শামসুদ্দিন হাসপাতালের ট্রান্সফরমার নষ্ট, অকেজো ১০ এসি

শামসুদ্দিন হাসপাতালের ট্রান্সফরমার নষ্ট, অকেজো ১০ এসি

রয়েল ভিউ ডেস্ক:
শহীদ ডা. শামসুদ্দিন আহমদ (সিলেট সদর) হাসপাতাল সিলেটের একমাত্র করোনা ডেডিকেটেড চিকিৎসালয়। কোভিড মহামারি শুরুর পর হাসপাতালকে করোনা আইসোলেশন সেন্টার ঘোষণা করে এ সংক্রান্ত রোগীদের সেবায় নিবেদিত করা হয়। এরপর থেকে করোনা আক্রান্ত রোগীদের সেবার একমাত্র আশ্রয়স্থল। এতো দিন মোটামুটি ভালোভাবে চললেও গেল কয়েক মাস ধরে এ প্রতিষ্ঠানটি চরম অব্যবস্থাপনা ও অবহেলায় পড়ে আছে। হাসপাতালের নিবিড় পরিচর্যা ইউনিটের (আইসিইউ) ১৪টি এসির মধ্যে ১০টিই নষ্ট হয়ে রয়েছে প্রায় ৬ মাস ধরে। একাধিকার সংশ্লিষ্টদের বিষয়টি অবগত করা হলেও এখন পর্যন্ত বরাদ্দ মিলছে না।

বৃহস্পতিবার (১৪ জুলাই) থেকে নষ্ট রয়েছে প্রতিষ্ঠানটির বৈদ্যুতিক ট্রান্সফরমার। ফলে রোগীদের স্বাস্থ্যসেবা প্রদানে কিছুটা ব্যাহত হচ্ছে। এ বিষয়ে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর বিভাগীয় কার্যালয় থেকে বিদ্যুৎ বিভাগকে চিঠির মাধ্যমে জানানো হয়েছে।

শামসুদ্দিন হাসপাতাল সূত্র জানায়, এ হাসপাতালের নিবিড় পরিচর্যা ইউনিটের (আইসিইউ) ১৪টি এসির মধ্যে ১০টিই প্রায় ৬ মাস ধরে নষ্ট। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ স্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তর বরাবরে একাধিকার এ বিষয়ে চিঠি দিলেও নষ্ট এসিগুলো মেরামত করা কিংবা বদলানো হচ্ছে না।

শামসুদ্দিন হাসপাতালের আইসিইউ-এর বেশিরভাগ এসি নষ্ট থাকায় রোগীদের স্বাস্থ্যসেবা প্রদানে মারাত্মক বিঘ্ন ঘটছে এবং রোগীদের স্বাস্থ্যগত বেশ ক্ষতি হচ্ছে। তাছাড়া চলমান তীব্র দাবদাহে রোগীরা বেশ কষ্টে আছেন বলে জানা গেছে।

এসি নষ্ট ছাড়াও প্রতিটি ওয়ার্ডের ছাদ দিয়ে পানি পড়ে। কিন্তু ৫ মাস আগে এসব বিষয়ে স্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরকে জানানো হলেও পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে না।

শামসুদ্দিন হাসপাতালের আবাসিক চিকিৎসা কর্মকর্তা (আরএমও) মো. মিজানুর রহমান জানান, দীর্ঘদিন ধরে আমাদের হাসপাতালের ১০টি এসি নষ্ট। ১৪টির মধ্যে ১০টি এসি-ই যদি নষ্ট থাকে, তবে রোগীরা এখানে থাকবে কী করে? সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে বারবার চিঠি দিয়ে বিষয়টি জানানো হলেও ‘বরাদ্দ নেই’ বলে এ বিষয়ে কোনো পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে না।

তিনি বলেন, আইসিইউ-এর এসি শুধু ঠাণ্ডা বাতাস দেয় না, এর সঙ্গে রোগীর চিকিৎসাগত বিষয় জড়িত। অক্সিজেন সরবরাহসহ বিভিন্ন বিষয় এর অন্তর্ভুক্ত। সুতরাং একটি হাসপাতালের আইসিইউ-এর বেশিরভাগ এসি নষ্ট থাকলে রোগীদের স্বাস্থ্যসেবা মারাত্মক ব্যাহত হয়। বৃহস্পতিবার ১১ জন রোগী আছেন হাসপাতালটির আইসিইউতে। তাদের শারীরিক অবস্থা শঙ্কায়-ই বলতে হবে।

এ বিষয়ে স্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তর সিলেটের নির্বাহী প্রকৌশলী শফিকুর রহমান বলেন, আমাদের কাছে বরাদ্দ থাকে না। কোনো চাহিদা থাকলে আমরা মন্ত্রণালয়ে পাঠাই। বরাদ্দ এলে কাজ করি। শামসুদ্দিন হাসপাতালের আইসিইউ ওয়ার্ডের এসির বিষয়টিও তেমন। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ আমাদের জানানোর পর আমরা গত মার্চ মাসে মন্ত্রণালয়ে চাহিদাপত্র পাঠিয়েছি। শুধু এসির বিষয়ে নয়, হাসপাতালটির অন্যান্য কাজের জন্যও বরাদ্দ চাওয়া হয়েছে। কিন্তু এখনও বরাদ্দ আসেনি, তাই কাজও করা হচ্ছে না।

এ বিষয়ে সিলেট এমএজি ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল ডা. মাহবুবুর রহমান ভূঁইয়া বলেন, ৫ মাস আগে স্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরকে বিষয়টি জানানো হয়েছে। কিন্তু বাজেট না থাকার অজুহাতে গুরুত্বপূর্ণ এই হাসপাতালের এসিগুলো মেরামত করা হচ্ছে না।

তিনি বলেন, শুধু এসি নষ্ট এমন না- হাসপাতালটিতে অনেক সমস্যা আছে। প্রতিটি ওয়ার্ডে পানি পড়ে। একটি হাসপাতালের সবকিছু ঠিকঠাক থাকবে এটাই স্বাভাবিক। তার উপর এটি বিভাগের একমাত্র করোনা ডেডিকেটেড হাসপাতাল। হাসপাতালে কোনো সমস্যা হলে দ্রুত সমাধান করা প্রয়োজন।

এদিকে বৃহস্পতিবার (১৪ জুলাই) থেকে এ হাসপাতালের ট্রান্সফরমার নষ্ট রয়েছে। ফলে রোগীদের স্বাস্থ্যসেবা প্রদান কিছুটা ব্যাহত হচ্ছে। এ বিষয়ে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর বিভাগীয় কার্যালয় থেকে বিদ্যুৎ বিভাগকে চিঠির মাধ্যমে জানানো হয়েছে।

এ বিষয়ে হাসপাতালের আবাসিক চিকিৎসা কর্মকর্তা (আরএমও) মো. মিজানুর রহমান বলেন, বৃহস্পতিবার সকাল থেকে হাসপাতালের নির্দিষ্ট ট্রান্সফরমারটি বিকল হয়ে গেছে। পরে বিকল্প একটি সঞ্চালন লাইন ও জেনারেটর দিয়ে বিদ্যুৎ ব্যবস্থা চালু রাখা হয়েছে। তবে লোডশেডিং এত বেশি- রোগীদের কষ্ট হচ্ছে এবং স্বাস্থ্যসেবাও খানিকটা ব্যাহত হচ্ছে।

তিনি জানান, করোনা টেস্টের রিপোর্টিংয়ের জন্য নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ ব্যবস্থা থাকতে হয়। কিন্তু বৃহস্পতিবার ট্রান্সফরমার নষ্ট হওয়ায় সে কাজে ব্যাঘাত ঘটছে।

এ বিষয়ে স্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তর সিলেটের তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী সোহেল আহমদ চৌধুরী বলেন, আমরা সকালেই বিষয়টি অবগত হয়েছি। খবর পেয়ে সঙ্গে সঙ্গে কাজ শুরু হয়েছে। কিন্তু এ রিপোর্ট রাত পৌণে ১০টায় লিখা পর্যন্ত ট্রান্সফরমার বিকল রয়েছে।