দাবদাহে পুড়ছে বাংলাদেশ

দাবদাহে পুড়ছে বাংলাদেশ

রয়েল ভিউ ডেস্ক:
বিগত কয়েকদিন ধরে রুদ্রমূর্তি ধারণ করেছে আবহাওয়া। বর্ষাকালেও প্রচণ্ড গরমে মানুষের নাভিশ্বাস উঠেছে। শুক্রবারও দেশের সাত জেলা এবং তিন বিভাগে বয়ে যায় তাপপ্রবাহ। এই অবস্থার মধ্যে দুপুরে দেশের বিভিন্ন এলাকায় বৃষ্টিপাতের পূর্বাভাস জারি করে আবহাওয়া অধিদপ্তর (বিএমডি)।

আবহাওয়াবিদরা মনে করেন, বৃষ্টিশূন্যতার পাশাপাশি আরও চারটি পরিস্থিতি বিদ্যমান থাকায় এই অবস্থা বিরাজ করছে। তবে জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবও এর পেছনে আছে বলে মনে করেন পরিবেশ ও জলবায়ু বিশেষজ্ঞরা।

তারা আরও জানান, জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে বাংলাদেশসহ প্রায় সারা বিশ্বেই তাপমাত্রা বেড়েছে। আর এ কারণে খরার সময়ে প্রচণ্ড খরা আবার বৃষ্টি এলে ব্যাপক বর্ষণ হয়। এটাকে বলে আবহাওয়ার অস্বাভাবিক আচরণ। এর কারণে ইতোমধ্যে বাতাসের স্বাভাবিক গতি পরিবর্তিত হয়েছে। ভবিষ্যতে ঋতু পরিক্রমায় আরও পরিবর্তন আসতে পারে বলে তারা সতর্ক করেছেন।

এ প্রসঙ্গে জলবায়ু বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক আইনুন নিশাত বলেন, বিশ্বে তাপমাত্রা গড়ে ১ ডিগ্রি বেড়েছে। কিন্তু বাংলাদেশে এটা বেড়েছে ১ দশমিক ২ ডিগ্রি পর্যন্ত। এর ফলে প্রধান প্রভাব পড়েছে বাতাসের গতি প্রবাহে। এটি পরিবর্তন হচ্ছে। আর এ কারণে ঋতু পরিক্রমার অদল-বদল হবে। এবারে শীত শেষ হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে গরম পড়া শুরু করে। তাহলে বসন্ত গেছে কোথায়? তিনি বলেন, বাংলাদেশের ঋতুবৈচিত্র্যের সঙ্গে ফসলপঞ্জির সম্পর্ক আছে। এখন ঋতু পরিক্রমা পরিবর্তন হলে ফসলের ফলন কমে যাবে। সময়কাল পরিবর্তিত হবে।

বাংলাদেশে আষাঢ় ও শ্রাবণ দুই মাস বর্ষাকাল। আজ শুরু হচ্ছে শ্রাবণ। চিরায়ত শ্রাবণ মানেই অঝোর বারিধারা। এ কারণে বৃষ্টির পূর্বাভাস খরতাপে পোড়া জনজীবনে স্বস্তির সুবাতাস নিয়ে আসতে পারে বলে আশা করছেন অনেকেই। দু-এক বা কিছু স্থানে বৃষ্টি হলে তা দাবদাহ হ্রাসে তেমন একটা ভূমিকা রাখবে না। আবহাওয়াবিদ ড. আবদুল মান্নান বলেন, আগামী দুদিনে খুব ভারী বৃষ্টি হওয়ার লক্ষণ নেই। তবু এই পরিস্থিতি তেমন দীর্ঘায়িত হওয়ারও কথা নয়। আগামী তিন দিন পরে স্বস্তিদায়ক পরিস্থিতি আসতে পারে।

শুক্রবার বিএমডির বুলেটিনে বলা হয়- ঢাকা, টাঙ্গাইল, রাঙামাটি, কুমিল্লা, চাঁদপুর, ফেনী, চুয়াডাঙ্গাসহ রংপুর, রাজশাহী ও সিলেট বিভাগের ওপর দিয়ে মৃদু থেকে মাঝারি তাপপ্রবাহ বয়ে যাচ্ছে। এ অবস্থা অব্যাহত থাকতে পারে। পরে বিএমডির দুপুরের বিশেষ বার্তায় বলা হয়, চট্টগ্রাম বিভাগের অনেক জায়গায়, খুলনা, বরিশাল, ঢাকা, ময়মনসিংহ, রংপুর ও সিলেট বিভাগের কিছু কিছু জায়গায় এবং রাজশাহী বিভাগের দু-এক জায়গায় অস্থায়ীভাবে দমকা হাওয়াসহ হালকা থেকে মাঝারি ধরনের বৃষ্টি/বজ সহ বৃষ্টি হতে পারে। সেইসঙ্গে দেশের কোথাও কোথাও বিচ্ছিন্নভাবে মাঝারি ধরনের ভারী বর্ষণ হতে পারে।

আবহাওয়াবিদদের মতে, যখন বৃষ্টি কোনো এলাকার সর্বোচ্চ ২৫ শতাংশ স্থানে হয়ে থাকে তখন তাকে ‘দু-এক স্থানে বৃষ্টি হয়েছে’ বলে বিবেচনা করা হয়। আর ২৬ থেকে ৫০ শতাংশ স্থানে বৃষ্টি হলে তাকে ‘কিছু কিছু স্থানে’ এবং ৭৫ শতাংশ পর্যন্ত এলাকায় বৃষ্টি হলে তাকে ‘অনেক স্থানে’ বলা হয়। এই হিসাবে যে পূর্বাভাস দেওয়া হয়েছে তা তপ্ত পরিবেশ তেমন একটা শান্ত করতে পারবে না।

সাধারণত ৩৮ থেকে ৪০ ডিগ্রি সেলসিয়াসের নিচের তাপমাত্রাকে মাঝারি এবং ৩৬ থেকে ৩৮ ডিগ্রির নিচে তাপমাত্রা থাকলে তাকে মৃদু তাপপ্রবাহ বলা হয়। ৪০ ডিগ্রির বেশি হলে তাকে তীব্র তাপপ্রবাহ বলে।

আবহাওয়াবিদ ড. মুহাম্মদ আবুল কালাম মল্লিক বলেন, তবে দু-একদিনের মধ্যে এই পরিস্থিতির উত্তরণ ঘটবে। ইতোমধ্যে এর লক্ষণ দেখা গেছে। বৃহস্পতিবার সকাল পর্যন্ত আগের ২৪ ঘণ্টায় যেখানে দেশের মাত্র ৫-৬ স্থানে বৃষ্টির রেকর্ড পাওয়া গেছে, সেখানে বৃহস্পতিবার দিবাগত রাতে অন্তত ১৯ স্থানে সামান্য হলেও বৃষ্টি হয়েছে। এই প্রবণতা ক্রমান্বয়ে বাড়বে।

তিনি বলেন, কেবল বৃষ্টিহীনতাই বর্তমান তাপপ্রবাহের জন্য দায়ী নয়। জলীয় বাষ্পের আধিক্য, আকাশের আংশিক মেঘলাভাব, সর্বোচ্চ ও সর্বনিম্ন তাপমাত্রার পার্থক্য কমে যাওয়া এবং বাতাসের মন্থর গতিবেগও এই গরমের জন্য দায়ী।

বিএমডির শুক্রবার সকালের বুলেটিনে দেখা গেছে, বৃহস্পতিবার রাতে রাজধানীতে দুই মিলিমিটার বৃষ্টি হয়েছে। দেশে সর্বোচ্চ বৃষ্টি হয়েছে বগুড়ায় ১৮ মিলিমিটার। রংপুর অঞ্চলে একেবারেই বৃষ্টি হয়নি। আর সবচেয়ে বেশি খরতাপ রাজশাহীতে। বৃহস্পতিবার সেখানে দেশের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ৩৯ ডিগ্রি ছিল। খুলনা-বরিশালেও বৃষ্টি নেই বললেই চলে। তবে বৃষ্টির প্রবণতা বেড়েছে চট্টগ্রামে।

এদিকে শুক্রবার সারাদিনই খরতাপে পুড়েছে রাজধানী। বিএমডি রাজধানী ও এর আশপাশ এলাকার উপরে দুপুরে জারি করা ৬ ঘণ্টার আবহাওয়ার পূর্বাভাসে বলেছে, আকাশ অস্থায়ীভাবে আংশিক মেঘলা ও আবহাওয়া শুষ্ক থাকতে পারে। সামান্য বাড়তে পারে দিনের তাপমাত্রা। দুপুর ১২টায় তাপমাত্রা ছিল ৩৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস।