দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতিতে দিশেহারা মানুষ

দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতিতে দিশেহারা মানুষ
ফাইল ছবি

রয়েল ভিউ ডেস্ক:

‘আমাদের দেশের সব প্রাণী উন্নত হয়েছে। মাছ, মুরগি, গরু-ছাগল সব মাছ-পশু ঘাস-ফিডের পরিবর্তে তেল খেতে শুরু করেছে। তাই মাছ-মুরগির দাম বেড়েছে।’ -বলছিলেন রাজধানীর ক্রেতারা। 

জ্বালানি তেলের মূল্যবৃদ্ধির অজুহাতে রাজধানীর বাজারগুলোতে মাছ-মুরগির দাম বেড়েছে। কেজিতে মাছের দাম জাতবিশেষে ২০-৩০ টাকা বেড়েছে। ডিম ও ব্রয়লার মুরগির দাম কিছুটা কমলেও পাইকারি বাজারে ব্রয়লারের দাম অস্বাভাবিক হারে বাড়তে থাকায় অধিকাংশ দোকানে ব্রয়লার মুরগির সরবরাহ কম দেখা গেছে।

আজিমপুর থেকে পলাশী বাজারে নিত্য আসেন রাকিব। তিনি দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘এখন দেশের সব মাছ-পশু জ্বালানি তেলে খেয়ে বেঁচে থাকে। তাদের আর ঘাস-ফিড ভালো লাগে না। তারা উন্নত হয়েছে। তাদের এখন অকটেন, পেট্রোল খেয়ে বেঁচে থাকতে হয় বলে মাছ-ডিম-মুরগির দাম বেড়েছে।’

একই অজুহাতে রাজধানীর বাজারগুলোতে চালের অস্বাভাবিক মূল্যবৃদ্ধি হয়েছে। প্রতি কেজি চালের দাম খুচরা পর্যায়ে ৭-৮ টাকা বেড়েছে। কাঁচাবাজারগুলোতে সবজির দামও বেড়েছে। সপ্তাহের ব্যবধানে করলা, লাউ, ঢেঁড়স, শসাসহ প্রায় সব ধরনের সবজির দাম কেজিতে অন্তত ১০ টাকা বেড়েছে। 

অস্বাভাবিক চালের বাজারের জন্য মিলার এবং পরিবহন-খরচ বেড়ে যাওয়াকেই দায়ী করছেন ব্যবসায়ীরা। তারা বলছেন, পরিবহন-খরচ বেড়ে যাওয়া ও মিলারদের কারসাজি এর জন্য দায়ী।

গতকাল রাজধানীর কারওয়ান বাজার, মহাখালী কাঁচাবাজার ও পলাশী বাজার ঘুরে দেখা যায়, পঞ্চাশ কেজি বস্তার মিনিকেট চাল সপ্তাহের ব্যবধানে ৩২০০ থেকে বেড়ে ৩৫৫০-৩৬০০ টাকা, আটাশ ২৬০০ থেকে ২৯৫০ টাকা, বাসমতি ৩৪০০ থেকে ৪১০০ টাকা, লাল টোপা ২৩০০ থেকে ২৭০০ টাকা এবং গুটি স্বর্ণা ২৩০০ থেকে ২৬৫০ টাকারও বেশি দরে বিক্রি হচ্ছে।

মহাখালী বাজারের চাল বিক্রেতা রাকিব দেশ রূপান্তরকে বলেন, মিলারদের কাছ থেকে প্রতি বস্তায় ১৫০-২০০ টাকা বেশি দিয়ে চাল কিনতে হয়। তার ওপরে আমাদের বস্তাপ্রতি আরও ৫-৭ টাকা খরচ আছে। সব মিলিয়ে খুচরায় চাল বিক্রি করতে হয় আগের দামের থেকে কেজিতে ৩-৪ টাকা বেশি দরে। অর্থাৎ খুচরা বাজারে প্রতি কেজি মিনিকেট চাল ৭৫ টাকায় বিক্রি করতে হয়, যা আগে ছিল ৬৩ টাকা; স্বর্ণা চালের কেজি ৫৩-৫৪ টাকা, যা আগে ছিল ৪৬ টাকা; আটাশ কেজিতে বিক্রি হচ্ছে ৫৮ টাকা, যা আগে ছিল ৫০ টাকা।

মুরগি ও ডিমের বাজার ঘুরে জানা যায়, প্রতি কেজি ব্রয়লার মুরগির দাম কমেছে ২০ টাকা ও ডিমের দাম ডজনে কমেছে ৩০ টাকা। কারওয়ান বাজারের কিচেন মার্কেটের অধিকাংশ দোকানে ব্রয়লার মুরগির মজুদ কম দেখা গেছে।

গত সপ্তাহে ২০০ টাকা কেজিতে বিক্রি হওয়া ব্রয়লার মুরগির দাম কমে ১৮০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। পাকিস্তানি কক বা সোনালি মুরগির দামও কিছু কমেছে। সোনালি মুরগির কেজি বিক্রি হচ্ছে ২৮০ থেকে ৩০০ টাকায়, গত সপ্তাহে ছিল ৩০০ থেকে ৩২০ টাকা।

মুরগি ব্যবসায়ীরা বলেছেন, মুরগির দাম বাড়ায় তাদের বিক্রি অর্ধেকে নেমে এসেছে। খামারিদের কাছ থেকে বেশি দামে মুরগি কিনতে হয়। বেশি দামে মুরগি এনে লোকসান দিয়ে বিক্রি করতে হয়। এ কারণে ব্রয়লার মুরগি স্টক করা বন্ধ রেখেছেন বলে অনেক ব্যবসায়ী জানান।

কারওয়ান বাজারের মুরগি ব্যবসায়ী খোরশেদ আলম দেশ রূপান্তরকে বলেন, ১৯০-২০০ টাকা কেজিতে মুরগি কিনতে চান না ক্রেতারা। এ দামে বিক্রি না করলে আমাদের লোকসানে থাকতে হয়। খামারিরা প্রতি কেজি ১৭০-১৭৫ টাকার নিচে মুরগি বিক্রি করতে চান না। দোকান ভাড়া, কর্মচারীর বেতন প্রভৃতি খরচ মিলিয়ে ২০০ টাকার নিচে মুরগি বিক্রি করলে লস। তাই সাময়িকভাবে ব্রয়লার মুরগি বিক্রি বন্ধ রাখব ঠিক করেছি।

বাজারগুলোতে এক ডজন ডিম ১৩০ থেকে ১৩৫ টাকায় বিক্রি হতে দেখা গেছে। যা দুই দিন আগেও ফড়িয়াদের কারসাজিতে ১৬০-১৬৫ টাকায় বিক্রি হয়েছিল।

মহাখালীর ডিম ব্যবসায়ী বিলাল বলেন, ডিমের দাম বাড়ার পেছনে সিন্ডিকেটদের হাত ছিল। যেমন হঠাৎ করে ডিমের দাম বেড়েছে, ডিমের বিক্রি কমে যাওয়ায় তেমনি হঠাৎ করেই ডিমের দাম কমে গেছে।

বাজারে সরবরাহ ভালো থাকার পরেও আরেক দফা বেড়েছে সবজির দাম। সবচেয়ে বেশি দামে বিক্রি হচ্ছে মরিচ। ২৫০ গ্রাম শিম বিক্রি হচ্ছে ৫০-৫৫ টাকায়। এক কেজির ক্রেতার কাছে তা বিক্রি করা হচ্ছে ২১০ টাকায়। এক কেজি টমেটো বিক্রি হচ্ছে ১০০ থেকে ১৩০ টাকায়। গাজর বিক্রি হচ্ছে ১২০ থেকে ১৩০ টাকায়। বরবটির কেজি ৭০ থেকে ৮০ টাকা। বেগুনের কেজি ৫০ থেকে ৭০ টাকা, কাঁকরোলের কেজি ৬০ থেকে ৭০ টাকা, কাঁচা পেঁপের কেজি ২০  থেকে ২৫ টাকা, পটোল ৪০ থেকে ৫০ টাকা কেজিতে বিক্রি হচ্ছে। কচুর লতি, ঝিঙে, চিচিঙ্গার কেজি বিক্রি হচ্ছে ৪০ থেকে ৫০ টাকায়। করলার কেজি ৬০  থেকে ৮০ টাকা।

মাছের বাজারেও ক্রেতাদের হতাশ হতে দেখা গেছে। জাতবিশেষে মাছের দাম কেজিতে ২০-৩০ টাকা বেড়েছে। ৩০ টাকা বেড়ে প্রতি কেজি মাঝারি রুই বিক্রি হচ্ছে ৩০০ টাকায়, কাতল ৩২০ টাকায়, পাবদা ৩৬০ থেকে ৫০০ টাকায়, চিংড়ি ৬০০ টাকায়, পোয়া ৩৫০ টাকায়, পাঙ্গাশ ১৮০ টাকায়, শিং ৩৫০ থেকে ৪৬০ টাকায়। কৈ মাছ ২০০ থেকে ২৫০ টাকা কেজিতে কিনছেন ক্রেতারা।