সিলেট প্রেসক্লাব-মুহিবুন্নেছা সম্মাননা পদক প্রদান অনুষ্ঠানে পরিকল্পনামন্ত্রী

ঢাকা থেকে সড়কপথে সুনামগঞ্জে তিন ঘণ্টায় আসার পদক্ষেপ নেয়া হচ্ছে 

ঢাকা থেকে সড়কপথে সুনামগঞ্জে তিন ঘণ্টায় আসার পদক্ষেপ নেয়া হচ্ছে 

আবদুল হামিদ মানিকের সাংবাদিকতা, লেখনী ও গবেষণা জাতিকে অনেক দিয়েছে

স্টাফ রিপোর্টার : ঢাকা থেকে সড়কপথে সুনামগঞ্জে তিন ঘণ্টায় আসার সব ধরণের প্রচেষ্টা চলছে বলে জানিয়েছেন পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান এমপি। হবিগঞ্জ থেকে সরাইল-নাসিরনগর হয়ে সুনামগঞ্জের সাথে সড়কপথের ব্যবধান আরো ২০ কিলোমিটার অর্থাৎ এক ঘণ্টা কমানোর পরিকল্পনা নেয়া হয়েছে। রাণীগঞ্জ সেতু নির্মাণের মাধ্যমে এরই মধ্যে দূরত্ব ৬০ কিলোমিটার কমে এসেছে। এ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে আমরা পিছিয়ে পড়া অঞ্চলকে সবচাইতে বেশি গুরুত্ব দিচ্ছি। 
সিলেট প্রেসক্লাব আয়োজিত সিলেট প্রেসক্লাব-মুহিবুন্নেছা সম্মাননা পদক প্রদান অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি একথা বলেন। গতকাল সোমবার সন্ধ্যায় ক্লাবের আমীনূর রশীদ চৌধুরী মিলনায়তনে দৈনিক সিলেটের ডাক-এর নির্বাহী সম্পাদক ও প্রবীণ সাংবাদিক আবদুল হামিদ মানিককে এ পদক প্রদান করা হয়।
সিলেট প্রেসক্লাব সভাপতি ইকবাল সিদ্দিকীর সভাপতিত্বে ও সাধারণ সম্পদক আব্দুর রশিদ মো. রেনুর পরিচালনায় অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথির বক্তব্য রাখেন-সিলেট সিটি কর্পোরেশনের মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী।
সম্মাননা পদকপ্রাপ্ত সাংবাদিক আবদুল হামিদ মানিক তাঁর অনুভূতি ব্যক্ত করেন। এছাড়াও বক্তব্য রাখেন সিলেট প্রেসক্লাবের সাবেক সভাপতি আহমেদ নূর ও ইকরামুল কবির, সিলেট       প্রেসক্লাবের আইন উপদেষ্টা অ্যাডভোকেট এমাদ উল্লাহ শহিদুল ইসলাম শাহীন। অনুষ্ঠানের শুরুতে কোরআন তেলাওয়াত করেন ক্লাবের নির্বাহী সদস্য আব্দুর রাজ্জাক।
পরিকল্পনামন্ত্রী তাঁর  বক্তব্যে আরো বলেন, বঙ্গবন্ধু কন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গণমানুষের ভাগ্য উন্নয়নে আন্তরিকভাবে কাজ করে যাচ্ছেন। তিনি বলেন, সময় এখন চমৎকার- আসুন উন্নয়নের জন্য আমরা একযোগে কাজ করি। কাজের জন্য টাকা কোনো সমস্যা নয়। প্রধানমন্ত্রীর চিন্তা-চেতনা অত্যন্ত আধুনিক- যা আমাদেরকেও বিস্মিত করে। সবকিছুতেই তিনি নতুনত্বের ছাপ দেখতে চান। হোক সেটা ছাত্রীদের হোস্টেল বা প্রাথমিক বিদ্যালয়। এমন কর্মপ্রাণ নেত্রীর সাথে কাজ করে আমি পুলকিত। 
অনুষ্ঠানে পরিকল্পনামন্ত্রী আরও বলেন, আমাদের একটি রাজনৈতিক অভিলাষ রয়েছে। তা পূর্ণ করতে চাই। সেটি হচ্ছে গণতন্ত্র, অসাম্প্রদায়িক চেতনা, দারিদ্র্য দূর করে দেশের আধুনিকায়ন- যেখানে মানুষ শান্তিপূর্ণভাবে বসবাস করবে, বৈষম্যহীন সমাজ গড়ে ওঠবে। তিনি বলেন, আমি রাজনীতিতে যোগ দিয়েছি একটি উদ্দেশ্য নিয়ে। তা হচ্ছে দীর্ঘদিন ধরে উন্নয়নবঞ্চিত হাওরাঞ্চল ও ভাটি বাংলার মানুষের জীবনমান উন্নয়নে কাজ করতে। আর সেই সাহস ও শক্তি যুগিয়েছেন বঙ্গবন্ধু কন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি নিজেও ভাটির মানুষের প্রতি অত্যন্ত আন্তরিক।
তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা উন্নয়নমূলক কাজের রূপরেখা তৈরি করেন। আমরা তাঁর নির্দেশনা অনুযায়ী মাঠ পর্যায়ে বাস্তবায়ন করি। বৃহত্তর সিলেটের উন্নয়নের ব্যাপারে শেখ হাসিনারও আগ্রহ রয়েছে। এ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, সিলেট সিটি কর্পোরেশনসহ বৃহত্তর সিলেটের রাস্তাঘাট, বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের অবকাঠামো উন্নয়নে বহু প্রকল্প চলমান রয়েছে। এ প্রসঙ্গে তিনি সিলেট-বাদাঘাট-বিমানবন্দর বাইপাস সড়ক নির্মাণ করা হবে। রাণীগঞ্জ সেতু শিগগিরই শেষ হবে। তিনি আরও বলেন, সুনামগঞ্জের হাওর এলাকায় অলওয়েদার উড়াল সেতু নির্মাণ করা হচ্ছে। এর মাধ্যমে সুনামগঞ্জ ও নেত্রকোনা জেলার যোগাযোগ সহজতর হবে। এর মাধ্যমে লোকজনের সিলেট থেকে পশ্চিম দিকে যাওয়ার সুযোগ সৃষ্টি হবে। 
 সুনামগঞ্জ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় নির্মাণের প্রসঙ্গ উল্লেখ করে তিনি বলেন, এ নিয়ে আমাদের মধ্যে কিছুটা মতবিরোধ থাকলেও প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপে সেটা নিরসনের প্রচেষ্টা চলছে। বিশ্ববিদ্যালয় নির্মাণ নিয়ে অচলাবস্থা শিগগিরই কেটে যাবে।  সুনামগঞ্জে রেল লাইনও নির্মিত হবে। জনকল্যাণমূলক যেকোন উন্নয়ন প্রকল্প প্রধানমন্ত্রীর কাছে অগ্রাধিকার পায় বলে মন্তব্য পরিকল্পনামন্ত্রীর। 
তিনি সিলেট সিটি কর্পোরেশনের মেয়র আরিফুল হক চৌধুরীকে আরও বেশি করে উন্নয়ন প্রকল্প প্রেরণের তাগাদা দিয়ে বলেন, এসব প্রকল্প বাস্তবায়নে তাঁর সর্বাত্মক সহযোগিতা অব্যাহত থাকবে। 
সংবর্ধিত ব্যক্তি আবদুল হামিদ মানিকের বহুমুখী প্রতিভার প্রশংসা করে বলেন, তিনি একজন চমৎকার ব্যক্তি। তাঁর সাংবাদিকতা, লেখনী ও গবেষণা জাতিকে অনেক দিয়েছে। সাহিত্য সাংবাদিকতায় তিনি যে অবদান রেখে যাচ্ছেন-তার বর্তমান প্রজন্মের জন্য অনুকরণীয়। তিনি আবদুল হামিদ মানিকের সুদীর্ঘ-সুস্থ জীবন কামনা করেন। সিলেট প্রেসক্লাব-মুহিবুন্নেছা সম্মাননা পদক প্রবর্তন করায় সাংবাদিক ইব্রাহিম চৌধুরী খোকনের পরিবারকেও মন্ত্রী ধন্যবাদ জানান। তিনি এই ধারা অব্যাহত থাকবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেন।
বিশেষ অতিথির বক্তব্যে সিটি মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী বলেন, আবদুল হামিদ মানিক একজন প্রাজ্ঞ সাংবাদিক ও গবেষক। তিনি সর্বমহলে গ্রহণযোগ্য ব্যক্তিত্ব। প্রেসক্লাব তাঁকে সম্মানিত করায় আমি অত্যন্ত খুশি হয়েছি। গুণীব্যক্তিদের সম্মানিত না করলে সমাজে গুণী জন্মায় না। সিটি মেয়র বলেন, সিলেট নগর উন্নয়নে আমি যখনই পরিকল্পনামন্ত্রীর স্মরণাপন্ন হয়েছি; তখনই তিনি উদার হস্তে এগিয়ে এসেছেন। বৃহত্তর সিলেটের উন্নয়নে পরিকল্পনামন্ত্রীর আগ্রহে আমি অভিভূত। সিলেটের উন্নয়নে আমরা সবাই এক বলে মন্তব্য করেন আরিফুল হক চৌধুরী। 
পদকপ্রাপ্ত সাংবাদিক আবদুল হামিদ মানিক অনুভূতি ব্যক্ত করে বলেন, এ সম্মাননা প্রদানে আমি খুশি- এটা আমার জন্য অনুপ্রেরণা। তিনি এ পদক প্রবর্তনে সাংবাদিক ইব্রাহিম চৌধুরীর পরিবারের প্রতি ধন্যবাদ জ্ঞাপন করেন এবং তাঁকে মনোনীত করায় প্রেসক্লাব নেতৃবৃন্দের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন।   
অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন ক্লাবের সহ-সভাপতি এম এ হান্নান ও আব্দুল কাদের তাপাদার, সাবেক সহ-সভাপতি আতাউর রহমান আতা, হুমায়ূন রশিদ চৌধুরী, মোহাম্মদ বদরুদ্দোজা বদর ও মুহাম্মদ আমজাদ হোসাইন, সাবেক সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ সিরাজুল ইসলাম, সিনিয়র সদস্য আব্দুল মালিক জাকা, কোষাধ্যক্ষ কাউসার চৌধুরী, সাবেক কোষাধ্যক্ষ খালেদ আহমদ ও মো. আফতাব উদ্দিন, পাঠাগার ও প্রকাশনা সম্পাদক কবির আহমদ, নির্বাহী সদস্য আশকার ইবনে আমিন লস্কর রাব্বী ও এম আহমদ আলী, গল্পকার সেলিম আউয়াল, ক্লাব সদস্য আব্দুল বাতিন ফয়সল, মো. মুহিবুর রহমান, চৌধুরী দেলওয়ার হোসেন জিলন, মো. আমিরুল ইসলাম চৌধুরী এহিয়া, আনাস হাবিব কলিন্স, শাহ মুজিবুর রহমান জকন, মো. দুলাল হোসেন, নাজমুল কবীর পাভেল, আবু সাঈদ মো. নোমান, সিন্টু রঞ্জন চন্দ, শেখ আশরাফুল আলম নাসির, খালেদ আহমদ, শ্যামানন্দ দাশ, শাকিল আহমদ সোহাগ, এটিএম তুরাব, এম রহমান ফারুক, আবুল কালাম কাওছার, খাদিজা বুশরা নূর প্রমুখ।