দেশে এখন এক ব্যক্তির শাসন ও মতবাদ চলছে : ফখরুল

দেশে এখন এক ব্যক্তির শাসন ও মতবাদ চলছে : ফখরুল
ফাইল ছবি

দেশে এখন এক ব্যক্তির শাসন ও মতবাদ চলছে বলে অভিযোগ করেছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। বলেন, ‘একজন ব্যক্তি ছাড়া কোনো ব্যক্তি নেই বাংলাদেশে।...এক ব্যক্তির শাসন, এক ব্যক্তির মতবাদ, এক ব্যক্তির সব। কিন্তু এগুলো টিকে না। এ ধরনের কর্তৃত্ববাদ, এ ধরনের ফ্যাসিবাদ কখনোই ঠিক না।’

আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে ইঙ্গিত করে তিনি বলেন, ‘অন্যায় করে, নির্যাতন করে; ভালোবাসা না থাকলে প্রেম না থাকলে কখনো কি কাউকে চিরস্থায়ী করা যায়?’

স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী উদযাপন উপলক্ষে বিএনপির উদ্যোগে এক রচনা প্রতিযোগিতার পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠানে মির্জা ফখরুল এসব কথা বলেন। শনিবার দুপুরে জাতীয় প্রেসক্লাবে অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়।

দেশের শতকরা ৪২ জন মানুষ দারিদ্র্যসীমার নিচে রয়েছে জানিয়ে বিএনপি মহাসচিব বলেন, ‘আর তারা (আওয়ামী লীগ) কোটি কোটি টাকার মালিক হচ্ছে। এ অবস্থার অবসান ঘটাতে হবে। এ অবস্থার অবসান তরুণদের ঘটাতে হবে। আজকে তরুণদের জেগে উঠতে হবে, বাংলাদেশের মানুষকে জেগে উঠতে হবে।’

তিনি বলেন, ‘আজকে শাওন, আব্দুর রহিম, নূরে আলমের রক্তকে বৃথা যেতে দেয়া যাবে না। তাদের রক্তের প্রতি সত্যিকার অর্থে শ্রদ্ধা জানাতে চাই ভালবাসা জানাতে চাই। এর জন্য এই ভয়াবহ দানব সরকারকে প্রতিহত করে জনগণের সরকার প্রতিষ্ঠা করতে হবে।’

‘গণতন্ত্র হরণকারীরা যখন গণতন্ত্রের কথা বলে, তখন লজ্জা ধিক্কার ছাড়া কিছুই আশা করা যায় না। আজকে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে গিয়ে (শেখ হাসিনা) বড় বড় কথা বলছেন যে যুদ্ধ চাই না, নিষেধাজ্ঞা চাই না। কেউ চায় না যুদ্ধ, কেউ চায় না নিষেধাজ্ঞা। কিন্তু তার মুখে এটা মানায় না। তিনি নিজে এই দেশে হত্যার সঙ্গে জড়িত’—বলেন মির্জা ফখরুল।

বিএনপির ছয় শতাধিক নেতাকর্মীকে গুম করা হয়েছে দাবি করে দলটির মহাসচিব বলেন, ‘ইলিয়াস আলী, চৌধুরী আলম থেকে শুরু করে আমাদের ছাত্রদলের অসংখ্য ছেলে। এই ছেলেগুলো চলে গেছে মায়ের কোল খালি করে। মা জানে না, বাবা জানে না, কোথায় তারা। আজকে শত শত মানুষকে থানায় নিয়ে গিয়ে তারা পঙ্গু করে দিয়েছে। সহস্রাধিক মানুষকে তারা হত্যা করেছে। এক্সট্রা জুডিশিয়াল কিলিং করেছে।’

‘এ কারণে আজকে এলিট ফোর্স র‌্যাব যারা দেশের সুনাম কুড়িয়েছিল অপরাধ দমনের ক্ষেত্রে, এ সরকারের অন্যায় আদেশ মানতে গিয়ে তাদের ওপর নিষেধাজ্ঞা পড়েছে। সাতজন কর্মকর্তার ওপর নিষেধাজ্ঞা পড়েছে এটা নিয়ে সরকারের কোনো মাথাব্যাথা নেই। তারাই নির্দেশদাতা তাদের ওপর সবার আগে নিষেধাজ্ঞা আসা প্রয়োজন। নিষেধাজ্ঞা ইতোমধ্যে জনগণ দিয়ে দিয়েছে। মানুষ বলে দিয়েছে তোমাদেরকে আর দরকার নেই।’

মির্জা সফখরুল বলেন, ‘আগে উন্নয়নের কথা খুব বেশি বলতো। এখন একটু কম বলে।উন্নয়ন কখনোই টেকসই হবে না যদি সেখানে গণতন্ত্র না থাকে। আর গণতন্ত্র কখনোই ফলপ্রসূ হবে না, যদি সেখানে কার্যকর বিরোধী দল না থাকে ও মানুষ ভোট দিতে না পারে।’

স্বাধীনতার সুবর্ণ জয়ন্তীর উদযাপনের মূল লক্ষ্য সম্পর্কে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন বলেন, ‘স্বাধীনতার ৫০ বছরে বাংলাদেশ বির্নিমানে, বিভিন্ন কর্মকান্ডে, উন্নয়নে কর্মকাণ্ডে, উল্লেখযোগ্য যে ভূমিকা রয়েছে তার ইতিহাস তুলে ধরা।’

‘বিশেষ করে গত ১৪ বছরে যারা সরকারে তারা মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসকে বিকৃত করছে। বাংলাদেশের ৫০ বছরে ইতিহাসকে বিকৃত করে শুধুমাত্র তাদের স্বার্থে নতুন করে ইতিহাস রচনা করার অপচেষ্টা করছে।’

ইতিহাস ঐতিহাসিক এবং ইতিহাসবিদরাই রচনা করেন উল্লেখ করে খন্দকার মোশাররফ হোসেন বলেন, ‘এছাড়া কেউ ইতিহাস সৃষ্টি করতে পারে না। তারা হয়তো সাময়িক রচনা লিখতে পারেন। এর প্রেক্ষিতে আমরা সিদ্ধান্ত নিয়েছিলাম মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস এবং ৫০ বছরের বাংলাদেশের ইতিহাস আমরা প্রত্যেকের হাতে তুলে দেব।’

এর আগে স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী উদযাপন রচনা প্রতিযোগিতায়‌ বিজয়দের মাঝে পুরস্কার বিতরণ করা হয়। রচনা প্রতিযোগিতা কমিটির আহবায়ক অধ্যাপক ইউসুফ হায়দারের সভাপতিত্বে ও অনুষ্ঠানের সঞ্চালনা করেন সদস্য সচিব অধ্যাপক ডক্টর এ বি এম ওবায়দুল ইসলাম।

এ সময় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়েল প্রাক্তন উপ-উপাচার্য আ ফ ম ইউসুফ হায়দার, বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা আব্দুস সালাম ও ছাত্রদলের সাধারণ সম্পাদক সাইফ মাহমুদ জুয়েল প্রমুখ অন্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন।-বিজ্ঞপ্তি