সিলেট বিভাগ জুড়ে দেখা দিয়েছে চোখ উঠা রোগের প্রকোপ: কখন চিকিৎসকের পরামর্শ নেবেন

সিলেট বিভাগ জুড়ে দেখা দিয়েছে চোখ উঠা রোগের প্রকোপ: কখন চিকিৎসকের পরামর্শ নেবেন


রয়েল ভিউ ডেস্ক : সিলেট বিভাগের চার জেলা জুড়ে দেখা দিয়েছে চোখ উঠা রোগের প্রকোপ। প্রতিদিন বিপুল সংখ্যক মানুষ চোখ উঠা রোগ নিয়ে চিকিৎসকের স্মরনাপন্ন হচ্ছেন। সিলেটের শহর থেকে গ্রামে সর্বত্র এই রোগ ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে পড়েছে। শিশু-যুবক-বৃদ্ধ সব বয়সের মানুষ এই রোগে আক্রান্ত হচ্ছেন। এতে চোখ জ্বালাপোড়া করা, চোখের পানি পড়াসহ চরম অস্বস্থি তৈরি হয় রোগীদের। তবে চিকিৎসকরা বলছেন, এতে আতঙ্কিত হওয়ার কিছু নেই। তারা ভাইরাসজনিত রোগটি দ্রুত ছড়িয়ে পড়া বন্ধে জনসমাগম এড়িয়ে চলা, চোখে হাত দিয়ে পরে অন্য কোথাও হাত না দেয়া, পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন থাকা, টিস্যু ব্যবহার করার উপর গুরুত্ব আরোপ করেন। সিলেটের সিভিল সার্জন ডা. এসএম শাহরিয়ার বলেন, আমাদের অনেকেই চোখ ঠান্ডা পানি দিয়ে ধৌত করেন। এটা ঠিক নয়, ঠান্ডা পানিতে ভাইরাস আরো সক্রিয় হয়। চোখ কুসুম গরম পানিতে ধৌত করলে কিছুটা স্বস্তি মেলে। 

এদিকে, ছোঁয়াচে রোগ ‘চোখ ওঠা’য় আক্রান্ত যাত্রীদের বিদেশ ভ্রমণ না করার অনুরোধ জানিয়েছে হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষ। গতকাল মঙ্গলবার এক বিজ্ঞপ্তিতে এ অনুরোধ জানান বিমানবন্দরের নির্বাহী পরিচালক গ্রুপ ক্যাপ্টেন মো. কামরুল ইসলাম।

চিকিৎসকরা জানান, রোগটি ছোঁয়াছে হওয়ায় দ্রুত অন্যদের মধ্যে ছড়িয়ে পড়ে। এই রোগে চোখের একেবারে বাইরের স্বচ্ছ অংশ ‘কনজাংকটিভা’ ভাইরাসে আক্রান্ত হয়। ভাইরাস সংক্রমণে সেখানে জ্বালাপোড়া করে। চোখের ছোট ছোট রক্তনালি ফুলে যায়। ফুলে থাকা রক্তনালি গুলোর কারণেই চোখ লালচে হয়ে যায়, যেটাকে চোখ ওঠা বা ‘কনজাংকটিভাইটিস’ বলা হয়।
জানা যায়, সিলেটে এই রোগী দ্রুত ছড়িয়ে পড়ছে। চোখ উঠা রোগে আক্রান্ত হয়ে অনেকেই চিকিৎসকের স্মরনাপন্ন হয়েছেন। প্রায় প্রতিটি ঘরেই এখন চোখ উঠা রোগী। হাসপাতাল গুলোতেও বাড়ছে চিকিৎসা নিতে আসা রোগীর সংখ্যা। যেখানে পূর্বে প্রতিদিন ৪/৫ জন রোগী পাওয়া যেতো সেখানে এখন ৫০ থেকে ৬০ জন রোগী আসছেন বলে জানান সংশ্লিষ্ট এক চিকিৎসক। স্থানীয় এক ব্যক্তি জানান, তার পুরো পরিবার চোখ উঠা রোগে আক্রান্ত। সকালে ঘুম থেকে উঠে তার মেয়ে চোখ খুলতে না পেরে কান্না করতে থাকে। তবে তারা এখন ভালো আছেন বলে জানান তিনি।

এদিকে, ফার্মেসী ব্যবসায়ীরা জানিয়েছেন, রোগের প্রকোপ বাড়তে থাকায় এই রোগের চিকিৎসায় ব্যবহত ড্রপ ক্লোরামফেনিকল এর সংকট দেখা দিয়েছে। গত ৪/৫ দিন থেকে এই অবস্থা চলছে। কোম্পানী গুলোতে বললে তারা সরবরাহ নেই বলে জানায়। 

তবে, সিলেটের সরকারি হাসপাতাল গুলোতে চোখ উঠা রোগীর জন্য ড্রপ এর কোন সংকট নেই বলে জানান সিলেটের সিভিল সার্জন ডা.এসএম শাহরিয়ার। তিনি বলেন, তাদের হাসপাতাল, কমিউনিটি ক্লিনিকসহ সব গুলো সেবা কেন্দ্রে ড্রপ রয়েছে। তিনি বলেন, রোগীটি সাধারণত ৩ থেকে ৭দিনের মধ্যে সেরে যায়। তবে ডায়াবেটিসসহ অন্য কঠিন রোগে আক্রন্তদের ক্ষেত্রে রোগীটি জটিল আকার ধারণ করতে পারে। 

কমলগঞ্জ : কমলগঞ্জ (মৌলভীবাজার) থেকে আমাদের নিজস্ব সংবাদদাতা জানান, কমলগঞ্জে বেড়েছে চোখ ওঠা রোগের প্রকোপ। হঠাৎ করে এ রোগের প্রকোপ বৃদ্ধি পাওয়ায় আক্রান্তরা চরম দুভোগে পড়েছেন। কমলগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স ও প্রাইভেট ডাক্তারের চেম্বারে প্রতিদিন চোখ ওঠা রোগীদের চিকিৎসা নিতে দেখা যায়। কমলগঞ্জে প্রায় বাড়িতেই এ রোগে আক্রান্ত রোগী রয়েছে। পরিবারের একজন এ রোগে আক্রান্ত হলেই দ্রুত অন্য সদস্যরাও আক্রান্ত হচ্ছেন বলে খবর পাওয়া গেছে। জানা যায়, কমলগঞ্জের বেশিরভাগ ঘরেই এখন চোখ ওঠা রোগী। উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের বর্হিবিভাগে বেড়েছে আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা। বিভিন্ন বয়সী আক্রান্তদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য অংশই হচ্ছে শিশু-কিশোর। রোগীর ব্যবহার্য বস্তু যেমন রুমাল, তোয়ালে, বালিশ, টিস্যু অন্যরা ব্যবহার করলে অন্যরাও এতে আক্রান্ত হয়। এছাড়া কনজাংটিভাইটিসের জন্য দায়ী ভাইরাস বাতাসের মাধ্যমেও ছড়ায়।

চিকিৎসা:

১. আক্রান্ত চোখে নোংরা পানি, ধুলাবালি, দূষিত বাতাস যেন চোখে প্রবেশ না করে, সেদিকে খেয়াল রাখুন। এছাড়া সকালে ওঠার পর চোখে পানি দিয়ে পরিষ্কার করতে হবে। অনেকে চোখে ওঠলে বারবার পানি দিয়ে পরিষ্কার করেন বা চোখে পানির ঝাপটা দেন। এটি মোটেই ঠিক নয়।

২. চোখ উঠলে বাইরে যাওয়ার সময় সানগ্লাস পরতে হবে। এটি রোদে চোখ জ্বলা কমাবে।

৩. চোখ ওঠা ছোঁয়াচে রোগ, তাই  যাদের চোখ ওঠেছে, তাদের সংস্পর্শ পরিহার করতে হবে। চোখ আক্রান্ত ব্যক্তির রুমাল, কাপড়চোপড়, তোয়ালে ব্যবহার করা যাবে না। এমনকি হ্যান্ডশেকও করবেন না। 

৪. কোনো কোনো ক্ষেত্রে ভাইরাসের আক্রমণের পর ব্যাকটেরিয়ার সংক্রমণ ঘটে। এ জন্য দিনে তিন থেকে চারবার চোখের অ্যান্টিবায়োটিক ড্রপ ক্লোরামফেনিকল ব্যবহার করতে হবে।  চোখে চুলকানি থাকলে অ্যান্টিহিস্টামিন সেবন করতে হবে। এ ক্ষেত্র অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে। এ বিষয়ে অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে। 

কখন ডাক্তারের পরামর্শ নেবেন

দৃষ্টি ঝাপসা হলে, চোখ খুব বেশি লাল হলে, খুব বেশি চুলকালে বা অতিরিক্ত ফুলে গেলে দ্রুত ডাক্তারের পরামর্শ নিতে হবে।