গোলাপগঞ্জ পৌর কাউন্সিলরের বিরুদ্ধে জোরপূর্বক রাস্তা দখলচেষ্টার অভিযোগ

গোলাপগঞ্জ পৌর কাউন্সিলরের বিরুদ্ধে জোরপূর্বক রাস্তা দখলচেষ্টার অভিযোগ

রয়েল ভিউ ডেস্ক: গোলাপগঞ্জ পৌরসভার কাউন্সিলর জহির উদ্দিন সেলিম বাড়ির এজমাালি রাস্তা জোরপূর্বক দখলে নেওয়ার চেষ্টা ও অবৈধভাবে ড্রেন নির্মাণের অভিযোগ ওঠেছে। পৌরসভার ১ নম্বর ওয়ার্ডের বড় মোকাম মসজিদ এলাকার পুলিশ কর্মকর্তা মরহুম হাজী অব্দুল মতিনের মেয়ে শামীমা আক্তার এ অভিযোগ করেছেন।
সম্প্রতি সিলেট প্রেসক্লাবে সংবাদ সম্মেলনে তিনি এসব অভিযোগ করেন। লিখিত বক্তব্যে তিনি বলেন, ‘ভাই-বোন সবাই প্রবাসে থাকায় বাড়ির সম্পত্তি আমি দেখাশোনা করি। বাড়িতে প্রাচীনকাল থেকে সবার ব্যবহারের জন্য ১০ ফুটের এজমালি রাস্তা এবং এর বাঁকে বাঁকে কোথাও ১২ ফুট রাস্তা রয়েছে। এটি আমাদের বাপ-চাচাদের পারিবারিক বাটোয়ারানামার মাধ্যমে রেজিস্ট্রিকৃত। এভাবেই দীর্ঘদিন ধরে বাড়ির এই রাস্তা সবাই মিলে শান্তিপূর্ণভাবে ব্যবহার হলেও শান্তিপূর্ণ এই পারিবারিক সহাবস্থান নষ্ট করতে হঠাৎ করেই আমার চাচাতো ভাই গোলাপগঞ্জ পৌরসভার ১ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর জহির উদ্দিন সেলিম ২০১৫ সাল থেকে বিভিন্নভাবে এই এজমালি রাস্তা তার একক দখলে নেওয়ার পাঁয়তারা শুরু করেন।’
তিনি আরও বলেন, ‘আনুমানিক দেড় বছর আগে বাড়ির বড় এই এজমালি রাস্তা কেটে রাস্তার মাঝখানে ড্রেন নির্মাণ করে রাস্তার দু’দিক অনেকটা উঁচু করেন কাউন্সিলর সেলিম। যাতে বৃষ্টির পানি আমাদের ঘরে প্রবেশ করে ঘরটি নষ্ট হয়। ইতোমধ্যে তিনি তার নিজের ঘর উঁচু করে নতুনভাবে নির্মাণ করেছেন। বাড়ির ঐতিহ্যের দিকে তাকিয়ে বিরোধ বা ঝগড়ায় না জড়ানোর চেষ্টা করি। কিন্তু রাস্তার মাঝখানের ড্রেনের মধ্যে ইটের গাঁথুনি দিয়ে পানি নিষ্কাশনের পথ বন্ধ করে দেন তিনি।’
শামীমা আক্তার বলেন, ‘এ বিষয়ে বিস্তারিত জেনে আমেরিকা প্রবাসী ছোট ভাই আবু বকর সিদ্দিক বাবু আমেরিকায় বসবাসরত সেলিমের আব্বাসহ পাঁচ চাচাকে সমাধানের জন্য অনুরোধ করেন। বারবার এ বিষয় নিয়ে চাচাদের সাথে আলোচনা করলেও চাচারা আমাদেরকে এ বিষয়ে কোনো সহযোগিতা করেননি।’
তিনি অভিযোগ করেন, ‘আমার আমেরিকা প্রবাসী চাচা পুলিশের অবসরপ্রাপ্ত দারোগা আতিব আলী কাউন্সিলর জহির উদ্দিন সেলিমের এই ষড়যন্ত্রমূলক কাজে প্রকাশ্যে সহযোগিতা করে যাচ্ছেন। চাচা আতিব আলীর বাড়ি মূল বাড়ির বাইরে মেইন রোড সংলগ্ন এলাকায় হওয়ায় তাকে ভোগান্তিতে পড়তে হচ্ছে না। তিনি আমার আপন চাচা হয়েও ছোট ভাই ও আমাকে কোনো সহযোগিতা না করে কাউন্সিলর সেলিমকে অন্যায্যভাবে সহযোগিতা করে যাচ্ছেন। এ ধরনের একটি বাড়ি পানিতে ভেসে গেলেও তাদের কিছু যায় আসে না বলেও মন্তব্য করেছেন চাচা।’
তিনি উল্লেখ করেন, গত ১৩ সেপ্টেম্বর এই রাস্তা নিয়ে আবারও অনাকাঙ্খিত ঘটনার সূত্রপাত করেন কাউন্সিলর সেলিম। এজমালি রাস্তাটি বন্ধ করে দিতে মাটি ভরাট করে উঁচু করে ড্রেন নির্মাণ কাজ শুরু করেন। ঘটনাস্থলে গিয়ে রাস্তায় মাটি ভরাট করে ড্রেনের দেয়াল নির্মাণ করতে দেখে বাধা দিলে সেলিম ভাই ও তার লোকজন আমাকে অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করেন। তার কাজে কোনো বাধা দিলে আমাকে খুন করে ফেলবেন বলেও হুমকি দিয়েছেন।
ঘটনাটি গোলাপগঞ্জ থানা ও পৌরসভার মেয়র মো. আমিনুল ইসলাম রাবেলকে জানিয়েছেন বলে জানান শামীমা। তিনি বলেন, ‘পরদিন পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে কাজ সাময়িক বন্ধ রাখলেও ওইদিন রাতের আঁধারে আবার তারা ড্রেন নির্মাণ কাজ শুরু করেন। পর আবারও কাজ বন্ধ রাখার কথা পুলিশ চলে গেলে তিনি কাজ চালিয়ে যান। ইতোমধ্যে পুলিশ লিখিত নোটিস দিয়ে বিরোধীয় রাস্তায় যাবতীয় কার্যক্রম বন্ধ রাখার নির্দেশ দিয়েছে।’
এদিকে গোলাপগঞ্জ পৌরসভার মেয়র মো. আমিনুল ইসলাম রাবেলের পক্ষে দু’জন কাউন্সিলরসহ কয়েকজন ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন। মেয়র উভয়পক্ষকে নিয়ে বসে বিষয়টি সমাধানের জন্য আমাদের বললে আমরা তাতে সম্মতি দেই। পরবর্তীতে তিনি সময় দিয়েও আমাদের সাথে আর বসতে পারেননি। এ ব্যাপারে তার কোনো উদ্যোগ আর লক্ষ্য করা যায়নি।
উল্টো কাউন্সিলর সেলিম তাদেরকে নানাভাবে হয়রানি করছেন অভিযোগ করে শামীমা বলেন, ‘গত শুক্রবার রাতে হঠাৎ করে গোলাপগঞ্জ থানার একজন পুলিশ অফিসার আমার স্বামী সিলেটের বিশিষ্ট ব্যবসায়ী আব্দুল হাসিবকে ফোন দিয়ে জানান তার নামে কাউন্সিলর সেলিম থানায় অভিযোগ দায়ের করেছেন। তিনি নাকি গভীর রাতে দলবল নিয়ে তার বাড়িতে হামলা করে ভাঙচুর করেছেন। জনপ্রতিনিধির প্রভাব খাটিয়ে তিনি আমাদেরকে নানাভাবে হয়রানি করছেন।’
আবহমান কাল থেকে পরিবারের সবার ব্যবহৃত এই এজমালি রাস্তাটি এককভাবে দখলে নিতে কাউন্সিলর সেলিম নানামুখী পাঁয়তারা চালিয়ে যাচ্ছেন অভিযোগ করে শামীমা আক্তার পারিবারিক এই ঐতিহ্যের প্রতীক রাস্তাটি রক্ষা এবং সেলিমের হয়রানি থেকে পরিত্রাণ পেতে প্রশাসনসহ সংশ্লিষ্ট সবার সহযোগিতা কামনা করেন।