দেশের অনেক টাকা পাচার হয়ে গেছে, ফেরত আনার সুযোগ দিচ্ছি: আ.লীগ

দেশের অনেক টাকা পাচার হয়ে গেছে, ফেরত আনার সুযোগ দিচ্ছি: আ.লীগ

রয়েল ভিউ ডেস্ক:
পাচার হওয়া টাকা ফেরত আনতে নতুন অর্থবছরের বাজেটে যে সুযোগ রাখা হয়েছে, তা নিয়ে বিএনপির সমালোচনাকে দলটির ‘ডাবল স্ট্যান্ডার্ড’ বলে মন্তব্য করেছেন আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহণ ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের। 

নির্ধারিত কর দিয়ে পাচার হওয়া টাকা ফেরত আনার ঘোষণায় পাচারকারীরা আরও উৎসাহিত হবে কি না- এমন প্রশ্নের জবাবে ওবায়দুল কাদের বলেন, এটা ঠিক সেইভাবে দেখলে হবে না। দেশের অনেক টাকা পাচার হয়ে গেছে। অন্যান্য দেশেও এই ধরনের সুযোগ দেওয়া হয়। আমরা সেই সুযোগটা দিচ্ছি। আমরা দেখি, যদি এই সুযোগের সুফল না আসে তাহলে আমরা সুযোগটা উঠিয়ে নেব। এই বাজেটের দেওয়া সুযোগে আমরা সুফল পেতে পারি।

শনিবার বিকালে রাজধানীর বঙ্গবন্ধু এভিনিউতে আওয়ামী লীগের বাজেট পরবর্তী সংবাদ সম্মেলনে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে তিনি এসব কথা বলেন। 

এক প্রশ্নের জবাবে ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘মির্জা ফখরুলসহ দেশের একটি চিহ্নিত মহল ক্রমাগতভাবে বাংলাদেশ থেকে বিদেশে অর্থপাচার হচ্ছে বলে অভিযোগ করছে। তাদের বক্তব্য যদি সত্য হিসেবেই ধরে নেই, তাহলে সাত শতাংশ কর দানের মাধ্যমে কেউ যদি টাকা দেশে নিয়ে আসে, তাহলে মির্জা সাহেবদের খুশি হওয়ার কথা। এখন কেন তারা অভিযোগ করছে? অর্থপাচারের অভিযোগ তুলবেন, আর যখন টাকা ফেরত আনার উদ্যোগ নেব, তখনো অভিযোগ করবেন, সেটা তো আপনাদের ডাবল স্ট্যান্ডার্ড, দ্বিচারিতা।’

ক্ষমতায় থাকাকালে ৩৪ লাখ টাকা জরিমানা দিয়ে বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া দুইবার কালো টাকা সাদা করেছেন দাবি করে আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক বলেন, ‘বাংলাদেশের মানুষ জানে কারা দেশের টাকা বিদেশে পাচার করে। পাচারকারী হিসেবে আপনাদের (বিএনপি) বিশ্ব রেকর্ড।’

প্রস্তাবিত বাজেটকে শেখ হাসিনার দুরদর্শী নেতৃত্বে সম্পূর্ণ আত্মনির্ভরশীল জাতি গঠনের প্রত্যয় নিয়ে বাংলাদেশের ঘুরে দাঁড়ানোর বাজেট উল্লেখ করে সেতুমন্ত্রী বলেন, করোনা পরবর্তী প্রেক্ষাপট এবং রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের বিশ্ব অর্থনীতিতে যে চাপ সৃষ্টি করেছে- তা বিবেচনায় নিয়ে বলা যায় প্রস্তাবিত বাজেটটি সম্পূর্ণ বাস্তবসম্মত এবং সময়োপযোগী। জনমুখী, জনকল্যাণকর এবং বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় অঙ্কের বাজেট। বর্তমান বিশ্ব অর্থনীতির বাস্তবতায় পৌনে সাত লাখ কোটি টাকার এই বাজেট শেখ হাসিনার নেতৃত্বে অর্জিত বাংলাদেশের অর্থনীতির সক্ষমতার প্রতিফলন।

শেখ হাসিনার নিরবচ্ছিন্ন নেতৃত্বের কারণে বাংলাদেশের অর্থনীতি গত দেড় দশকে একটি শক্তিশালী ভিত্তির ওপর দাঁড়িয়েছে উল্লেখ করে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক বলেন, ‘যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্যের যখন গড় মূল্যস্ফীতি যথাক্রমে ৮.৩৯ শতংশ, পার্শ্ববর্তী দেশ ভারতে ৭.৮ শতাংশ এবং বিশ্বের অন্যান্য অনেক উন্নত ও উন্নয়নশীল দেশে মূল্যস্ফীতি ৮ শতাংশের ওপর। সেখানে প্রস্তাবিত বাজেটে মূল্যস্ফীতি হার শতকরা মাত্র ৫.৬ শতাংশ রাখার চ্যালেঞ্জ গ্রহণ করেছে শেখ হাসিনার সরকার। এই অর্থবছরে দেশের জনগণের মাথাপিছু আয় দাঁড়াবে তিন হাজার নয় মার্কিন ডলার।

আন্তর্জাতিক বাজারের নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসের মূল্যবৃদ্ধি বাংলাদেশে সহনীয় রাখতে বাজেটে ৮৩ হাজার কোটি টাকার ভর্তুকি রাখা হয়েছে জানিয়ে ওবায়দুল কাদের বলেন, আন্তর্জাতিক বাজারে মূল্যবৃদ্ধির চাপ দেশের মানুষের ওপর চাপিয়ে দেওয়া হবে না প্রধানমন্ত্রী সেটা বলেছেন। যদিও আন্তর্জাতিক বাজারে অস্থিতিশীল পরিস্থিতি একটি বড় চ্যালেঞ্জ। আন্তর্জাতিক পর্যায়ে মূল্যবৃদ্ধির কারণে সরকারের ব্যয় দিন দিন বাড়ছে উল্লেখ করে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক বলেন, এ কারণে এবারের বাজেটে প্রস্তাবনা বাস্তবতার আলোকে জনগণের দুর্ভোগ লাঘবে সরকার গুরুত্বের সঙ্গে কিছু চ্যালেঞ্জ গ্রহণ করেছে।

সংবাদ সম্মেলনে আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য কাজী জাফরউল্লাহ, ড. আবদুর রাজ্জাক, শাজাহান খান, জাহাঙ্গীর কবির নানক, মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী মায়া বীরবিক্রম, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুবউল আলম হানিফ, ডা. দীপু মনি, কার্যনির্বাহী সদস্য ডা. মোস্তফা জালাল মহিউদ্দিন, সাংগঠনিক সম্পাদক আহমদ হোসেন, এসএম কামাল হোসেন, প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক ড. আবদুস সোবহান গোলাপ, মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক সম্পাদক মৃনাল কান্তি দাস, ত্রাণ ও সমাজকল্যাণ সম্পাদক সুজিত রায় নন্দী, কৃষি ও সমবায় সম্পাদক ফরিদুন্নাহার লাইলী, সংস্কৃতি সম্পাদক অসীম কুমার উকিল, দপ্তর সম্পাদক বিপ্লব বড়ুয়া, তথ্য ও গবেষণা সম্পাদক ড. সেলিম মাহমুদ, শিল্প ও বাণিজ্য সম্পাদক সিদ্দিকুর রহমান প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।