মেজরটিলা এলাকা থেকে ৩টি অজগর উদ্ধার

মেজরটিলা এলাকা থেকে ৩টি অজগর উদ্ধার

রয়েল ভিউ ডেস্ক :

সিলেট নগরের পাশে মেজরটিলা এলাকার একটি বাড়ি থেকে এক সপ্তাহের ব্যবধানে ৩টি অজগর সাপ উদ্ধার করা হয়েছে।

সাম্প্রতিক সময়ে সিলেটের বিভিন্ন বাসা বাড়িতে ঢুকে পড়ছে অজগর। এনিয়ে আতঙ্কের মধ্যে মেজরটিলার একটি বাড়িতেই সপ্তাহের ব্যবধানে ৩টি অজগর সাপ ঢুকে পড়ে। সবশেষ শুক্রবার সকালে মেজরটিলার সৈয়দপুর এলাকার ওই বাড়ি থেকে আরেকটি অজগর সাপ উদ্ধার করা হয়।

এদিকে, বৃহস্পতিবার রাত থেকে শুক্রবার সকাল পর্যন্ত মেজরটিলা, আলুরতল ও বালুচর এলাকার ৩টি বাড়ি থেকে ৩ টি অজগর সাপ উদ্ধার করেছে বন বিভাগের কর্মীরা।

তিনটি বাড়িরই অবস্থান টিলাগড় ইকোপার্কের পাশে। আশপাশে রয়েছে অনেকগুলাে টিলা ও বন। বারবার সাপ ঘুরে ঢুকে পড়া নিয়ে বনের পাশের বাড়িগুলোর বাসিন্দাদের মধ্যে আতঙ্ক দেখা দিলেও বন বিভাগের কর্মীরা বলছেন, আতঙ্কের কিছু নেই। নীরিহ প্রজাতির অজগর সাধারণত মানুষের কোনো ক্ষতি করে না। খাবারের সন্ধানেই অজগর বন ছেড়ে লোকালয়ে আসছে বলেও জানিয়েছেন তারা।

সবশেষ শুক্রবার সকালে মেজরটিলা এলাকার রাবেয়া বেগমের বাড়ি থেকে একটি অজগর সাপ উদ্ধার করা হয়। এরআগে গত ১ ও ২ অক্টোবর একই বাড়ি থেকে আরও দুটি অজগর উদ্ধার করা হয়। আগের দুটি রাবেয়া বেগমের ঘর থেকে উদ্ধার করা হলেও শুক্রবার সকালের সাপটি রাবেয়ার দেবরের মুরগির খামার থেকে উদ্ধার হয়।

রাবেয়া বেগম বলেন, সকালে মুরগির খামারে সাপ দেখতে পেয়ে আমার জা আমাকে ডেকে আনেন। ঘনঘন ঘরে সাপ প্রবেশ করায় আমরা এতে অভ্যস্ত হয়ে পড়েছি। ফলে আতঙ্কিত না হয়ে আমরা বন বিভাগের কর্মী ও পরিবেশ কর্মীদের খবর দেই। তারা এসে সাপটি উদ্ধার করে নিয়ে যান।

রাবেয়া বেগম বলেন, গত ৬ মাস আমার বাড়িতে ৫টি অজগর সাপ ঢুকে পড়ে। এরমধ্যে একসপ্তাহের ব্যবধানে ৩টি সাপ ঢুকে যায়। প্রথম দুটি সাপ স্থানীয়রা মেরে ফেলেন বলে জানান রাবেয়া।

রায়েবা বেগমের বাড়িতে আবারও অজগর সাপ পাওয়া যাওয়ার খবরে শুক্রবার সকালে ওই বাড়িতে ছুটে যান পরিবেশবাদী সংগঠন ভূমিসন্তান বাংলাদেশের সমন্বয়ক আশরাফুল কবির। বন বিভাগের কর্মীদের নিয়ে সাপটি উদ্ধার করে এনে দুপুরে তারা পাশ্ববর্তী টিলাগড় ইকোপার্কে অবমুক্ত করেন।

আশরাফুল বলেন, এরআগে বৃহস্পতিবার রাতে আলুরতল ও বালুচর এলাকার দুটি বাড়ি থেকে আরও দুটি সাপ উদ্ধার করা হয়েছে। রাতে ও সকালে উদ্ধার করা ৩টি সাপ আজ দুপুরে আমরা একসাথে অবমুক্ত করেছি।

শুক্রবার সাপ উদ্ধার ও অবমুক্তে অংশ নেওয়া বনবিভাগের বনরক্ষী মাসুদ করিম বলেন, বনে খাবার সঙ্কটের কারণেই সাপগুলো লোকালয়ে এসে বাসাবাড়িতে ঢুকে পড়ছে। যে সব বাড়িতে হাঁস-মুরগি আছে গন্ধ শুকে অজগর সেসব বাড়িতে ঢুকে পড়ে। বে হাঁস-মুরগি খাওয়া ছাড়া অজগর মানুষের আর কোনো ক্ষতি করে না।

বন বিভাগের সিলেট বিভাগীয় কর্মকর্তা (ডিএফও) এসএম সাজ্জাদ হোসেন সিলেটকে অজগরের ‘হটস্পট’ উল্লেখ করে বলেন, সিলেট অঞ্চলে প্রচুর অজগর সাপ রয়েছে। বিশেষত এখানকার চা বাগানগুলো অজগরের নিরাপদ আশ্রয়।

ঈদানীং অজগরের লোকালয়ে চলে আসার প্রবণতা বেড়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, এখন প্রায় সপ্তাহেই দু’একজন ফোন করে অজগর পাওয়া যাওয়ার কথা জানায়। পরে আমরা উদ্ধার করে নিয়ে আসি।

বাড়িঘরে অজগরের ঢুকে পড়া প্রসঙ্গে তিনি বলেন, আগে চা বাগানগুলোর ভেতরে অনেক বনমোরগ ও কাঠবিড়ালি পাওয়া যেতো। এগুলো ছিলো অজগরের প্রিয় খাদ্য। কিন্তু এসব এখন কমে গেছে। ফলে অজগর খাদ্য সঙ্কটে পড়েছে। ফলে বন ও চা বাগানের আশপাশের বাড়িতে, যেগুলোতে হাঁসমুরগি আছে, সেসব বাড়িতে অনেক সময় অজগর ঢুকে পড়ে।

অনেক অজগর বনের বাইরে এসে বাচ্চা প্রসব করে জনিয়ে তিনি বলেন, সম্প্রতি লোকালয় থেকে আমরা বেশকিছু বাচ্চা অজগর উদ্ধার করেছি। এতে বুঝা যায় মা অজগর আশপাশে কোথাও এসে প্রসব করেছে।

তবে অজগর বাড়িতে ঢুকে পড়লেও আতঙ্কিত হওয়ার কিছু নেই জানিয়ে তিনি বলেন, অজগর খুবই নীরিহ ও বিষহীন সাপ। নিজে আক্রান্ত না হলে সে কাউকে কামড় দেয় না। আবার কামড় দিলেও বিষক্রিয়া হওয়ার শঙ্কা নেই। কেবল ঘরের হাঁস-মুরগি লুকিয়ে রাখতে পারলে এই সাপ নিয়ে ভয়ের কিছু নেই।

তাই অজগর ঘরে প্রবেশ করলেও হত্যা না করে বনবিভাগকে খবর দেওয়ার আহ্বান জানান তিনি।