‘৯৯৯’-এ ফোন: ওসমানীনগরে বন্ধ কক্ষ থেকে পাঁচ যুক্তরাজ্য প্রবাসী অচেতন অবস্থায় উদ্ধার, বাবা-ছেলের মৃত্যু

‘৯৯৯’-এ ফোন: ওসমানীনগরে বন্ধ কক্ষ থেকে পাঁচ যুক্তরাজ্য প্রবাসী অচেতন অবস্থায় উদ্ধার, বাবা-ছেলের মৃত্যু

রয়েল ভিউ ডেস্ক॥ ওসমানীনগরে জাতীয় জরুরি সেবা নম্বর ‘৯৯৯’ এ ফোন পেয়ে বন্ধ একটি কক্ষের দরজা ভেঙে যুক্তরাজ্য প্রবাসী একই পরিবারের পাঁচজনকে উদ্ধার করেছে থানা পুলিশ। অচেতন অবস্থায় হাসপাতালে নেওয়ার পর বাবা-ছেলেকে মৃত ঘোষণা করে কর্তব্যরত চিকিৎসক। ওই প্রবাসীর স্ত্রী, এক ছেলে ও এক মেয়ে বর্তমানে ওসমানী হাসপাতালে চিকিৎসাধীন আছে। 

নিহতরা হলেন-যুক্তরাজ্য প্রবাসী রফিকুল ইসলাম (৫০) ও তাঁর ছেলে মাইকুল ইসলাম (১৮)। রফিকুল ইসলাম ওসমানীনগর উপজেলার দয়ামীর ইউনিয়নের ধিরারাই (খাতিপুর) গ্রামের মৃত আবদুল জব্বারের ছেলে । তবে তিনি বেশ আগে থেকে যুক্তরাজ্যের নগরিকত্ব লাভ করেছেন। আশঙ্কাজনক অবস্থায় রফিকুল ইসলামের স্ত্রী হুছনে আরা বেগম (৪০), ছেলে সাদিকুল ইসলাম (২১) এবং মেয়ে সামিরা ইসলামকে (২০) কে সিলেট ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। গতকাল মঙ্গলবার দুপুরে তাজপুর স্কুল রোডস্থ ভাড়া বাসা থেকে তাদেরকে উদ্ধার করে ওসমানীনগর থানা পুলিশ। বিষক্রিয়ার কারণে ঘটনাটি ঘটতে পারে বলে জানিয়েছেন সিলেটের পুলিশ সুপার (পদোন্নতিপ্রাপ্ত অতিরিক্ত ডিআইজি) ফরিদ উদ্দিন পিপিএম।
পারিবারিক সূত্র জানায়, দীর্ঘদিন ধরে সপরিবারে যুক্তরাজ্যে বসবাস করে আসছেন ধিরারাই গ্রামের রফিকুল ইসলাম। অসুস্থ ছেলে সাদিকুল ইসলামকে চিকিৎসা দেয়ার জন্য গত ১২ জুলাই সপরিবারে দেশে ফিরে এক সপ্তাহ ঢাকায় থাকেন। চিকিৎসা শেষে গত ১৮ জুলাই উপজেলার তাজপুর স্কুল রোড এলাকার একটি ভবনের দ্বিতীয় তলায় বাসা ভাড়া নেন। সোমবার রাতের খাবার শেষে প্রবাসী রফিক ইসলাম ও তার স্ত্রী সন্তানসহ একটি কক্ষে এবং রফিকুল ইসলামের শ্বশুর আনফর আলী, শাশুড়ি বদরুন্নেছা, শ্যালক দেলোয়ার হোসেন, শ্যালকের স্ত্রী শোভা বেগম ও মেয়ে সাবিলা বেগম (৮) অন্যান্য কক্ষে ঘুমিয়ে পড়েন। মঙ্গলবার সকালে বাসার সুস্থ স্বজনরা ডাকাডাকি করে প্রবাসী রফিকুল ইসলামসহ তার স্ত্রী-সন্তানদের কোন সাড়া পাননি। এ অবস্থায় তারা ৯৯৯ নম্বরে কল করেন। খবর পেয়ে দুপুর ১২টার দিকে ওসমানীনগর থানা পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌঁছে কক্ষের দরজা ভেঙ্গে ৫ জনকে অচেতন অবস্থায় উদ্ধার করে সিলেট ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে প্রেরণ করে। হাসপাতালে আনার পর রফিকুল ইসলাম ও মাইকুল ইসলামকে চিকিৎসক মৃত ঘোষণা (ব্রড ডেড) করেন বলে জানিয়েছেন ওসমানী হাসপাতাল পুলিশ তদন্ত কেন্দ্রের ইনচার্জ জনি চৌধুরী। বাকি তিনজনকে ওসমানি হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। এর মধ্যে মা ও মেয়েকে হাসপাতালের আইসিইউতে এবং ছেলেকে ওয়ার্ডে ভর্তি করা হয়। 
এ ঘটনায় নিহত রফিক মিয়ার শ্বশুর আনফর আলী, শাশুড়ী বদরুন্নেছা,শ্যালক দেলোয়ার হোসেন ও তার স্ত্রী শোভা বেগমকে প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদ করেছে পুলিশ। তারা পুলিশ হেফাজতেই রয়েছেন।  

ঘটনার খবর পেয়ে তাৎক্ষণিক ঘটনাস্থল পরিদর্শনে আসেন সিলেটের পুলিশ সুপার (পদোন্নতিপ্রাপ্ত অতিরিক্ত ডিআইজি) ফরিদ উদ্দিন পিপিএম, ওসমানীনগর সার্কেলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মো. রফিকুল ইসলাম, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা নীলিমা রায়হানা। এছাড়া পিবিআই ও সিআইডির দুটি দল ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছে।
সরেজমিন গিয়ে দেখা যায়, যে বাসা থেকে অচেতন অবস্থায় তাদেরকে উদ্ধার করা হয়েছে সেই বাসায় ৩টি শয়ন কক্ষ, ১টি রান্নাঘর, ১টি খাবার কক্ষ রয়েছে। যে কক্ষে প্রবাসী পরিবারের ৫জন ঘুমিয়ে ছিলেন কক্ষটির আসববাপত্র এলোমেলো অবস্থায় রয়েছে।
প্রবাসী হুছনে আরা বেগমের চাচাতো ভাই গোলাম হোসেন বলেন, খবর পেয়ে আমরা এসেছি। কে বা কারা কিভাবে ঘটনাটি ঘটিয়েছে তা জানি না। আমার বোনের পরিবারের সাথে কারো শত্রুতা নেই।
নিহত রফিকুল ইসলামের ভায়রা ভাই সাজ্জাদ আহমদ জানান, ভায়রা রফিকুল ইসলামের বড় ছেলে সাদিকুল ইসলাম অসুস্থ থাকায় তাকে চিকিৎসা দিতে গত ১২ জুলাই দেশে আসেন তারা। ঢাকা থেকে ফেরার পর শশুড়-শাশুড়িসহ অন্যদের নিয়ে ভাড়া বাসায় উঠেছিলেন। তাদের অচেতন অবস্থায় উদ্ধারের খবর পেয়ে এসেছেন বলে জানান।
সিলেটের পুলিশ সুপার ফরিদ উদ্দিন পিপিএম বলেন, বিষক্রিয়ার কারণে ঘটনাটি ঘটেছে বলে চিকিৎসকরা জানিয়েছেন। কিভাবে বিষক্রিয়া হয়েছে- তা তদন্তের আগে বলা সম্ভব নয়। যে সকল নিকট আত্মীয় বাসায় ছিলেন তাদের জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে। ঘটনার রহস্য উদঘাটনের জন্য পুলিশ তদন্ত অব্যাহত রেখেছে।
ওসমানীনগর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) এস এম মাঈন উদ্দিন বলেন, জাতীয় জরুরি সেবা নম্বর ৯৯৯ এর মাধ্যমে খবর পেয়ে আমরা ঘটনাস্থলে গিয়ে দরজা ভেঙে পাঁচজনকে উদ্ধার করি। পরে হাসপাতালে নেওয়ার পর বাবা-ছেলেকে মৃত ঘোষণা করা হয়েছে। বাকি তিনজনের মধ্যে দুজনকে সিলেট এম এ জি ওসমানী মেডিকেলে কলেজ হাসপাতালের নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে।
সিলেট এমএজি ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মাহবুবুর রহমান ভূঁইয়া সাংবাদিকদের বলেন, মারা যাওয়া দুইজনের লাশ হাসপাতাল মর্গে রাখা হয়েছে। ওসমানী মেডিকেল কলেজের উপাধ্যক্ষ ও মেডিসিন বিভাগের প্রধান প্রফেসর শিশির রঞ্জন চক্রবর্তীকে প্রধান করে একটি মেডিকেল বোর্ড গঠন করা হয়েছে। ওই বোর্ডের অধীনেই অসুস্থদের চিকিৎসা চলছে।
এ প্রতিবেদকের সাথে আলাপকালে ওসমানী মেডিকেল কলেজের উপাধ্যক্ষ ও মেডিকেল বোর্ডের প্রধান শিশির রঞ্জন চক্রবর্তী জানান, ‘আন নোউন’ ফুড পয়জনিংয়ের কারণে তাদের মৃত্যু হতে পারে বলে তারা ধারণা করছেন। তবে, ময়নাতদন্তের পর তাদের মৃত্যুর প্রকৃত কারণ জানা যাবে। এছাড়া, আহতদের স্যাম্পলও ঢাকায় প্রেরণ করা হবে। তিনি বলেন, হাসপাতালে চিকিৎসাধীন মেয়ে ও মায়ের অবস্থা খারাপ। তবে, রাতে কিছু না খাওয়ায় চিকিৎসাধীন থাকা ছেলেটি সুস্থ আছে বলে জানান তিনি।সূত্র: - দৈনিক সিলেটের ডাক