কুমারগাঁও-বাদাঘাট-এয়ারপোর্ট  সড়ক চার লেনে উন্নীত হচ্ছে, প্রকল্প ব্যয় ৭২৭ কোটি টাকা

কুমারগাঁও-বাদাঘাট-এয়ারপোর্ট  সড়ক চার লেনে উন্নীত হচ্ছে, প্রকল্প ব্যয় ৭২৭ কোটি টাকা

স্টাফ রিপোর্টার ॥ সিলেটের বহুল প্রতীক্ষিত ‘কুমারগাঁও-বাদাঘাট-এয়ারপোর্ট সড়ক ৪ লেনে উন্নীতকরণ’ প্রকল্প অবশেষে জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদ-এর নির্বাহী কমিটি (একনেক)-এ অনুমোদিত হয়েছে। গতকাল মঙ্গলবার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত একনেক সভায় প্রকল্পটি অনুমোদন লাভ করে। প্রকল্পটি বাস্তবায়নে মোট ব্যয় ধরা হয়েছে ৭২৭ কোটি ৬৩ লাখ ২০ হাজার টাকা। ২০২৪ সালের জুনের মধ্যে প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হবে। এই প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হলে দীর্ঘদিন থেকে স্থবির থাকা এয়ারপোর্ট বাদাঘাট বাইপাস সচল হবে। অন্যদিকে, সিলেটের ভোলাগঞ্জ হতে চলাচলকারী ট্রাক ও অন্যান্য ভারি যানবাহনের জন্য বিকল্প সড়ক হবে এটি। সিলেট নগরীকে যানজটমুক্ত রাখাই এই প্রকল্পের মূল লক্ষ্য বলে জানিয়েছেন প্রকল্প সংশ্লিষ্টরা। 

সিলেট নগরীর মধ্য দিয়ে এয়ারপোর্ট-আম্বরখানা-কুমারগাঁও বাইপাস দিয়ে প্রতিদিন এক থেকে দেড় হাজার ভারি ট্রাক যাতায়াত করে। এ অবস্থায় নগরী দিয়ে ট্রাক চলাচলের চাপ কমাতে কুমারগাঁও-বাদাঘাট-এয়ারপোর্ট সড়ক নির্মাণের উদ্যোগ নেয়া হয়। প্রায় সাড়ে ১২ কিলোমিটার দীর্ঘ কুমারগাঁও-বাদাঘাট-এয়ারপোর্ট সড়কটি নির্মাণ করা হয় ২০১২-১৪ অর্থবছরে। তৎকালীন অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিতের অগ্রাধিকার প্রকল্পের একটি ছিল এই প্রকল্প। তবে, সড়কটির কাজ হলেও কখনো পরিবহন চলেনি এই সড়ক দিয়ে। পরবর্তীতে পাথরবাহী ট্রাক চলাচল, বিমানবন্দর অভিমুখীদের সুবিধা এবং পর্যটকবাহী যান চলাচলের জন্য সড়কটি চার লেনে উন্নীত করার দাবি ওঠে সিলেটে। এ প্রেক্ষিতে ২০১৬ সালে একটি প্রকল্প প্রস্তাবনা তৈরি করা হয়। পরের বছর চার লেন সড়কের সাথে দুটি সার্ভিস লেন যুক্ত করে তৈরি করা হয় সংশোধিত প্রস্তাবনা। ২০১৯ সালের দিকে শুধুমাত্র চার লেনের প্রস্তাবনা জমা পড়ে মন্ত্রণালয়ে। কিন্তু, কাজের কাজ আর কিছুই হচ্ছিল না। আওয়ামী লীগ চলতি মেয়াদে সরকার গঠনের পর সিলেট-১ আসনের সংসদ সদস্য বর্তমান পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেন কুমারগাঁও-বাদাঘাট-এয়ারপোর্ট সড়ক সম্প্রসারণ প্রকল্পে গতি আনেন।
সিলেট-সুনামগঞ্জ সড়কের ছয় কিলোমিটার কুমারগাঁওয়ে শুরু হয়েছে এবং বাদাঘাট  হয়ে এয়ারপোর্টের নিকটে ওসমানী বিমানবন্দর সড়কের সঙ্গে মিলিত হয়েছে। বাদাঘাট লিংক রোডসহ সড়কটির মোট দৈর্ঘ্য ১২ দশমিক ৭৮০ কিলোমিটার এবং বিদ্যমান প্রস্থ পাঁচ দশমিক ৫০ মিটার। সড়কটির শেষ প্রান্ত থেকে ৮শ’ মিটার দূরে সিলেট সড়ক শুরু হয়েছে। এ সড়ক সিলেটের ভোলাগঞ্জ ও বিছনাকান্দিসহ বিভিন্ন পাথর কোয়ারির সঙ্গে যোগাযোগের প্রধান মাধ্যম। ভোলাগঞ্জ হতে পাথর বহনকারী ট্রাকগুলো সিলেট শহরের মধ্য দিয়ে যাতায়াত করে। তবে নগরীর কেন্দ্রস্থল আম্বরখানা ইন্টারসেকশনে দীর্ঘ যানজটের কবলে পড়ে সময় ও আর্থিক ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছে। সড়কটি ৪ লেনে উন্নীত হলে পাথরবোঝাই ট্রাকগুলো আম্বরখানার দীর্ঘ যানজট এড়িয়ে বাদাঘাট, কুমারগাঁও দিয়ে জাতীয় মহাসড়কে পৌঁছাবে। এতে সিলেট শহরের যানজট ও সড়ক দুর্ঘটনা কমে আসবে।

সরেজমিনে ঘুরে দেখা গেছে, বিমানবন্দর-বাদাঘাট সড়কটিতে বাইশটিলা ছোট ব্রিজের পর থেকেই ভাঙন শুরু। ব্রিজ থেকে নামার পরপরই সড়কে পিচ ঢালাইয়ের দেখা মিলে না। আর সড়কটি দেখেও বোঝা যায় না, এটি আগে কখনও পিচ ঢালাই ছিল। কারণ সড়কের কোথাও ঢালাইয়ের চিহ্নও নেই। এরপর বাদাঘাট বাজার পর্যন্ত সড়কের মাঝেমধ্যে ঢালাইয়ের দেখা মিললেও তা শুধু মানুষের কষ্টই বাড়ায়। সড়কটির বেশিরভাগ অংশই মানুষের চলাচলের অনুপযোগী। সেই সড়কটিতে নতুন প্রকল্পযুক্ত হয়ে ৪ লেনে উন্নীত হওয়ায় উচ্ছ্বসিত এলাকাবাসী। 
স্থানীয় নীলগাঁওয়ের বাসিন্দা শাহীন আহমদ জানান, দীর্ঘ প্রতীক্ষিত এবং বিগত জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের অন্যতম অঙ্গীকারের এই প্রকল্পটি একনেকে অনুমোদিত হওয়ায় তারা উৎফুল্ল। তিনি এজন্য প্রধানমন্ত্রী ও পররাষ্ট্রমন্ত্রীসহ সবার প্রতি কৃতজ্ঞতাও প্রকাশ করেছেন।