জকিগঞ্জে পাউবো’র গাফলতিতে  শতাধিক গ্রাম প্লাবিত

জকিগঞ্জে পাউবো’র গাফলতিতে  শতাধিক গ্রাম প্লাবিত

জকিগঞ্জ (সিলেট) থেকে নিজস্ব সংবাদদাতা : অবিরাম বর্ষণ ও ভারতের উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলে জকিগঞ্জের সুরমা নদীর ডাইক উপচে ও ভাঙা বেড়িবাঁধ দিয়ে লোকালয়ে পানি প্রবেশ করে কমপক্ষে শতাধিক গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। গত রোববার সন্ধ্যা ৬টায় আমলশীদ সুরমা-কুশিয়ারা নদীর পয়েন্টে বিপৎসীমার ১৭৫ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে পানি প্রবাহিত হচ্ছে। বন্যার পানিতে তলিয়ে গেছে জকিগঞ্জ-সিলেট সড়ক। বন্যা পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণে উপজেলায় খোলা হয়েছে একটি কন্ট্রোল রুম ও ৩৪টি আশ্রয়কেন্দ্র। ইতোমধ্যে বন্যার্ত মানুষের জন্য ৩০ টন চাল ও দেড় লক্ষ টাকা বরাদ্দ দিয়েছে জেলা প্রশাসন।

এক মাসের ব্যবধানে জকিগঞ্জে আবারও বন্যা সৃষ্টি হওয়ার পেছনে পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) গাফলতিকে দায়ী করছেন সাধারণ মানুষ। গত উপজেলা দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা কমিটির সভায় জনপ্রতিনিধি ও রাজনীতিবীদগণের তোপের মুখে পড়েন পাউবো কর্মকর্তাগণ। পাউবো কর্মকর্তাদের গাফলতির কারণে একমাসের ব্যবধানে বন্যা পরিস্থিতি সৃষ্টি হওয়ায় পাউবো কর্মকর্তাদের উদ্দেশ্য করে উত্তপ্ত বাক্য বিনিময় করেছেন জনপ্রতিনিধিগণ।

বিভিন্ন এলাকার লোকজনের সাথে কথা বলে জানা গেছে, বারহাল ইউপির সুরমা নদীর কয়েকটি স্থানের ডাইকের উপর দিয়ে পানি লোকালয়ে এসে বাড়িঘরে প্রবেশ করছে। আটগ্রামের বড়বন্দ এলাকার ভাঙা ডাইক দিয়েও পানি প্রবেশ করছে। বিরশ্রী ইউপির সুপ্রাকন্দী গ্রামে দুটি ভাঙন, গড়রগ্রামে একটি ভাঙন, পূর্ব জামডহর গ্রামে একটি নতুন ভাঙন সৃষ্টি হয়েছে। জকিগঞ্জ ইউপির রারাই গ্রামের পুরাতন ভাঙন বড় হয়েছে। লালোগ্রামে কুতুব উদ্দিনের বাড়ির পাশে ডাইকের অবস্থা নাজুক। সুলতানপুর ইউপির ভক্তিপুর গ্রামে ভাঙন সৃষ্টি হয়েছে। বারঠাকুরী ইউপির পিল্লাকান্দী গ্রামে ভাঙন দেখা দিয়েছে। আমলশীদ ত্রিমোহনার পুরাতন ভাঙন দিয়েও পানি লোকালয়ে ঢুকার আশঙ্কা আছে। কসকনকপুর ইউপির হাজীগঞ্জ এলাকায় ভাঙন দেখা দিয়েছে। মানিকপুর ইউপিতে ভাঙন রয়েছে। জকিগঞ্জ পৌর এলাকার কেছরী ও মাইজকান্দী এলাকার ডাইক খুবই ঝুঁকিপূর্ণ। তাছাড়াও উপজেলার বিভিন্ন এলাকার ডাইকের উপর দিয়ে পানি লোকালয়ে আসার খবর পাওয়া গেছে। পানি উন্নয়ন বোর্ডের তথ্যনুযায়ী পুরো জকিগঞ্জ উপজেলায় প্রায় ৩৮টি স্থানের ডাইক দিয়ে পানি লোকালয়ে আসছে।
জকিগঞ্জ সদর ইউপি চেয়ারম্যান মাওলানা আফতাব আহমদ জানিয়েছেন, রারাই গ্রামের ভাঙা ডাইক মেরামতে পাউবো বিলম্ব করায় তিনি নিজের ফান্ড থেকে অনেক টাকা খরচ করে ডাইক মেরামতের চেষ্টা করেছেন। এরপরও বন্যা প্রতিরোধ সম্ভব হয়নি। বারহাল ইউপি চেয়ারম্যান মোস্তাক আহমদ চৌধুরী জানান, সুরমা নদীর নূরনগর, উত্তর খিলগ্রাম, বারাকুলি, পুটিজুড়ি, নোয়াগ্রাম, নিজগ্রাম, কচুয়া এলাকার ডাইকের উপর দিয়ে পানি ঢুকছে। বারঠাকুরী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মহসিন মর্তুজা চৌধুরী টিপু পানি উন্নয়ন বোর্ডের গাফিলতির কথা উল্লেখ করে জানান, গত মাসের বন্যায় ডাইকের যে স্থানগুলোতে ভাঙন হয়েছিলো তা পাউবো দ্রুত না করায় আবারও বন্যা পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে। ভাঙা বেড়িবাঁধ দিয়ে পানি ঢুকছে। 
পানি উন্নয়ন বোর্ডের এসডিই নিলয় পাশা গত বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত ডাইক মাটির অভাবে দ্রুত মেরামত করা যায়নি দাবি করে বলেন, আমরা মেরামতের চেষ্টা করেছিলাম। কিন্তু ডাইকের পাশে মাটি পাইনি। এরপরও মেরামত শুরু করেছিলাম। এখন পর্যন্ত উপজেলার প্রায় ৩৮টি স্থান দিয়ে পানি ঢুকছে বলে নিশ্চিত করেন তিনি।