টয়লেটে পালিয়েও শেষ রক্ষা হয়নি বিউটির!

 টয়লেটে পালিয়েও শেষ রক্ষা হয়নি বিউটির!

রয়েল ভিউ ডেস্ক :
তুচ্ছ ঘটনাকে কেন্দ্র করে সংঘর্ষের ঘটনায় ঢাকার ধামরাইয়ে আমতা ইউনিয়ন আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনের আমন্ত্রণে ইফতার মাহফিলে গিয়ে সন্ত্রাসী হামলার শিকার হয়েছেন নারী ইউপি সদস্য বিউটি বেগম ও তার প্রতিবন্ধী ছেলে রাব্বি হোসেন। হামলার থেকে বাঁচতে টয়লেটে পালিয়েও শেষ রক্ষা হয়নি বিউটিদের।

জানা যায়, প্রথমে ধামরাই উপজেলার আমতা হরলাল উচ্চ বিদ্যালয়ের শিক্ষকদের কক্ষের দরজা ভেঙে বিউটি বেগমের প্রতিবন্ধী ছেলেকে মারধর করে ইফতার মাহফিলে হামলাকারী সন্ত্রাসীরা। এ সময় ছেলেকে বাঁচাতে গিয়ে হামলার শিকার হন বিউটি বেগম। একপর্যায়ে তিনি টয়লেটে গিয়ে আশ্রয় নিলে দরজা ভেঙে তাকে মারতে মারতে বের করা হয়।

শুক্রবার ইউনিয়নের ৪, ৫ ও ৬ নং ওয়ার্ডের নারী ইউপি সদস্য বিউটি বেগম গণমাধ্যমকে বলেন, আমরা আওয়ামী লীগ করি। এছাড়া চেয়ারম্যান সাহেব দাওয়াত দিয়েছে। আমার এলাকায় হওয়ায় জনপ্রতিনিধি হিসেবে আমি সেখানে যাই। কিন্তু ইফতারের শেষ পর্যায়ে খাবার নিয়ে পরিকল্পিতভাবে সংঘর্ষ বাঁধিয়ে আমাদের মারধর করে করেছে সাবেকরা। আমি এ ঘটনার সুষ্ঠু তদন্তপূর্বক সঠিক বিচারের দাবি জানাই।

উল্লেখ্য, গত বুধবার উপজেলার জ্যাঠাইল গ্রামে আমতা হরলাল উচ্চ বিদ্যালয় প্রাঙ্গণে ইফতার মাহফিলে খাবার দেয়াকে কেন্দ্র করে দুই গ্রুপের সংঘর্ষের ঘটনায় আহত হয়েছে অন্তত ৭ জন। তাদেরকে উদ্ধার করে সাটুরিয়া, ধামরাই, এনাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল ও ঢাকার পঙ্গু হাসপাতালে চিকিৎসা দেওয়া হয়েছে।

সরেজমিনে জ্যাঠাইল গ্রামে গিয়ে দেখা যায়, ভাঙা হাতে ব্যান্ডেজ করা অবস্থায় এক যুবককে বাড়ির বারান্দায় শুইয়ে মাথায় পানি ঢালছেন স্বজনরা। তার পা ও শরীরের বিভিন্ন স্থানে মারধরের ক্ষত চিহ্ন দেখা যাচ্ছে। ব্যথায় কাতরাচ্ছে যুবকটি। পাশেই মাথায় ও হাতে সেলাই নিয়ে ইউপি সদস্য বিউটি বেগম তার ছেলে রাব্বি  হোসেনের দিকে ফ্যাল ফ্যাল করে তাকিয়ে রয়েছেন।

হামলার শিকার নারী উইপি সদস্য বিউটি বেগম বলেন, ইফতার শেষে সাংসদ বেনজির চলে যাওয়ার সময় খাবার দেয়ার ঘটনাকে কেন্দ্র করে আমতা ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান আবুল হোসেন ও বর্তমান চেয়ারম্যান আরিফ হোসেনের সমর্থকদের মধ্যে বাগ্‌বিতণ্ডার শুরু হয়। একপর্যায়ে সাবেক চেয়ারম্যান আবুল হোসেনের পক্ষে পার্শ্ববর্তী নান্দেশ্বরী গ্রামের সাবেক ছাত্রলীগ নেতা সেলিম হোসেনের নেতৃত্বে তিনটি পিকআপে করে লাঠি-সোঁটা ও হকিস্টিক নিয়ে অর্ধশত সন্ত্রাসী ইফতার মাহফিলে হামলা চালায়।

সদস্য বিউটি বেগম বলেন, সন্ত্রাসীদের হাত থেকে বাঁচতে তার ছেলে রাব্বি হোসেন ও আব্দুল জব্বার বিদ্যালয়টির শিক্ষক কক্ষে আশ্রয় নেয়। সন্ত্রাসীরা বাইরে থাকা লোকজনকে মারধর করে ছত্রভঙ্গ করে দিয়ে শিক্ষকদের কক্ষের দরজা ভেঙে ভেতরে প্রবেশ করে। পরে সেখানে থাকা ইউপি সদস্যের প্রতিবন্ধী ছেলে রাব্বি হোসেন ও আব্দুল জব্বারকে মারধর করতে থাকে। তাদের বাঁচাতে গেলে ইউপি সদস্যের ওপরও চড়াও হয় সন্ত্রাসীরা। পরিস্থিতি বেগতিক দেখে নিজেকে বাঁচাতে ওই কক্ষের টয়লেটে আশ্রয় নেন বিউটি বেগম। কিন্তু শেষ রক্ষা হয়নি তার। সেখান থেকে দরাজ ভেঙে তাকে বের করে মারধর করা হয়।

নারী ইউপি সদস্য বিউটি বেগম ও তার ছেলে রাব্বি হোসেনের অবস্থা আশঙ্কাজনক হওয়ায় তাদেরকে প্রথমে সাভারের এনাম মেডিকেলে ভর্তি করা হয় এবং পরবর্তীতে তাদের ঢাকা পঙ্গু হাসপাতালে স্থানান্তর করা হয়।

ওই দিন আমতা ও নান্দেশ্বরী এলাকার মধ্যে রাত প্রায় সারে আটটা পর্যন্ত সংঘর্ষ চলে। রাতে আমতা ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক দেলোয়ার হোসেন বাদী হয়ে ধামরাই থানায় একটি মামলা দায়ের করেছেন। পরে নান্দেশ্বরী গ্রামের রুহুল আমিন ও কাইয়ুমকে আটক করে পুলিশ।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এলাকাবাসীরা জানান, আমতা ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান আবুল হোসেন ধামরাইয়ের সাবেক সাংসদ এম এ মালেকের সমর্থক এবং বর্তমান চেয়ারম্যান আরিফ হোসেন বর্তমান সাংসদ বেনজির আহমেদের সমর্থক। রমজানের শুরু থেকেই বর্তমান ও সাবেক সাংসদ নিয়মিত বিভিন্ন ইউনিয়নে পাল্টাপাল্টি ইফতার পার্টি করে আসছেন। বুধবার সন্ধ্যায় আমতা ইউনিয়নে ইফতার পার্টির আয়োজন করা হলে সাবেক চেয়ারম্যান আবুল হোসেন ও সাংসদ এম এ মালেকের সমর্থক সাবেক ছাত্রলীগ নেতা সেলিমের নেতৃত্বে ইফতার পার্টি পণ্ড করার পাশাপাশি বিতর্ক সৃষ্টির জন্য হামলা চালানো হয়েছে।

আমতা ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আরিফ হোসেন বলেন, ইফতার মাহফিলে সাবেক চেয়ারম্যান ও সাবেক সাংসদের সমর্থক সেলিম হোসেনের নেতৃত্বে তিন পিকআপ ভরে অর্ধশত সন্ত্রাসী হামলা চালিয়েছে।

তবে অভিযোগ অস্বীকার করে আমতা ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান আবুল হোসেন বলেন, এমপি সাহেব চলে যাওয়ার পর ছেলেপেলেদের মধ্যে মারামারি হয়েছে। আবার পরিবেশ শান্তও করা হয়েছে।

ধামরাই থানার কাওয়ালীপাড়া বাজার তদন্ত কেন্দ্রের পুলিশ পরিদর্শক (ওসি) রাসেল মোল্লা বলেন, হামলার পরে ঘটনাস্থলে গিয়ে দুজনকে আটক করি। আহতদের হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। এ ঘটনায় রাতেই মামলা দায়ের করার হয়েছে এবং গ্রেপ্তারকৃত দুই আসামিকে রিমান্ডে এনে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে।