জানুয়ারিতে প্রকল্প অনুমোদন না পেলে ইভিএমে ভোট সম্ভব নয়: ইসি

জানুয়ারিতে প্রকল্প অনুমোদন না পেলে ইভিএমে ভোট সম্ভব নয়: ইসি

রয়েল ভিউ ডেস্ক:
২০২৩ সালের ১৫ জানুয়ারির মধ্যে ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিন (ইভিএম) কেনার প্রকল্প অনুমোদন না পেলে দেড় শ আসনে ইভিএমে ভোট গ্রহণ সম্ভব হবে না বলে জানিয়েছেন নির্বাচন কমিশনার (ইসি) মো. আলমগীর। তিনি বলেছেন, মধ্য জানুয়ারির মধ্যে সাপ্লাই অর্ডার দিতে হবে। জানুয়ারির মধ্যে যদি নাই পাই তাহলে সেগুলো দেশে আনা, কোয়ালিটি কন্ট্রোল করা, প্রশিক্ষণ দিতে ফিল্ডে পাঠানো আর সম্ভব হয়ে উঠবে না।’ আজ বুধবার রাজধানীর আগারগাঁওয়ে নির্বাচন ভবনে নিজ দপ্তরে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে এক প্রশ্নের জবাবে এসব জানান।

নির্বাচন কমিশনার মো. আলমগীর জানিয়েছেন, তবে বর্তমানে দেশে যে পরিমাণ ইভিএম মজুত আছে তা দিয়ে ৭০ থেকে ৭৫টি আসনে ভোট সম্ভব। এই প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘সেগুলো দ্বাদশ ভোটে ব্যবহার করা হবে।’ 

এর আগে, গত ১৯ অক্টোবর ‘নির্বাচনী ব্যবস্থায় ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিনের ব্যবহার বৃদ্ধি এবং টেকসই ব্যবস্থাপনা’—শীর্ষক প্রকল্প প্রস্তাব পরিকল্পনা কমিশনে পাঠায় ইসি। দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে দেড় শ আসনে ইভিএমে ভোট করার লক্ষ্যে প্রায় দুই লাখ ইভিএম কেনা ও রক্ষণাবেক্ষণসহ আনুষঙ্গিক ব্যয়ের লক্ষ্যে এ প্রকল্পটি নেওয়া হয়।

এদিকে ৭ হাজার ৮০০ কোটি টাকার প্রস্তাবিত ইভিএম প্রকল্পটিতে বেশ কিছু পর্যবেক্ষণ দিয়েছে পরিকল্পনা কমিশন। এ বিষয়ে জানতে চাইলে মো. আলমগীর বলেন, ‘পরিকল্পনা কমিশন কী ধরনের অবজারভেশন দিয়েছে সেটা বলতে পারবে এটার প্রকল্প পরিচালক। অবজারভেশনগুলো দেখার পর আমরা বসব। কমিশন বসে সিদ্ধান্ত নিবে। যদি ভালো পরামর্শ আসে তাহলে অবশ্যই আমরা বিবেচনায় নিব।’

বাজেট কমানোর বিষয়ে ইসি কাজ করবে কি না জানতে চাইলে মো. আলমগীর বলেন, ‘নির্বাচন কমিশন থেকে যে ইচ্ছা ছিল সেটা হলো—সর্বোচ্চ দেড় শ আসনে ইভিএমে ভোট করা। বর্তমানে যে ইভিএম আছে সেটা দিয়ে ৭০ থেকে ৭৫টি আসনে ভোট করা সম্ভব।’

সর্বোচ্চ দেড় শ আসনে ইভিএম ব্যবহার করার জন্য প্রজেক্ট পাঠানো হয়েছিল জানিয়ে তিনি বলেন, ‘প্রজেক্ট আসলে অর্থনৈতিক সক্ষমতার ওপর নির্ভর করে। পরিকল্পনা কমিশন বা অর্থ মন্ত্রণালয় কতটুকু টাকা দিতে তার ওপরে নির্ভর করে।’ সারা বিশ্বে অর্থনৈতিক সংকট আছে জানিয়ে তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশ তো তার বাইরে না। ইভিএমের যে ব্যয় তার অধিকাংশই ফরেন কারেন্সিতে করতে হবে। বিদেশ থেকে আমদানি করতে হবে। রিজার্ভের একটা সমস্যা থাকতে পারে। অর্থনৈতিক সমস্যা থাকতে পারে। সে হিসেবে প্ল্যানিং কমিশন যদি বলে তারা কতটুকু পারবে কি পারবে না। তা দেখে আমরা সিদ্ধান্ত নিতে পারব আমাদের কি করা উচিত।’

প্রকল্পটি শুধু ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিন কেনা নয় জানিয়ে তিনি বলেন, ‘ওখানে কম্পোনেন্ট আরও ছিল। আগের যে দেড় লাখ ইভিএম ছিল সেগুলোর গোডাউন করা হয় নাই। ইভিএমগুলো স্বল্প সময়ে বিভিন্ন জায়গায় রাখা হয়েছে। আসলে তো সেগুলো ভালো থাকবে না। সেগুলো সংরক্ষণের জন্য গোডাউন তৈরি করা, গাড়ি কেনা এ ধরনের নানা কম্পোনেন্ট ছিল। ইভিএমের প্রশিক্ষণের জন্য খরচ আছে। যাই করা হোক না কেন সেটা যাতে অর্থের অপচয় না হয়, সম্পদের অপচয় না হয় সেগুলো বিবেচনায় নিয়েই সিদ্ধান্ত নিব।’ 

ইভিএমের বিষয়ে যখন আলোচনা করা হয়েছে তখন দেশের পরিস্থিতি এমন ছিল না দাবি করে কমিশনার মো. আলমগীর বলেন, ‘ইউক্রেনের যুদ্ধ হওয়ার কারণে শেষের দিকে দেশের যে আর্থিক সমস্যাগুলো দেখতে পাচ্ছি এগুলো সাম্প্রতিককালের; একেবারে দুই-এক মাসের ব্যাপার। আমরা এটা পাঠানোর পরই বুঝতে পেরেছি যে কিছুটা অর্থনৈতিক সংকট আছে দেশে। অর্থনৈতিক সক্ষমতা কতটুকু আছে সেটা বলতে পারেন অর্থ মন্ত্রণালয়, পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়। সেটা আমরা বলতে পারব না। আমরা আমদের চাহিদার কথা বলেছি। তাঁরা কতটুকু দিতে পারবে সেটা তাঁদের ব্যাপার।’ 

বাজেট কমাতে হলে কি করবেন—এমন প্রশ্নের জবাবে এই নির্বাচন কমিশনার বলেন, ‘সামঞ্জস্য করতে হবে। দেড় লাখ ইভিএম আছে সেটাকে রাখার ব্যবস্থাকে আমাদের গুরুত্ব দিতে হবে। সেটাকে ভালোভাবে রাখতে পারি। এরপরে যদি দেখা যায় আরও কিছু ইভিএম কেনা সম্ভব সেটা কিনব। যদি না হয় তাহলে কেনা হবে না।’ পূর্বের ইভিএমগুলো জাতীয় নির্বাচনে ব্যবহার করা হবে কি না জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘এগুলো রোডম্যাপে আগেই বলে দিয়েছি, এটা ব্যবহার করা হবে।’

ইনভেস্টমেন্ট প্রকল্পে ফিজিবিলিটি স্টাডি করতে হয় উল্লেখ করে নির্বাচন কমিশনার আরও বলেন, ‘এটা ইনভেস্টমেন্ট প্রোগ্রাম না। ইভিএমের ক্ষেত্রে ফিজিবিলিটি স্টাডির তেমন কিছু নেই, ন্যাচারটাই ভিন্ন। দেড় লাখ ইভিএম যে কেনা হয়েছে সেগুলো আমরা এখন পুরোদমে ব্যবহার করছি বিভিন্ন নির্বাচনে। এখানে সেটিই বলা হয়েছে, এ ক্ষেত্রে ফিজিবিলিটি স্টাডির প্রয়োজন নাই। যুক্তি দিয়ে দেখানো হয়েছে সেটা। বাজেট কমে গেলে ১৫০ আসনে হবে না, কমে যাবে।’ 

সিঙ্গেল সোর্স হলে ইভিএমের বাজারদর যাচাই করার সুযোগ নাই উল্লেখ করে মো. আলমগীর বলেন, ‘যে জিনিসের একটাই মাত্র সোর্স সে জিনিসের বাজারদর যাচাই করার সুযোগ নাই। ইভিএমের সোর্স বাংলাদেশ মেশিন টুলস ফ্যাক্টরি (বিএমটিএফ)। ডলারের রেট ফ্লাকচুয়েট হওয়ায় দাম বেড়েছে।’