ডনবাসে রুশ বাহিনীর প্রচণ্ড আক্রমণ, কোনঠাসা ইউক্রেনীয় সেনারা

ডনবাসে রুশ বাহিনীর প্রচণ্ড আক্রমণ, কোনঠাসা ইউক্রেনীয় সেনারা

রয়েল ভিউ ডেস্ক:
ডনবাস অঞ্চলে রুশ বাহিনীর আক্রমণের মুখে ইউক্রেনের সৈন্যরা প্রচণ্ড চাপের মুখে আছে বলে স্বীকার করেছে কিয়েভের প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়।

ইউক্রেনের পূর্বদিকের ডনবাস অঞ্চলের লুহানস্ক প্রদেশের সেভারোডোনেৎস্ক এবং লিসিচানস্ক - এই দুটি শহরকে ঘিরে ফেলার চেষ্টায় এগুলোর ওপর রুশ বাহিনী প্রচণ্ড বোমাবর্ষণ করছে।

লুহানস্কের অধিকাংশ এলাকাই এখন রুশ বাহিনীর নিয়ন্ত্রণে । যে এলাকাগুলো তাদের নিয়ন্ত্রণে নেই সেগুলোই দখলে নেবার চেষ্টা করছে রুশ সেনারা।

ডনবাস অঞ্চলের অর্ধেক এলাকাই লুহানস্কের অন্তর্গত এবং রাশিয়া এখন এই জায়গাটিকেই তাদের যুদ্ধপ্রয়াসের প্রধান কেন্দ্রে পরিণত করেছে। বিবিসির সংবাদদাতা বলছেন, রাশিয়া যদি ডনবাস অঞ্চলের নিয়ন্ত্রণ নিয়ে নিতে পারে তাহলে প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন হয়তো ইউক্রেন যুদ্ধে বিজয় ঘোষণা করতে পারেন।

কিয়েভ থেকে বিবিসির জো ইনউড জানাচ্ছেন, পূর্ব ডনবাসে রাশিয়া ইতোমধ্যেই বেশ কয়েকটি শহর ও গ্রাম দখল করেছে এবং ইউক্রেনীয় বাহিনীকে আত্মরক্ষামূলক অবস্থানে ঠেলে দিয়েছে।

তারা এটা করতে পারছে কারণ সৈন্য, কামান, সাঁজোয়া যান, এবং বিমানবাহিনীর শক্তি - সব ক্ষেত্রেই সংখ্যার দিক থেকে ইউক্রেনকে পেছনে ফেলেছে রুশরা, বলেন জো ইনউড।

’ভ্লাদিমির পুতিনের বাহিনী অবশেষে কিছু সাফল্য পাচ্ছে’- বলেন তিনি।

ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট জেলেনস্কি আজ এবিসি নিউজকে বলেছেন, ডনবাস অঞ্চলে একেকজন ইউক্রেনীয় সেনার বিপরীতে সাতজন করে রুশ সেনা আছে।

কিয়েভে প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের একজন মুখপাত্র ওলেক্সান্দর মোতুজিয়ানিক বলছেন, ইউক্রেনীয় বাহিনী এখনো ওই দুটো শহরে যাবার প্রধান রাস্তাটি নিয়ন্ত্রণ করছে - তবে যুদ্ধ এখনো চলছে।

লুহানস্ক প্রদেশের গভর্নর সেরহি হাইদাই বলেন, ওই রাস্তাটি লক্ষ্য করে গুলিবর্ষণ চলছে কিন্তু এটি এখনো সম্পূর্ণ বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়নি।

তিনি বলেন, দিনরাত গোলাবর্ষণ, মিসাইল নিক্ষেপ ও বিমান থেকে বোমা ফেলে সেভারোডোনেৎস্ক শহরটিকে ধ্বংস করে দেয়া হচ্ছে।

হাইদাই আরো জানান, রুশ বাহিনী এখন এতটাই কাছে চলে এসেছে যে তারা রকেটের পাশাপাশি মর্টারও ব্যবহার করছে।

এছাড়া এখান থেকে অনেকটা দূরে ইউক্রেনের জাপোরিঝিয়া এবং ক্রিভি রিহ শহর দুটির ওপরও ক্ষেপণাস্ত্র হামলা হয়েছে। প্রাথমিক রিপোর্টে এতে অনেক লোক হতাহত হয়েছে বলেও জানা গেছে।

ইউক্রেনের সশস্ত্র বাহিনীর জয়েন্ট টাস্কফোর্স ফেসবুকে বলেছে, দোনেৎস্ক ও লুহানস্ক অঞ্চলের ৪০টির বেশি শহরে গোলাবর্ষণ করেছে রুশ সেনারা। এতে ৩৮টি ঘরবাড়ি, স্কুলসহ ৪৭টি বেসামরিক স্থাপনা ধ্বংস ও ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। গোলাবর্ষণে ৫ বেসামরিক নাগরিক নিহত ও ১২ জন আহত হয়েছেন।

দনবাস অঞ্চলের পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণ নিতে গত মাস থেকেই ওই অঞ্চলে অভিযান জোরদার করেছে রাশিয়া। মারিওপোলের পতনের পর লুহানস্ক অঞ্চলের সেভেরোদোনেৎস্ক ও লিসিচানস্ক শহরে থাকা ইউক্রেনীয় সেনাদের ঘিরে ফেলার চেষ্টায় তিন দিক থেকে হামলা করছেন রুশ সেনারা।

শহর দুটির পতন হলে গোটা লুহানস্ক প্রদেশ রাশিয়ার পুরো নিয়ন্ত্রণে চলে যাবে। এটি ইউক্রেনে ক্রেমলিনের চলমান সামরিক অভিযানের অন্যতম লক্ষ্যগুলোর একটি। রুশ সেনারা যদি সেভেরোদোনেৎস্ক থেকে বাখমুটের রাস্তাটি দখল করতে পারেন, তবে পুরো শহরকে ঘিরে ফেলতে সক্ষম হবেন তারা।

সেভেরোদোনেৎস্ক দখলে রাশিয়া ‘পোড়ামাটি নীতি’ গ্রহণ করেছে বলে গত রোববার লুহানস্কের গভর্নর সেরহি গাইদাই অভিযোগ করেন। তিনি সতর্ক করে বলেন, দোনেৎস নদীর ওপর একটি ছাড়া সব সেতু ধ্বংস করে দিয়েছে রুশ বাহিনী। শহরটি বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ার ঝুঁকিতে রয়েছে।

ইউক্রেনের জেনারেল স্টাফ জানিয়েছে, ইজিউম, সেভেরোদোনেৎস্ক ও আভদিভকায় রুশ বাহিনী তাদের কৌশলগত অবস্থান জোরদার করছে। পূর্বাঞ্চলীয় বাখমুট ও আভদিভকা শহরের কাছে হামলায় ইলেকট্রনিক ওয়ারফেয়ার কাজে লাগাচ্ছে রুশ বাহিনী।