তীব্র খরায় ভেসে উঠল ২য় বিশ্বযুদ্ধের যুদ্ধ জাহাজ

তীব্র খরায় ভেসে উঠল ২য় বিশ্বযুদ্ধের যুদ্ধ জাহাজ

রয়েল ভিউ ডেস্ক:
তীব্র খরার মুখোমুখি হয়েছে ইউরোপ। চলমান এই খরা এতোটাই প্রকট আকার ধারণ করেছে যে, শক্তিশালী দানিয়ুব নদীর পানিও গত প্রায় এক শতাব্দীর মধ্যে সর্বনিম্ন স্তরে পৌঁছেছে।

এতে করে একে একে ফের জেগে উঠতে শুরু করেছে জার্মানির ডুবে যাওয়া বহু যুদ্ধজাহাজ। এসব জার্মান যুদ্ধজাহাজ দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় ডুবে গিয়েছিল। শনিবার (২০ আগস্ট) এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানিয়েছে তুরস্কের সংবাদমাধ্যম টিআরটি ওয়ার্ল্ড।

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, সাম্প্রতিক বছরগুলোর মধ্যে ইউরোপে সবচেয়ে খারাপ খরা দেখা দিয়েছে এবং এতে গত এক শতাব্দীর মধ্যে দানিয়ুব নদীর পানি সর্বনিম্ন স্তরের একটিতে পৌঁছেছে। আর এতেই সার্বিয়ার নদীবন্দর শহর প্রাহোভোর কাছে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় ডুবে যাওয়া কয়েক ডজন বিস্ফোরক-বোঝাই জার্মান যুদ্ধজাহাজ ভেসে উঠেছে।

টিআরটি ওয়ার্ল্ড বলছে, ১৯৪৪ সালে সোভিয়েত বাহিনীর আক্রমণে দানিয়ুব নদীর তীরে নাৎসি জার্মানির কৃষ্ণসাগর বহরের শত শত যুদ্ধজাহাজ ডুবে যায়। পানি কমে যাওয়ায় জেগে ওঠা এসব যুদ্ধজাহাজ সেই বহরেরই অংশ ছিল। এমনকি এখনও পানির স্তর কম থাকলে ইউরোপের অন্যতম বৃহৎ এই নদীপথে নৌ-চলাচল বাধাগ্রস্ত হয়ে থাকে।

সংবাদমাধ্যমটি বলছে, বৈশ্বিক উষ্ণতার ফলে সৃষ্ট ইউরোপজুড়ে চলতি বছরের খরায় পূর্ব সার্বিয়ার প্রাহোভোর কাছে দানিয়ুব নদীতে ২০ টিরও বেশি যুদ্ধজাহাজ ভেসে উঠেছে। ভেসে ওঠা এসব যুদ্ধজাহাজের অনেকগুলোতে এখনও কয়েক টন করে গোলাবারুদ এবং বিস্ফোরক মজুদ রয়েছে। ফলে এই রুটে নৌ-চলাচল এখন বিপজ্জনক হয়ে উঠেছে।

দানিয়ুব নদীতে ডুবে যাওয়া এসব জার্মান যুদ্ধজাহাজ সম্পর্কে একটি বই লিখেছেন প্রাহোভোর প্রবীণ নাগরিক ভেলিমির ট্রাজিলোভিক। ৭৪ বছর বয়সী এই ব্যক্তি বলেছেন, ‘ডুবে যাওয়া জার্মান জাহাজের এই বহর একটি বড় পরিবেশগত বিপর্যয় রেখে গেছে, যা আমাদেরকে তথা প্রাহোভোর মানুষকে হুমকির মুখে ফেলে দিয়েছে।’

এছাড়া এসব জার্মান জাহাজের কারণে স্থানীয় মাছ ধরার শিল্পের সঙ্গে যুক্ত কর্মীরাও ঝুঁকির মধ্যে রয়েছেন। এর মধ্যে রোমানিয়া থেকে আসা ব্যক্তিরাও রয়েছেন। মূলত নদীর ঠিক ওপারেই রোমানিয়ার অবস্থান।

টিআরটি ওয়ার্ল্ড বলছে, মাসের পর মাস ধরে চলে আসা এই খরা এবং রেকর্ড-উচ্চ তাপমাত্রা দানিয়ুব নদীপথে নৌ-চলাচলকে কার্যত আটকে দিয়েছে। এতে করে জার্মানি, ইতালি এবং ফ্রান্সসহ ইউরোপের এক অংশ থেকে অন্য অংশে নৌ-চলাচল বাধাগ্রস্ত হচ্ছে।

অবশ্য সার্বিয়ার কর্তৃপক্ষ দানিয়ুবের নৌ-চলাচল লেনগুলো চালু রাখার জন্য ড্রেজিংয়ের আশ্রয় নিয়েছে। সার্বিয়ার নদীবন্দর শহর প্রাহোভোর কাছে দানিয়ুব নদীতে ডুবে থাকা কিছু জার্মান জাহাজ নৌচলাচলের অংশটিকে ১৮০ মিটার থেকে মাত্র ১০০ মিটারে সঙ্কুচিত করে দিয়েছে।

দানিয়ুব নদীর এই অংশে তীরজুড়ে ছড়িয়ে থাকা কিছু জাহাজে এখনও বুরুজ, কমান্ড ব্রিজ, ভাঙ্গা মাস্তুল এবং পেঁচানো হুল পানির ওপরে রয়েছে। এর বাইরে বেশিরভাগ জাহাজই বালিতে নিমজ্জিত অবস্থায় রয়েছে।

চলতি বছরের মার্চ মাসে ডুবে যাওয়া এসব জাহাজ উদ্ধার এবং গোলাবারুদ ও বিস্ফোরক অপসারণের জন্য একটি দরপত্র আহ্বান করেছিল সার্বিয়ান সরকার। সেসময় এই কর্মকাণ্ডের খরচ ধরা হয়েছিল ৩০ মিলিয়ন মার্কিন ডলার।