জগন্নাথপুরে অপ্রকৃতিস্থ নারীকে নিয়ে  বেকায়দায় দু’বিদ্যালয়ের শিক্ষক-শিক্ষার্থী

জগন্নাথপুরে অপ্রকৃতিস্থ নারীকে নিয়ে  বেকায়দায় দু’বিদ্যালয়ের শিক্ষক-শিক্ষার্থী

জগন্নাথপুর (সুনামগঞ্জ) থেকে নিজস্ব সংবাদদাতা : সুনামগঞ্জের জগন্নাথপুর উপজেলায় অপ্রকৃতিস্থ নারীকে নিয়ে বেকায়দায় পড়েছেন দুটি বিদ্যালয়ের শিক্ষক-শিক্ষার্থীবৃন্দ। দীর্ঘদিন খোঁজাখুঁজির পর ওই নারীর পরিবারের সন্ধান পাওয়া গেলেও দারিদ্র্যতার কারণে তাকে নিতে আসছে না পরিবারের কেউ। অবশেষে মানবিক কারণে নারীর চিকিৎসার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। 

জানা গেছে, জগন্নাথপুর উপজেলার রানীগঞ্জ ইউনিয়নের রানীগঞ্জ উচ্চ বিদ্যালয় ও রানীগঞ্জ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ফটকে গত তিন বছর ধরে চল্লিশ বছর বয়সী এক অপ্রকৃতিস্থ নারী জীবনযাপন করছে। করোনাকালীন সময়ে বিদ্যালয় বন্ধ থাকায় দুটি বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের কোন অসুবিধা না হলেও গত ৩ মার্চ বিদ্যালয় খোলার পর থেকে রানীগঞ্জ উচ্চ বিদ্যালয় ও রানীগঞ্জ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় প্রাঙ্গণে উলঙ্গ হয়ে চলাফেরা করা ও গালিগালাজ করায় তাঁর উৎপাতে অতীষ্ঠ হয়ে উঠেন বিদ্যালয়ের শিক্ষক-শিক্ষার্থীবৃন্দ।

রানীগঞ্জ উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আব্দুস সামাদ জানান, অপ্রকৃতিস্থ নারীর উৎপাতে অতীষ্ঠ হয়ে তাঁর পরিবারের সন্ধান চেয়ে তিনি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে একটি স্ট্যাটাস দিলে জানতে পারেন ওই নারীর নাম সমতেরা বেগম, বাবার নাম মৃত- আব্দুল্লাহ, গ্রাম- বাউসা, পো:- হরিধরপুর, উপজেলা-নবীগঞ্জ, জেলা হবিগঞ্জ। ওই ঠিকানায় যোগাযোগ করা হলে নারীর বোন ও বোন জামাইয়ের সঙ্গে কথা হলে দারিদ্র্যতার কারণে তারা তাকে নিতে অপারগতা প্রকাশ করেন। 

রানীগঞ্জ বাজারের ব্যবসায়ী মন্তোষ দাশ বলেন, অপ্রকৃতিস্থ ওই নারীকে একাধিকবার শ্লীলতাহানির চেষ্টা করা হয়। বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ ও ব্যবসায়ীদের কারণে রক্ষা পান। সাম্প্রতিককালে তার উৎপাত বেড়ে যাওয়ায় বিদ্যালয় দুটোর শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের সমস্যা দেখা দিয়েছে।

রানীগঞ্জ উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আব্দুস সামাদ আরও জানান, অপ্রকৃতিস্থ ওই নারীর বিষয়টি  জগন্নাথপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাকে জানালে তিনি তার চিকিৎসার বিষয়ে চিন্তা করতে বলেন। রানীগঞ্জ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক শাহনাজ পারভীন বলেন, অপকৃতিস্থ নারীর উৎপাতে অনেক শিক্ষার্থী ভয়ে বিদ্যালয়ে আসা বন্ধ করে দিয়েছেন। আমরা দুটি বিদ্যালয় পাশাপাশি হওয়ায় ছেলে মেয়েদের নিয়ে তার আচরণে বিব্রতকর অবস্থায় আছি। 
রানীগঞ্জ ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ছদরুল ইসলাম বলেন, ইউনিয়নের প্রবাসী ও ধনাঢ্য ব্যক্তিদের কাছে আমরা তার চিকিৎসার জন্য সহায়তা কামনা করছি। আশা করছি অনেকেই এগিয়ে আসবেন। ঈদের পর পর তাকে সিলেটে ভর্তি করে মানসিক চিকিৎসা প্রদান করা হবে। আমরা চাই তাকে সুস্থ করে পরিবারের হাতে তুলে দিতে। 
অপ্রকৃতিস্থ নারীর বোন রিনা বেগম জানান, ওই নারীর দুই বিয়ে হয়েছে। দুই জায়গায় নির্যাতিত হওয়ার পর মানসিকভাবে অসুস্থ হয়ে পড়েন। তার বাবা-মা নেই। দুই ভাই দীর্ঘদিন ধরে ইরানে নিরুদ্দেশ। বর্তমানে তিনি আত্মীয় হিসেবে আছেন। তার স্বামী একজন দিনমজুর। বোনের সেবায় তিনি পাশে থাকতে চান। অভাব অনটনের কারণে সমস্যায় আছেন। তিনিও বোনের সুস্থতায় সকলের সহযোগিতা কামনা করেন।
জগন্নাথপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সাজেদুল ইসলাম বলেন, রানীগঞ্জ উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আব্দুস সামাদ আমাকে বিষয়টি অবগত করলে আমি ওই নারীর চিকিৎসার জন্য উদ্যোগ নেওয়ার পরামর্শ দিই। প্রধান শিক্ষক ও রানীগঞ্জ ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান উদ্যোগ গ্রহণ করায় তাদের সাধুবাদ জানাই। ওই নারীকে সুস্থ করে তুলতে পাশে থাকব বলে জানান তিনি।