট মিটার স্থাপনের কাজ শুরু হয়।#