করোনার পজিটিভ রিপোর্ট নিয়ে বিপাকে সিলেটের বিদেশগামীরা

করোনার পজিটিভ রিপোর্ট নিয়ে বিপাকে সিলেটের বিদেশগামীরা

আনাস হাবিব কলিন্স
ফ্লাইট ছাড়ার ৭২ ঘণ্টা আগে করোনা পজিটিভ রিপোর্ট নিয়ে বিপাকে সিলেটের অনেক বিদেশযাত্রী। কোন উপসর্গ নেই, তবুও টেস্টে আসছে করোনা পজেটিভ রিপোর্ট। প্রতিদিন ফ্লাইট বাতিল হচ্ছে ইউরোপ-আমেরিকাসহ মধ্যপ্রাচ্যের অনেক বিদেশগামীর। ফলে, যাত্রীরা আর্থিক ও মানসিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন। 


জানা গেছে, সিলেট বিভাগের চার জেলার বিদেশগামীদের জন্য বর্তমানে দুইটি ল্যাবে আরটিপিসিআর পরীক্ষা করা হয়। সরকারিভাবে সিলেট এমএমজি ওসমানী মেডিকেল কলেজে ও বেসরকারিভাবে নগরীর উপশহরস্থ সীমান্তিক প্যাথলজি এন্ড ডায়াগনস্টিক সেন্টার এই পরীক্ষা করা হচ্ছে। ওসমানী হাসপাতালে রিপোর্ট আসতে দেরী হওয়ায় ভিড় বাড়ছে বেসরকারি ল্যাবে।
গত ২১ জানুয়ারি থেকে ২৬ জানুয়ারি পর্যন্ত টানা ৬ দিনে ওসমানী মেডিকেল কলেজ ল্যাবে করোনা পরীক্ষার নমুনা দিয়েছেন ১৭৫ জন। গড়ে প্রতিদিন ২৫ জন বিদেশগামী এখানে করোনা টেস্ট করছেন। এই ল্যাবে গত ৬ দিনে পজিটিভ সংখ্যা ৩৫% এর কম নয়। 
অপরদিকে, নগরীর উপশহর পয়েন্ট সংলগ্ন সীমান্তিক ল্যাবে গত ৬ দিনে ২ হাজার ৭৯৭ জন বিদেশগামী করোনা টেস্ট করিয়েছেন। এরমধ্যে পজেটিভ বিদেশযাত্রীর সংখ্যা ৭০৪ জন। এই ল্যাবে প্রায় ২৬ শতাংশ বিদেশগামীর রিপোর্ট পজিটিভ এসেছে। যাদের রিপোর্ট পজিটিভ এসেছে তাদেরকে ফ্লাইট বাতিল করে কিংবা পিছানোর কথা জানিয়ে এক সপ্তাহ থেকে ১৪ দিন পর আবার পরীক্ষার কথা বলা হয়েছে।
এ ব্যাপারে সিলেট বিভাগীয় পরিচালক (স্বাস্থ্য) ডা. হিমাংশু লাল রায় বলেন, সিলেটের সরকারি-বেসরকারি পিসিআর ল্যাব থেকে নির্ভুল রিপোর্ট দেয়া হচ্ছে। বিদেশগামীদের করোনা পজিটিভ রিপোর্ট প্রমাণ করছে করোনার নতুন ধরণ ওমিক্রণ একবারে কমিউনিটি পর্যায়ে চলে গেছে। করোনা পজিটিভ রিপোর্ট নিয়ে বিদেশগামীদের হতাশ হওয়ার কিছু নেই বলে মন্তব্য করেন। ৭ থেকে ১৪ দিন পর আবার টেস্ট করালে রিপোর্ট নেগেটিভ আসতে পারে। এক্ষেত্রে সবাইকে ভ্যাকসিন গ্রহণ ও স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার পরামর্শ দেন তিনি। সেই সাথে এমএমজি ওসমানী মেডিকেল কলেজের পিসিআর ল্যাবের গতিশীলতা বাড়ানোর উদ্যোগ নেয়া হয়েছে বলে জানান তিনি।  
ওসমানী মেডিকেল কলেজে শুক্রবারের রিপোর্টে ৯ জন বিদেশগামীর মধ্যে ৪ জনের পজিটিভ এসেছে। ওই হিসেবে প্রায় ৪৫ শতাংশ বিদেশ যাত্রীর রিপোর্ট পজিটিভ আসছে। যদিও প্রতিদিন পজিটিভ রিপোর্ট সমানভাবে আসে না। সংখ্যায় কমবেশী থাকে। মেডিকেল কলেজের একটি সূত্র জানিয়েছে, ৬ দিনে করোনা পজিটিভ বিদেশগামীর সংখ্যা প্রায় ৫০ জনের মতো।
এদিকে সীমান্তিক ল্যাবে গত ৬ দিনে ২ হাজার ৭৯৭ জন বিদেশগামী করোনা টেস্ট করিয়েছেন। এরমধ্যে পজিটিভ বিদেশযাত্রীর সংখ্যা ৭০৪ জন। এই ল্যাবে প্রায় ২৬ শতাংশ বিদেশগামীর রিপোর্ট পজেটিভ এসেছে। এর মধ্যে ২১ জানুয়ারি ৩৫৩ জন করোনা টেস্ট করালে পজেটিভ হয় ৭৪ জন, ২২ জানুয়ারি ৪৩১ জনের মধ্যে ৯৭ জন, ২৩ জানুয়ারি ৪৩১ জনের মধ্যে ১২০, ২৪ জানুয়ারি ৩৯০ জনের মধ্যে ১০১, ২৫ জানুয়ারি ৫০৬ জনের মধ্যে ১৪০ ও ২৬ জানুয়ারি ৬৮৬ জনের মধ্যে ১৭২ জন বিদেশগামীর করোনা রিপোর্ট পজিটিভ এসেছে। যাদের রিপোর্ট পজিটিভ এসেছে তাদেরকে ফ্লাইট বাতিল করে কিংবা পিছানোর কথা জানিয়ে এক সপ্তাহ থেকে ১৪ দিন পর আবার পরীক্ষার কথা বলা হয়েছে।
স্বাস্থ্য অধিদফতরের নির্দেশনা মতে, কোনো বিদেশগামী যাত্রী করোনা আক্রান্ত হলে পরবর্তী ৭ দিনের মধ্যে তিনি বিদেশ যেতে পারবেন না। ২০২১ সালের জারি করা নির্দেশনায় আরো বলা হয়, ৭ দিন পর শুধু সরকারি ব্যবস্থাপনায় পরিচালিত ল্যাবে পুনরায় যাত্রী করোনা পরীক্ষা করবেন এবং তখন নেগেটিভ রিপোর্ট এলে দেশত্যাগ করতে পারবেন।
এ প্রসঙ্গে সিলেট সিটি কর্পোরেশনের প্রধান স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডা. জাহিদুল ইসলাম সুমন বলেন, ওমিক্রনের অন্যতম একটি প্রভাব হলো কোন উপসর্গ না থাকা। বিদেশগামীর শরীরে রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা বেশি থাকায় হয়তো কোন উপসর্গ দেখা যাচ্ছে না। পিসিআরের রিপোর্ট নিয়ে সন্দেহের কোন অবকাশ নেই বলে মন্তব্য করেন তিনি। বিদেশগামীদের প্রতি ধৈর্য্য ধরে নেগেটিভ রিপোর্ট পাওয়ার পর গন্তব্যে পৌঁছার পরামর্শ দেন। 
সীমান্তিকের উপ-পরিচালক পারভেজ আহমদ জানান, ওমিক্রনের ভেরিয়েন্ট আসার পর তাদের পিসিআর ল্যাবে গড়ে ২৫-২৬ শতাংশ বিদেশগামীর রিপোর্ট পজেটিভ আসছে। ডেল্টা ভ্যারিয়েন্টের সময়ও তাদের ল্যাবে ৬ থেকে ১২ ভাগ পজিটিভ এসেছিল বলে জানান তিনি। নির্ভুলভাবে সীমান্তিকের পিসিআর থেকে রিপোর্ট দেয়া হচ্ছে বলে দাবি করেন তিনি।