দিন দিন মানুষের দৃষ্টিশক্তি কেন কমে যাচ্ছে? 

দিন দিন মানুষের দৃষ্টিশক্তি কেন কমে যাচ্ছে? 

রয়েল ভিউ ডেস্ক :

ক্ষীণদৃষ্টি মোকাবিলায় সবচেয়ে কার্যকর সমাধান ডিজিটাল ডিভাইসের পর্দা ছেড়ে প্রকৃতির দিকে তাকানো ক্যামেরার মতোই চোখের সামনের লেন্স ও চোখের মণির দৈর্ঘ্য সামনে থেকে পিছনে একসাথে কাজ করে চোখের পিছনের রেটিনায় একটি চিত্র ফুটিয়ে তোলে। মায়োপিয়া বা ক্ষীণদৃষ্টির ক্ষেত্রে লেন্সের অপটিক্যাল শক্তি বেশি হয়ে যায়, অথবা চোখের মণি একটু বেশি দীর্ঘ হয়ে যায়। এই অসামঞ্জস্যতার জন্য রেটিনায় ফুটে ওঠা ছবিটি ঝাপসা হয়ে যায়। 

মিশিগান বিশ্ববিদ্যালয়ের সিএস মট চিলড্রেনস হাসপাতালের তথ্যমতে, সাধারণত ৬ থেকে ১২ বছরের মধ্যেই ক্ষীণদৃষ্টির লক্ষণ দেখা যায়। সাধারণত কিশোর বয়সের শেষের দিকে দৃষ্টি আবার স্বাভাবিক হয়ে যায়। তবে প্রাপ্তবয়স্ক হওয়ার পরও অনেকের চোখে এ সমস্যা থেকে যায়, কিংবা প্রাপ্তবয়স্ক হওয়ার পর প্রথমবারের মতো দেখা দেয় এ সমস্যা। 

চক্ষুরোগ বিশেষজ্ঞ ডা. পল ব্রায়ার জানান, ক্ষীণদৃষ্টিতে আক্রান্ত প্রায় ২০ শতাংশ মানুষের এ সমস্যা দেখা দেয় ২০তম জন্মদিনের পর। 

হিউস্টন কলেজ অব অপটোমেট্রি বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন সহযোগী অধ্যাপক মার্ক বুলিমোর বলেছেন, সাধারণত যত আগে মায়োপিয়া শুরু হয়, তা ধীরে ধীরে ততই গুরুতর হয়।

এমনকি হালকা রকমের মায়োপিয়ার চিকিৎসার জন্য সময় এবং অর্থ উভয়ই প্রয়োজন। নিউ সাউথ ওয়েলস স্কুল অফ অপটোমেট্রি অ্যান্ড ভিশন সায়েন্স বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক পদ্মজা শঙ্করিদুর্গ বলেন, ''জীবনযাত্রার মানের মধ্যেও দৃষ্টিশক্তি খরচ পরিমাপ করা যায়, যা সংশোধনের করলেও উন্নতি হয় না অনেক সময়; কারণ কোনো চিকিৎসাই নিখুঁত নয়। চশমা ভুলে যাওয়া বা ভাঙলে লেন্স পরতে হয়। প্রায়ই পরিচ্ছন্নতা ছাড়া লেন্স ব্যবহার করা যায় না। চোখের প্রতিসরণজনিত অস্ত্রোপচারও ঝুঁকি বহন করে। আবার অস্ত্রোপচারের সুফল সবসময় স্থায়ী হয় না''। 

শঙ্করিদুর্গর মতে, ''মায়োপিয়ার চিকিৎসা খরচ সম্পর্কে জেনে নেওয়া গুরুত্বপূর্ণ। কারণ এটি প্রায় সারাজীবনের বোঝা হিসাবে বয়ে বেড়াতে হতে পারে''। 

নর্থওয়েস্টার্ন মেডিসিনের চক্ষুরোগ বিশেষজ্ঞ মিশেল আন্দ্রেওলি বলেছেন, ''প্রাপ্তবয়স্করা ক্ষীণদৃষ্টিতে ভুগতে পারেন। কারণ তাদের চোখ যথেষ্ট লম্বা হতে থাকে''। 

এতে স্বাভাবিকভাবেই তাদের বেশি দূরত্বের বস্তু দেখার দৃষ্টিশক্তি হ্রাস পায়। কারো কারো শারীরবৃত্তীয় কারণে দূরদৃষ্টির প্রতি সামান্য প্রবণতা থাকতে পারে। তাদের ভিজ্যুয়াল ফোকাসিং সিস্টেমের পেশীগুলি এটির জন্য পরিবর্তিত হয়েছে। শারীরিক ক্লান্তি এসকল পেশীগুলিকে দূর্বল করে দিতে পারে। ফলে যৌবনের সময় মায়োপিয়া দেখা দেয়''।

কিছু ক্ষেত্রে ব্যক্তির শারিরীক অবস্থা ক্ষীণদৃষ্টিশক্তির জন্য দায়ী। এছাড়া সময়ের সাথে সাথে মায়োপিয়া বৃদ্ধি পাওয়া প্রমাণ করে যে ,পরিবেশও এতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে পারে। কিন্তু মায়োপিয়ার পিছনে সুনির্দিষ্ট বৈজ্ঞানিক কারণ এখনো পুরোপুরি জানা যায়নি। কারণ বেশিরভাগ গবেষণা প্রচলিত 'শৈশবে মায়োপিয়া বিকাশের' উপর ভিত্তি করে করা হয়েছে।
 
সাধারণত বলা হয় যে, পড়া-লেখা এবং অন্যান্য কাজ চোখকে ক্লোজ-আপ ক্রিয়াকলাপের (কাছাকাছি বস্তুর উপর ফোকাস করে কাজ করা) জন্য তার ফোকাসিং সিস্টেমকে অপ্টিমাইজ করার জন্য দীর্ঘায়িত করতে উত্সাহিত করে। সাধারণত কম্পিউটার ব্যবহার করার সময় আমরা স্ক্রীনের দিকে ঝুঁকে পড়ি। এটি মায়োপিয়া বিকাশে ভূমিকা পালন করে। 

কিন্তু কিছু গবেষক বলেছেন যে ক্লোজ-আপ ওয়ার্কের মাধ্যমে শিশুদের মধ্যে মায়োপিয়া বৃদ্ধি পায় না। বরং বাইরে খেলাধুলা না করার কারণে আক্রান্ত হচ্ছে বেশি।

২০১৫ সালের মেডিকেল জার্নালে জামা প্রকাশিত একটি ক্লিনিকাল ট্রায়ালে দেখা যায়, স্কুলের ক্লাস শেষে কমপক্ষে ৪০ মিনিট ঘরের বাইরে খেলাধুলা করলে মায়োপিয়ায় আক্রান্ত শিশুদের সংখ্যা কমে যায়। 

প্রশ্ন জাগতে পারে, প্রকৃতিতে সময় কাটানোতে কি এমন  আছে যা আমাদের চারপাশকে আরও স্পষ্টভাবে দেখতে সাহায্য করতে পারে? 

২০১০ সালে ইনভেস্টিগেটিভ অপথালমোলজি অ্যান্ড ভিজ্যুয়াল সায়েন্স স্টাডি থেকে দুটি বিষয় জানা গেছে। প্রথমত, রেটিনায় উজ্জ্বল আলো পড়লে তা নিউরোট্রান্সমিটার ডোপামিন নিঃসরণকে প্রভাবিত করে, যা চোখের প্রসারণকে প্রতিরোধ করে। দ্বিতীয়ত, বাইরের কাজ করার সময় আমাদের চোখ বেশি দূরত্বে ফোকাস করতে সক্ষম হয়। 

যদিও বয়স্ক ব্যক্তিদের মায়োপিয়াকে আরও ভালভাবে বোঝার জন্য আরও গবেষণা করা প্রয়োজন। বর্তমান গবেষণায় দেখা গেছে, প্রাপ্তবয়স্কদের মধ্যে যারা আর অফিসে যাতায়াত করেন না, তাদের মধ্যে ক্ষীণদৃষ্টিজনিত সমস্যা বৃদ্ধি পেতে পারে। 

গবেষক রিচম্যান বলেন, "যারা দিনে অন্তত তিনবার ঘরের বাইরে কাজ করেন, দূরে তাকান এবং একটানা কম্পিউটারের মতো ডিভাইস ব্যবহার করেন না, তাদের মধ্যে এ ধরনের জটিলতা খুব কম প্রকাশ পায়''।

প্রাপ্তবয়স্কদের মনে রাখা উচিত যে তারা মায়োপিয়ার ঝুঁকি মুক্ত নয়। তাদেরও নিয়মিত চোখের যত্ন নেওয়া উচিত। বিশেষজ্ঞদের মতে কম্পিউটারে কাজ করার সময় ২০/২০/২০ (প্রতি ২০ মিনিটে ২০ সেকেন্ডের জন্য ২০ ফুট দূরে একটি বস্তুর দিকে তাকানো) নিয়মটি অনুসরণ করা উচিত। পাশাপাশি, প্রতিদিন বাইরে সময় কাটানো এবং নিয়মিত চোখের পরীক্ষা করানো উচিত। 

চোখের যত্নে সবার আরও সতর্ক হওয়া উচিত বলে তিনি মন্তব্য করেন তার মতে, ''মহামারি কয়েক বছর স্থায়ী হতে পারে, কিন্তু আমার চোখ চিরকাল আমার সাথেই থাকবে"।  

সূত্র: ডিসকভার ম্যাগাজিন