৫ বছর ধরে বন্ধ সুনামগঞ্জ ধোপাজান চলতি বালু মহাল

৫ বছর ধরে বন্ধ সুনামগঞ্জ ধোপাজান চলতি বালু মহাল

শহীদ নূর আহমেদ, সুনামগঞ্জ থেকে: আদালতের নিষেধাজ্ঞায় ৫ বছর ধরে বন্ধ রয়েছে সিলেট অঞ্চলের সর্ববৃহৎ সায়রাত মহাল বা পাথরমিশ্রিত বালু মহাল ধোপাজান চলতি নদী। এতে একদিকে সরকার হারাচ্ছে বিপুল পরিমাণ রাজস্ব; অন্যদিকে বালু উত্তোলনের সাথে জড়িত বিপুল সংখ্যক শ্রমিক বেকার অবস্থায় মানবেতর জীবনযাপন করছে।

স্থানীয়দের সাথে কথা বলে জানা গেছে, সুনামগঞ্জ সদর ও বিশ্বম্ভরপুর উপজেলার ভারত-বাংলাদেশ সীমান্তে উৎপত্তি ধোপাজান চলতি নদীর। উজান থেকে প্রতি বছরে ঢলের সাথে বিপুল পরিমাণ বালু পাথর ভারতের উজান থেকে বাংলাদেশ সীমান্তে ভেসে আসে। আর এই খনিজ উত্তোলন করে থাকে সদর ও বিশ্বম্ভরপুর উপজেলার নদী তীরবর্তী গ্রাম ইব্রাহীমপুর, সদরগড়, আমিরপুর, কুরুতলা, অক্ষয়নগর, সৈয়দপুর, মুসলিমপুর, বালাকান্দা, হুড়ারকান্দা, সাহেবনগর, কাইয়ারগাঁও, পূর্ব ডলুরা, ভাদেরটেক, জিনারপুর, আদাং, মথুরকান্দি, পশ্চিম ডলুরা গ্রামসহ অন্তত ৪০ গ্রামের মানুষ।

২০১৯ সালে ধোপাজান চলতি নদীর কোয়ারিতে বালু পাথরের পরিমাণ কমে যাওয়ায় ও নদীর পার কাটার শঙ্কা থেকে স্থানীয় প্রশাসনের সুপারিশে বন্ধ করা হয় এর ইজারা। দীর্ঘ ৫ বছর নদীতে বালুপাথর উত্তোলন বন্ধ রয়েছে। ২০২০ ও ২০২২ সালের পর পর বন্যায় পাহাড়ি ঢলে নদীতে বালু পাথরের পরিমাণ বেড়েছে। কিন্তু, ইজারা দেবার কোন লক্ষণ নেই।

স্থানীয় একাধিক শ্রমিক জানান, দীর্ঘ ২০ বছরের অধিক সময় ধরে নদীতে বালু পাথর উত্তোলন করে জীবিকা সংগ্রহ করে আসছিলেন তারা। নৌকা, বাল্কহেড বা কার্গো লোড আন লোডে কাজ করতেন এলাকার হাজারো শ্রমিক। প্রত্যক্ষ পরোক্ষা ভাবে এই নদীর উপর নির্ভর করে দুই উপজেলার লক্ষাধিক মানুষ। দীর্ঘদিন ধরে নদীর ইজারা বন্ধ থাকায় বেকার হয়ে পড়েছেন তারা। পরিবারের সদস্যদের দৈনন্দিন খরচ যোগান দেওয়া সম্ভব হচ্ছে না তাদের। অর্থনৈতিক সংকট ও দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতির বাজারে পরিবারের ভরণপোষণ নিয়ে বেকায়দায় পড়েছেন তারা।

সদর উপজেলার সুরমা কাইয়ার গাঁয়ের বালু শ্রমিক সাইফুল ইসলাম বলেন, ৫ বছর ধরে আদালতের নিষেধাজ্ঞার কারণে আমরা প্রকাশ্যে নদী থেকে বালু তুলতে পারছি না। এতে পরিবার পরিজন নিয়ে বড় বিপাকে আছি। এলাকার অনেক শ্রমিক বেকার রয়েছেন।

জাহাঙ্গীরনগর ইউনিয়নের ডলুরা গ্রামের দেলোয়ার বলেন, নদী বন্ধ থেকে সরকারের কি লাভ হচ্ছে। সরকার তো রাজস্ব হারাচ্ছে আর মানুষ কর্মহীন রয়েছে। কেউ কেউ আড়ালে আবডালে বালু পাথর তুললেও তা বিক্রি করতে পারছে না। আমাদের দাবি, নদীটি সরকারিভাবে খুলে দেয়া হোক। এতে এলাকার মানুষ শান্তিতে থাকবো।

এ ব্যাপারে অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) বিজন কুমার সিংহ বলেন, ধোপাজান চলতি নদী খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয়ের অধীন। বিগত বন্যায় বালু পাথর আসায় আমরা তাদের অনুরোধ করেছি ইজারা দেয়ার জন্য। খনিজ বিভাগের লোকেরা এলাকা পরিদর্শন করেছেন। এ নিয়ে কোনো অগ্রগতি আমাদের কাছে নেই।

জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ রাশেদ ইকবাল চৌধুরী বলেন, ধোপাজান চলতি নদীটি এবারও ইজারার বাইরে রয়েছে। তবে খনিজ মন্ত্রণালয় অনুমতি দিলে নদীতে আবারও বালু পাথর উত্তোলনের ইজারা দেয়া হবে।