দলের নিয়ন্ত্রণ হারাচ্ছেন ফখরুল

দলের নিয়ন্ত্রণ হারাচ্ছেন ফখরুল

রয়েল ভিউ ডেস্ক:
বিএনপি যতই আন্দোলনে বেগবান হচ্ছে, যতই দলের নেতাকর্মীরা উজ্জীবিত হচ্ছে তাতই দলের কর্তৃত্ব এবং নিয়ন্ত্রণ হারাচ্ছেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। সর্বশেষ ফরিদপুরে বিএনপির মহাসমাবেশে দেখা গেছে যে, মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের কথা শুনছেন না কর্মীরা। বরং তারা জোরালো কর্মসূচি দেওয়ার জন্য রীতিমতো চাপ সৃষ্টি করছেন। বিভিন্ন স্থানে বিএনপির মহাসমাবেশ গুলোতে আস্তে আস্তে ফখরুলের কর্তৃত্ব খর্ব করা হচ্ছে। দলের অন্যান্য নেতারাও এখন ফখরুলের কথাবার্তায় তেমন পাত্তা দিচ্ছেন না। বরং ফখরুলের অনেক সিদ্ধান্ত এখন উপেক্ষিত হচ্ছে। মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন যে, ১০ ডিসেম্বর কিছুই হবেনা, ওই দিন শুধুমাত্র বিএনপি আন্দোলনের কর্মসূচি ঘোষণা করবে মাত্র। কিন্তু বিএনপির মহাসচিবের এই বক্তব্যের সঙ্গে একমত নন নেতাকর্মীরা। বরং মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর যখন এই ধরনের কথাবার্তা বলছেন তখন বিএনপির একাধিক নেতা ১০ ডিসেম্বরের পর থেকে সরকারের কথায় দেশ চলবে না, সরকারকে লাল কার্ড দেখানো হবে, ঢাকা অবরুদ্ধ হবে, খালেদা জিয়ার কথায় দেশ চলবে এমন বক্তব্য গুলো বলছেন। এরকম পরিস্থিতিতে মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর অসহায়ত্ব নিজেই স্বীকার করছেন এবং এই পরিস্থিতিতে দলের নেতৃত্ব সামাল দেওয়া তার পক্ষে কঠিন হয়ে দাঁড়িয়েছে বলেও তিনি মতামত ব্যক্ত করেছেন। 

মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের শক্তির উৎস হলো লন্ডনে পলাতক দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক জিয়া। লন্ডনে পলাতক বিএনপির এই নেতা মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরকে যে নির্দেশনা গুলো দিচ্ছেন সেই নির্দেশনাই মির্জা ফখরুল ইসলাম পালন করছে। অনেক বিএনপির নেতা ঠাট্টার ছলে বলেন যে, মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর আসলে বিএনপি মহাসচিব নন, তিনি তারেক জিয়ার পিএস। তারেক জিয়ার নির্দেশ প্রতিপালন করা এবং তারেক জিয়ার নির্দেশ অনুযায়ী কাজ করাই তার প্রধান দায়িত্ব এবং এটি করে তিনি মহাসচিবের পদে টিকে আছেন। বিএনপির অনেক নেতাই মনে করেন যে, তৃণমূলের কাছে অন্যতম অপছন্দের ব্যক্তি হলেন মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। ২০১৮ নির্বাচনের পর থেকে মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরকে অনেকেই ভিলেন মনে করেন। বিএনপির কোনো কোনো নেতা মনে করেন যে, মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের সঙ্গে সরকারের গোপন যোগাযোগ রয়েছে এবং এই যোগাযোগের কারণেই তিনি আন্দোলনকে বেগবান করেন না, ভুল তথ্য দিয়ে তারেক জিয়াকে বিভ্রান্ত করেন এবং আন্দোলনের নিয়ন্ত্রণ যেন সরকারের হাতেই থাকে সেটি নিশ্চিত করার চেষ্টা করেন। আর এই সমস্ত অভিযোগগুলো গত প্রায় চার বছর ধরে মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরকে ঘিরে। তার সঙ্গে সরকারের গোপন যোগাযোগের কথাও বিএনপিতে নানা রকম ভাবে প্রলোভিত হয়। 

অনেক বিএনপি নেতাই করেন যে, আন্দোলন বেগবান হওয়ার একপর্যায়ে তিনি আবার নির্বাচনের নাটক করতে পারেন। ২০১৮ ’র মতো ঘটনা ঘটাতে পারেন। এ কারণেই মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরকে সাম্প্রতিক সময়ে বিভিন্ন কূটনীতিকদের সাথে বৈঠকগুলোতে নেয়া হচ্ছে না। সর্বশেষ মার্কিন উপ সহকারী পররাষ্ট্রমন্ত্রীর আফরিন আক্তারের বাংলাদেশ সফরে গিয়েছিলেন বিএনপির হেভিয়েট নেতা আমির খসরু মাহমুদ চৌধুরী। এছাড়াও বিভিন্ন সময়ে কূটনীতিকদের সাথে বৈঠকেও এখন মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরকে দেখা যাচ্ছে না। তার কাজ এখন সীমিত হয়ে যাচ্ছে। মহাসমাবেশে প্রধান অতিথি হিসেবে বক্তৃতা এবং দুই চারটা সংবাদ সম্মেলনে বক্তব্য দেওয়া ছাড়া দলের নীতিনির্ধারণী কোনো বিষয়ে তিনি কিছুই জানেন না। এমনকি বিভিন্ন মহাসমাবেশ গুলোতে কিভাবে লোকসমাগম হচ্ছে, কোনো কোনো নেতা কি ধরনের দায়িত্ব পালন করছেন এ ব্যাপারে তিনি অন্ধাকারে রয়েছেন। বিএনপিতে যারা আক্রমণাত্মক রাজনীতিতে বিশ্বাস করে এবং সরকার পতনের লক্ষ্যে বড় ধরনের আন্দোলনের চিন্তাভাবনা করছে তারা এখন আর ফখরুলকে মানছেন না। আর এ কারণেই মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের কর্তৃত্ব দলের মধ্যে খর্ব হতে শুরু করেছে। এখন দলই তার কথা শুনছে না।