দেড় ঘন্টার বৃষ্টিত নগরীতে তীব্র জলাবদ্ধতা

দেড় ঘন্টার বৃষ্টিত নগরীতে তীব্র জলাবদ্ধতা

রয়েল ভিউ ডেস্ক:
ড্রেনে জমা আবর্জনা ও মাটি পরিষ্কার না করায় দেড় ঘন্টার বৃষ্টিতে শনিবার রাতে নগরীতে তীব্র জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয় বলে সংশ্লিষ্ট একাধিক সূত্র জানিয়েছে। কেউ এজন্য সিসিকের অপরিকল্পিত উন্নয়নকেও দায়ী করছেন। তবে, সিলেট সিটি কর্পোরেশন (সিসিক)-এর পক্ষ থেকে দাবি করা হয়েছে শনিবার রাতের অল্প সময়ে রেকর্ড পরিমাণ বৃষ্টির ফলে সাময়িক দুর্ভোগ হয়েছে নগরবাসীর। এমন পরিস্থিতির আগাম সতর্ক বার্তা পাওয়া যায়নি বলে দাবি সিসিকের।
 
সিলেট নগরীর কুমারপাড়ার বাসিন্দা বদরুদ্দোজা বদর জানান, গত কয়েক বছর ধরে সিলেট শহরে অপরিকল্পিত উন্নয়ন কাজ চলছে। জনগণ তাদের কোটি টাকার জমি দান করেছিলেন আম জনতার সুবিধার কথা বিবেচনা করেই। রাস্তা বড় করা হয়েছিল, কিন্তু আধুনিক ড্রেনেজ সিস্টেম গড়া হয়নি। সামান্য মাটি কেটে তার উপর তৈরি করা হয়েছে বক্স কালভার্ট। শ্রাবণের প্রথম রাতের অঝোর ধারার বৃষ্টিতে শহরের প্রায় প্রতিটি এলাকাই পানিতে সয়লাব হয়ে যায়।  কুমারপাড়া, নাইওরপুল, চৌহাট্টা ও মিরবক্সটুলার দোকান মালিকদের রোববার দুপুর ময়লা পানি অপসারণে ব্যস্ত থাকতে দেখা যায়। 

সোস্যাল মিডিয়ায় দেখা গেছে, অনেকে লেপ-তোষক থেকে শুরু করে সব ধরণের ময়লা আবর্জনা ছড়া-নালায় ফেলে দেন। যে কারণে ছড়াগুলো ভরাট হয়ে পানি ক্ষমতা হারিয়ে ফেলেছে। 

শনিবার রাতের বৃষ্টিতে নগরীর জিন্দাবাজার, বারুতখানা, হাওয়াপাড়া, আম্বরখানা, চৌহাট্টা, লোহারপাড়া, বড়বাজার, লামাবাজার, মদিনামার্কেট, চারাদিঘিরপাড়, সওদাগরটুলা, যতরপুর, উপশহর, শিবগঞ্জ, শাপলাবাগ, তালতলা, জালালাবাদ, আম্বরখানা, মণিপুরীপাড়া, সুবিদবাজার, বাগবাড়ি, ভাতালিয়া, ঘাসিটুলা, শামীমাবাদ, জল্লারপাড়, কানিশাইল, মজুমদারপাড়া, মেন্দিবাগ, দরগামহল্লা, রাজারগলি, লালদিঘিরপার, কুয়ারপাড়সহ বিভিন্ন এলাকায় হাঁটুপানি জমে যায় বলে অভিযোগ স্থানীয় বাসিন্দাদের। 
এসব এলাকার বেশিরভাগ বাসাবাড়িতে পানি উঠে যায়। অনেককে খাটের ওপর প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র তুলে রক্ষা করতে দেখা যায়। ভুক্তভোগীরা জানান, বৃষ্টিতে বাসার ভেতর হাঁটু সমান পানি উঠে যায়। পূর্বপ্রস্তুতি না থাকায় অনেকেরই ফ্রিজসহ আসবাবপত্র পানিতে নিমজ্জিত হয়। এতে করে আবারো ক্ষতির সম্মুখীন হতে হয়েছে তাদের।

অপরদিকে, বৃষ্টিপাত, বন্যা, খরাসহ প্রাকৃতিক দুর্যোগ মোকাবেলায় নগরবাসীকে ধৈর্য্য ও সাহসের সাথে মোকাবিলা করার আহবান জানিয়েছেন সিটি মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী। জলাবদ্ধতা ও আগাম সতর্কতামূলক ব্যবস্থা গ্রহণের লক্ষ্যে গতকাল রোববার সন্ধ্যায় নগরভবনে আয়োজিত মতবিনিময় সভায় মেয়র এই আহ্বান জানান।

এদিকে, প্রকৃতির বিরূপ আচরণে নাকাল সিলেটসহ দেশের বিভিন্ন অঞ্চল। সপ্তাহখানেকেরও বেশী সময় ধরে চলা তাপপ্রবাহে জনজীবন ওষ্ঠাগত। এরই মাঝে সিলেটে গত তিন/চারদিন ধরে প্রায় প্রতি রাতেই দমকা হাওয়াসহ বজ্রবৃষ্টি অব্যাহত আছে। কিন্তু এই বৃষ্টিতেও কমছে না তাপমাত্রা। আর বৃষ্টিপাত শুরু হলেই থাকছে না বিদ্যুত। ভ্যাপসা গরমে লোডশেডিংয়ের সাথে নগরবাসীকে পোহাতে হচ্ছে জলাবদ্ধতার দুর্ভোগ।

এদিকে, প্রায় প্রতিরাতের মতো গতকাল রোববার রাত ৯টা থেকে সিলেটে শুরু হয় বৃষ্টি। এই বৃষ্টিতে গরমের তীব্রতা থেকে সাময়িক মুক্তি মিললেও স্বস্তি ফিরছে না সহসাই। বৃষ্টি থামার পরেই শুরু হয় ভ্যাপসা গরম। আর এই গরমের তীব্রতার সাথে যোগ হয় বিদ্যুতের লোডশেডিং।

সিলেট আবহাওয়া অফিসের তথ্যমতে, গতকাল রোববার সিলেটে সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয় ৩৫ দশমিক ২ ডিগ্রী সেলসিয়াস। গতকাল রোববার রাতেও সিলেটে বৃষ্টিপাত অব্যাহত ছিল।

আবহাওয়া অধিদপ্তর বলছে, সিলেটসহ দেশের বিভিন্ন জেলার উপর দিয়ে বয়ে যাওয়া মাঝারি থেকে মৃদু তাপপ্রবাহ আগামীকাল মঙ্গলবার ও পরদিন বুধবারও অব্যাহত থাকতে পারে। বুধবারের পর থেকে সারাদেশে তাপমাত্রা কমতে পারে। সে সময় বৃষ্টিপাতের প্রবণতাও বাড়তে পারে। সূত্র-দৈনিক সিলেটে ডাক