ঘুমের মধ্যে অতিরিক্ত ঘাম ক্যানসারের লক্ষণ?

ঘুমের মধ্যে অতিরিক্ত ঘাম ক্যানসারের লক্ষণ?

রয়েল ভিউ ডেস্ক :
শীত তো চলেই গেল! বসন্তের এ সময় রাতের তাপমাত্রাও বাড়তে শুরু করেছে। এখন আর লেপ-কম্বলের প্রয়োজন হচ্ছে না কারো!

শেষ রাতের দিকে হালকা ঠান্ডা হয়ত পড়ছে। তবে শীত হোক বা গরম, অনেকেই রাতে হঠাৎ করেই প্রচণ্ড ঘেমে ওঠেন। কেউ কেউ ভাবেন দুঃস্বপ্ন দেখে বোধ হয় জেগে উঠেছেন। আবার কেউ ভাবেন অতিরিক্ত গরমে ঘামছেন।

তবে রাতে ঘুমের মধ্যে অতিরিক্ত ঘামা স্বাস্থ্যঝুঁকির ইঙ্গিত দেয়। শারীরিক বিভিন্ন সমস্যার কারণে এমনটি ঘটতে পারে। এমনটি হতে পারে ক্যানসারের লক্ষণ।

১. অতিরিক্ত ঘাম হওয়া ও গরম অনুভূতি হাইপারথাইরয়েডিজমের উল্লেখযোগ্য লক্ষণ। থাইরয়েড গ্রন্থি বিপাক নিয়ন্ত্রণ করে, তাই যখন এটি অত্যাধিক হরমোন তৈরি করে তখন আপনার শরীর ওভারড্রাইভে চলে যায়। ফলে শরীরের তাপমাত্রা বেড়ে যায় ও আপনি ক্ষুধার্ত বা তৃষ্ণার্ত বোধ করতে পারেন। একই সঙ্গে হার্টবিট বেড়ে যাওয়া, হাত কাঁপা ও ক্লান্তিবোধ করতে পারেন। হাইপারথাইরয়েডিজমের কারণে ওজন কমে যায়।

২. ডায়াবেটিস রোগীরাও রাতে ঘুমের মধ্যে ঘেমে উঠতে পারেন, রক্তের গ্লুকোজ ঠিক না থাকলে। যদি আপনি ডায়াবেটিসের চিকিৎসায় সালফোনিলুরিয়া জাতীয় ওষুধ খান, তাহলে এটি আপনার রাতারাতি হাইপোগ্লাইসেমিয়ার জন্য দায়ী হতে পারে। তাই ঘুমানোর আগে যদি গ্লুকোজের মাত্রা ১৪০ এমজি/ডিএল-এর কম হয় বা কয়েক ঘণ্টার মধ্যে কমে গেলে তখনই খাবার খেয়ে নিন।

৩. গ্যাস্ট্রিকের কারণেও ঘুমের মধ্যে শরীর ঘামতে পারে। যদিও এ বিষয়ে তেমন কোনো গবেষণা নেই, তবে চিকিৎসকরা বলছেন এর সঙ্গে সম্ভাব্য সংযোগ আছে। তাই ঘুমানোর অন্তত ২ ঘণ্টা আগেই ডিনার সম্পন্ন করুন। আর ভাজাপোড়া খাবার পরিহার করুন।

৪. বিভিন্ন ক্যানসারের কারণেও রাতে ঘাম হতে পারে। তবে সবচেয়ে সাধারণ হলো লিম্ফোমা। যা শরীরের রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থার কিছু অংশে শুরু হয়, যেমন- লিম্ফ নোড, প্লীহা, অস্থিমজ্জা ও থাইমাস। হজকিনের লিম্ফোমায় আক্রান্ত প্রায় এক-চতুর্থাংশ রোগীর রাতে ঘাম হয়।

৫. যক্ষ্মায় যারা ভোগেন তাদের প্রায় অর্ধেকেরই রাতে ঘাম হয়। এক্ষেত্রে ব্যাকটেরিয়া ফুসফুসে বাসা বাঁধে। যক্ষ্মা গুরুতর পর্যায়ে গেলে কাশির সঙ্গে রক্ত ও রঙিন কফ বের হতে পারে। এছাড়া আপনি জ্বর, ক্লান্তি ও দুর্বলতা বোধ করবেন। যক্ষ্মার রোগীরা ক্ষুধামন্দায় ভোগেন।

৬. প্রোস্টেট ক্যানসার, কিডনি ক্যানসার, ডিম্বাশয় ও অণ্ডকোষের কিছু টিউমারের কারণে রাতে ঘাম হতে পারে। রাতের ঘাম কার্সিনয়েড সিন্ড্রোমের একটি ক্লাসিক উপসর্গ। এটি একটি বিরল ক্যানসারের প্রভাব। যা সাধারণত আপনার পাচনতন্ত্র বা ফুসফুসে পাওয়া যায়।

৭. বিভিন্ন সংক্রমণের কারণেও রাতে ঘাম হতে পারে। করোনার ওমিক্রনে আক্রান্ত ব্যক্তিরাও রাতে প্রচণ্ড ঘেমে ওঠার উপসর্গ টের পেয়েছেন। কিছু সংক্রমণ যেমন- ব্যাকটেরিয়াল এন্ডোকার্ডাইটিস (আপনার হার্ট ও হার্টের ভালভের ভেতরের আস্তরণের সংক্রমণ) ও অস্টিওমাইলাইটিস (হাড়ের সংক্রমণ)-এর কারণে এমনটি হতে পারে।

আরও কিছু বিরল সংক্রমণ আছে, যা রাতে ঘামের কারণ হতে পারে। হঠাৎ করে যদি প্রায়ই রাতে ঘুমের মধ্যে প্রচণ্ড ঘেমে ওঠেন, তাহলে বিষয়টিকে সাধারণভাবে নেবেন না। দ্রুত চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়ে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করাতে হবে।