সিলেট বিভাগের তিন জেলায় পরিবহন ধর্মঘটের ডাক

সিলেট বিভাগের তিন জেলায় পরিবহন ধর্মঘটের ডাক

রয়েল ভিউ ডেস্ক:
সিলেটে বিএনপির বিভাগীয় সমাবেশকে ঘিরে একে একে সব রুটে ধর্মঘট আহবান করছেন বাস মালিক সমিতি। যদিও তাদের পক্ষ থেকে দাবি করা হয়েছে পূর্ব ঘোষিত কর্মসূচির অংশ হিসেবে তারা এ ধর্মঘট ডেকেছেন। 

এর মধ্যে একমাত্র সিলেটে রাজনৈতিক ধর্মীয় সংগঠন ‘আঞ্জুমানে হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশ’ এর ইজতেমার কারণে একদিন (১৯ নভেম্বর) ধর্মঘট আহবান করা হয়েছে। মৌলভীবাজার ও সুনামগঞ্জে দুই দিনের (১৮ ও ১৯ নভেম্বর) ধর্মঘট আহবান করেছে মালিক সমিতি। তবে শ্রমিক ইউনিয়ন নেতৃবৃন্দ ইজতেমার দিন কোন ধর্মঘট পালন না করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে।

সিলেট জেলা বাস মালিক সমিতির সভাপতি ও সাবেক ইউনিয়ন চেয়ারম্যান আবুল কালাম জানান, পূর্ব ঘোষিত কর্মসূচির অংশ হিসেবে তারা এ ধর্মঘট ডেকেছেন। ধর্মঘটের সাথে বিএনপির সমাবেশের কোন সম্পর্ক নেই। 

তিনি বলেন, সিএনজি অটোরিকশায় গ্রিল সংযোজন, সিলেটে রেজিস্ট্রেশনবিহীন অটোরিকশা চলাচল বন্ধ করা, নতুন করে অটোরিকশার নিবন্ধন না দেওয়ার দাবিতে এ মাসের শুরুতে বিভাগীয় কমিশনার বরাবরে স্মারকলিপি দেন তারা। কিন্তু এখন পর্যন্ত প্রশাসন থেকে তাদের কিছু জানানো হয়নি। তাই বাধ্য হয়ে তারা প্রতীকী ধর্মঘট পালনের সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। শনিবার (১৯ নভেম্বর) সকাল ৬ টা থেকে সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত তারা পরিবহন ধর্মঘট পালন করবেন। এ সময়ে প্রশাসন তাদের দাবি মেনে নিলে তারা ধর্মঘট প্রত্যাহার করবেন।

পরিবহন মালিকদের একটি সূত্র জানিয়েছে, বিএনপির সমাবেশের দুদিন আগ থেকে ধর্মঘট ডাকার জন্য মালিক ও শ্রমিক নেতৃবৃন্দের উপর চাপ ছিলো। পরিবহন মালিক ও শ্রমিকদের কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দও সিলেটের নেতাদের ঢাকায় ডেকে নিয়ে তিনদিনের ধর্মঘট ডাকার অনুরোধ করেন। তবে সিলেটের মালিক ও শ্রমিক নেতারা ধর্মঘটের পক্ষে ছিলেন না। শেষ পর্যন্ত সবপক্ষকে সন্তুষ্ট রাখতে মালিক পক্ষ কেবল সমাবেশের দিন ধর্মঘট ডেকেছে বলে জানিয়েছে এই সূত্র।

মৌলভীবাজারে ডাকা হয়েছে দুই দিনের পরিবহন ধর্মঘট। জেলা বাস—মিনিবাস মালিক সমিতির এ ধর্মঘটে আগামী ১৮ ও ১৯ নভেম্বর বন্ধ থাকবে সব ধরনের যানবাহন। বুধবার (১৬ নভেম্বর) সন্ধ্যায় এই ঘোষণা দেন মৌলভীবাজার বাস—মিনিবাস মালিক সমিতির চেয়ারম্যান রশিদ উদ্দিন আহমদ। 

তিনিও বলেন, পূর্বঘোষিত কর্মসূচীর অংশ হিসেবে এই কর্মসূচী পালিত হবে।

আজ (বৃহস্পতিবার) সকালে সুনামগঞ্জ—সিলেট রুটে সব ধরনের বাস চলাচল বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। সুনামগঞ্জ বাস মালিক সমিতির সভাপতি মোজাম্মেল হক বলেন, আমরা দীর্ঘদিন ধরে সুনামগঞ্জ সড়কে অবৈধ সিএনজি ও ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা বন্ধের দাবি জানিয়ে আসছি। ফলে সেই দাবিতে ১৮ ও ১৯ নভেম্বর সুনামগঞ্জ—সিলেট সড়কে সব ধরনের বাস চলাচল বন্ধ থাকবে।

বেগম খালেদা জিয়ার নিঃশর্ত মুক্তি, নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধি, বিএনপি নেতাকর্মীদের হত্যার প্রতিবাদ ও নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকারের দাবিতে ১৯ নভেম্বর সিলেট বিভাগে গণসমাবেশ ডেকেছে বিএনপি।

সিলেট জেলা বিএনপির সভাপতি আব্দুল কাইয়ুম চৌধুরী বলেন, বিএনপির সমাবেশ বাধাগ্রস্ত করতেই সরকার চাপ দিয়ে ধর্মঘট আহ্বান করিয়েছে। তবে কোন ষড়যন্ত্রই গণজমায়েত বাধাগ্রস্ত করতে পারবে না।

সিলেট জেলা সড়ক পরিবহন শ্রমিক ইউনিয়নের সভাপতি মো. মঈনুল ইসলাম বৃহস্পতিবার সকালে জানান, তাদের সব ইউনিয়ন মিলে পরিবহন ধর্মঘট না করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। বুধবার বিকেলে অনুষ্ঠিত সব ইউনিয়নের নেতাদের বৈঠকে এ সিদ্ধান্ত হয় বলে জানান মঈনুল। এ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, যে কোন রাজনৈতিক দলের সভা সমাবেশে বাধা বিঘ্ন সৃষ্টি করার বিপক্ষে তারা।

অপরদিকে সংশ্লিষ্ট একটি সূত্র জানিয়েছে, হবিগঞ্জে এখনো ধর্মঘটের ঘোষণা না আসলেও আজ (বৃহস্পতিবার) মালিক সমিতির নেতৃবৃন্দ ধর্মঘট আহবান করতে পারেন।

সিলেট মেট্রোপলিটন পুলিশের কমিশনার নিশারুল আরিফ বলেন, ১৯ নভেম্বরের সমাবেশকে ঘিরে সিলেটকে যেন অস্থিতিশীল পরিবেশ সৃষ্টি না হয় সে ব্যাপারে আইনশৃংখলা রক্ষাকারী বাহিনী তৎপর রয়েছে। জনগণের নিরাপত্তা নিশ্চিতকরণে পুলিশ বরাবরের মতোই পদক্ষেপ নিবে।