হারিছ চৌধুরীর মৃত্যুর বিষয়টি নিশ্চিত হতে শেষ পর্যন্ত ডিএনএ টেস্টে সিআইডি !

হারিছ চৌধুরীর মৃত্যুর বিষয়টি নিশ্চিত হতে শেষ পর্যন্ত ডিএনএ টেস্টে সিআইডি !

রয়েল ভিউ ডেস্ক :
বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার সাবেক রাজনৈতিক উপদেষ্টা ও একুশে আগস্ট গ্রেনেড হামলা মামলার যাবজ্জীবন দণ্ডাদেশপ্রাপ্ত আসামি হারিছ চৌধুরীর মৃত্যুর বিষয়টি নিশ্চিত হতে শেষ পর্যন্ত ডিএনএ টেস্টে যাচ্ছে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ-সিআইডি। আদালতের অনুমতি নিয়ে কবর থেকে তোলা হবে সেই লাশ। তবে এরপর মরদেহ থেকে আলামত নিয়ে হারিছের আপন ভাই ও সন্তানের চুল বা কোনো আলামত নিয়ে তার ডিএনএ পরীক্ষা করা হবে। সংস্থাটি বলছে, এতে হয়তো সব সন্দেহ আর রহস্যের জট খুলবে। সিআইডির একজন উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা গতকাল গণমাধ্যমকে এ তথ্য জানান। তবে পরীক্ষা-নিরীক্ষায় প্রমাণের আগে আন্তর্জাতিক পুলিশ সংস্থা ইন্টারপোলে হারিছের নামে যে রেড ওয়ারেন্ট ঝুলছে তা সরছে না।

বাংলাদেশ পুলিশের হয়ে ইন্টারপোলের সঙ্গে সার্বিক বিষয়ে কার্যক্রম সমন্বয় করে পুলিশ সদর দপ্তরের ন্যাশনাল সেন্ট্রাল ব্যুরো (এনসিবি)। এনসিবির সহকারী মহাপরিদর্শক (এআইজি) মহিউল ইসলাম  বলেন, সিআইডির আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে হারিছ চৌধুরীর নামে রেড নোটিশ জারি করা হয়। তার মারা যাওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত হতে সিআইডিকে চিঠি দিয়েছিলাম আমরা। সপ্তাহ তিনেক আগে এর জবাবও আমাদের কাছে এসেছে। তবে সিআইডি যে জবাব দিয়েছে তাতে হারিছের মৃত্যুর বিষয়টি অস্পষ্ট। তাই আমরা সিআইডিকে দ্বিতীয় দফায় চিঠি দিয়ে বলেছি, প্রশ্নের উত্তর স্পষ্টভাবে জানাতে। মারা যাওয়ার বিষয়টি তারা শতভাগ নিশ্চিত না করলে রেড নোটিশ তোলা যাবে না।

সিআইডির অতিরিক্ত ডিআইজি ইমাম হোসেন বলেন, হারিছ চৌধুরীর মৃত্যুর বিষয়টি নিশ্চিত হতে আদালতের অনুমতি নিয়ে কবর থেকে লাশ তোলা হবে। ডিএনএ টেস্টে সব রহস্যের জট খুলবে।

সাম্প্রতিক সময়ে গণমাধ্যমে এসেছে হারিছ চৌধুরী তার নাম-পরিচয় গোপন করে মাহমুদুর রহমান সেজেছেন। ওই পরিচয়ে জাতীয় পরিচয়পত্রও তৈরি করেন। ইন্টারপোলের রেড নোটিশধারী হারিছ সব গোয়েন্দার চোখে ধুলা দিয়ে প্রায় ১১ বছর ঢাকায় অবস্থায় করছিলেন। ঢাকার এভারকেয়ার হাসপাতালেই গত ৩ সেপ্টেম্বর তার মৃত্যু হয়। এসব খবরে মাহমুদুর রহমান পরিচয়ে হারিছকে ঢাকার সাভারের বিরুলিয়া ইউনিয়নের জালালাবাদের কমলাপুর এলাকায় জামিয়া খাতামুন্নাবিয়ীন মাদ্রাসার কবরস্থানে ৪ সেপ্টেম্বর দাফন করা হয় বলেও দাবি করা হয়। গণমাধ্যমে এমন তথ্য প্রকাশের পর গতকাল পর্যন্ত পুলিশ নিশ্চিত হতে পারেনি মাহমুদুর রহমানই হারিছ চৌধুরী। তবে পরিচয় নিশ্চিত হতে শুরু হয়েছে নানামুখী তদন্ত। শিগগির কমলাপুর এলাকার ওই কবরস্থান থেকে তোলা হবে মাহমুদুর রহমান পরিচয়ে দাফন করা সেই মরদেহ। এ ছাড়া কীভাবে আরেকজনের তথ্য ব্যবহার করে হারিছ চৌধুরী নিজের পরিচয় গোপন করে এনআইডি তৈরি করলেন তা নিয়ে তদন্ত শুরু হয়েছে। গত বছরের শেষ দিকে কয়েকটি সংবাদমাধ্যমে হারিছের মৃত্যুর খবর আসে। কোথাও বলা হচ্ছিল হারিছ করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে ঢাকায় মারা গেছেন। কোথাও বলা হয়, হারিছ মারা গেছেন লন্ডনে।

ইন্টারপোলের ওয়েবসাইটে গতকাল বিকেলেও ভিজিট করে দেখা যায়, হারিছের জন্ম ১৯৫২ সালের ১ নভেম্বর। জন্মস্থান সিলেটের কানাইঘাটের দর্পণ নগরে। সিআইডির একজন উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা বলেন, প্রথম এনসিবির যে চিঠির জবাব তারা দিয়েছেন তখন তাদের কাছে পর্যাপ্ত তথ্য ছিল না। এখন বিষয়টি নিশ্চিত হতে তারা ডিএনএ টেস্ট করাবেন। এরপর এনসিবিকে জানাবেন।

২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা মামলাটি তদন্ত করেছিল সিআইডি। ওই সংস্থার আবেদনের পর হারিছ চৌধুরীসহ ওই মামলার পলাতক কয়েক আসামির বিরুদ্ধে রেড নোটিশ জারির আবেদন করা হয় ইন্টারপোলে। সংস্থাটি যাচাই-বাছাই শেষে ছবিসহ রেড নোটিশ তাদের ওয়েবসাইটে দেয়।

যে ঠিকানা ব্যবহার করে মাহমুদুর রহমান অ্যাপোলো সেজে হারিছ চৌধুরীর মৃত্যু সনদ নেওয়া হয়েছে সেটি হলো রাজধানীর উত্তরার ৪ নম্বর সেক্টরের ১৩ নম্বর একটি বাসা। তবে বাসার এবি-২ নম্বর ফ্ল্যাটের মালিকের নাম মাহমুদুর রহমান। তিনি পেশায় মেরিন ইঞ্জিনিয়ার। পৈতৃকভাবে তিনি ফ্ল্যাট পান। এখনও মাহমুদুর রহমান জীবিত আছেন।
 
আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর একজন কর্মকর্তা জানান, মাহমুদুর রহমান নামে হারিছ চৌধুরী পাসপোর্ট ও এনআইডি তৈরি করে বছরের পর বছর ঢাকায় আত্মগোপন করে থাকার খবরটি বিস্ময়কর। পাসপোর্টের তথ্য এসবি তদন্ত করে থাকে।

কিছুদিন আগে হারিছ চৌধুরীর মৃত্যু নিয়ে তার চাচাতো ভাই আশিক চৌধুরী ফেসবুক স্ট্যাটাসে ইঙ্গিত দিলেও সরাসরি কিছু বলেননি। পরে তিনি সাংবাদিকদের জানান, হারিছ চৌধুরী লন্ডনে মারা গেছেন। এরই মধ্যে হারিছ চৌধুরীর মেয়ে সামীরা তানজীন চৌধুরী (মুন্নু) জানান, তার বাবা গত ৩ সেপ্টেম্বরে ঢাকার একটি হাসপাতালে মারা যান। হারিছ চৌধুরীর মৃত্যু, দাফন ও ঢাকায় আত্মগোপনে থাকাসহ নানা তথ্য তুলে ধরেন তিনি।

২০০৪ সালের ২১ আগস্ট রাজধানীর বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউতে আওয়ামী লীগের সমাবেশে ভয়াবহ গ্রেনেড হামলায় ২৪ জন নিহত হন। এতে তৎকালীন বিরোধীদলীয় নেতা ও বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ বহু নেতাকর্মী আহত হন। ওই হামলার ঘটনায় ২০১৮ সালের ১০ অক্টোবর আদালত ১৯ জনকে মৃত্যুদণ্ড ও ১৯ জনকে যাবজ্জীবন এবং ১১ জনকে বিভিন্ন মেয়াদে দ দেন। দণ্ড পাওয়া এ আসামিদের মধ্যে হারিছ চৌধুরীসহ ১৮ জন ঘটনার পর থেকে বিভিন্ন সময়ে আত্মগোপনে চলে যায়।