দোয়ারাবাজারে আড়াই বছরেও বাস্তবায়ন হয়নি নদী ভাঙন প্রতিরোধে উন্নয়ন প্রকল্পের কাজ

দোয়ারাবাজারে আড়াই বছরেও বাস্তবায়ন হয়নি নদী ভাঙন প্রতিরোধে উন্নয়ন প্রকল্পের কাজ

রয়েল ভিউ ডেস্ক:
দোয়ারাবাজারে সুরমা নদীর ঢেউয়ে ভাঙছে সুরমা পাড়ের বসত ভিটে ও ছাতক-দোয়ারাবাজারের যোগাযোগের একমাত্র সড়ক। গত আড়াই বছরেও বাস্তবায়ন হয়নি প্রায় ৮৩ কোটি টাকার নদী ভাঙন প্রতিরোধে উন্নয়ন প্রকল্পের কাজ। পানি উন্নয়ন বোর্ডের ধীরগতি নীতি এবং সংশ্লিষ্ট ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের উদাসীনতার কারণে গত আড়াই বছরে ভাঙনরোধে তৈরি জিও ব্যাগ ও ব্লক বসাতে পারেনি সংশ্লিষ্ট ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান। কাজ চলাকালেও প্রায় অর্ধশতাধিক বাড়িঘর, দোকানপাট, মসজিদ, মাদ্রাসা নদীগর্ভে বিলীন হয়েছে। নদী ভাঙনের ফলে বহু মানুষ ভিটেহীন হয়েছে, আশ্রয় নিয়েছেন সরকারি সড়কের পাশে। অন্যদিকে ভাঙন ঠেকাতে জলের মত টাকা খরচ হয়েছে সরকারি তহবিল থেকে। বর্তমানে নদী ভাঙন প্রতিরোধে নয়টি প্রকল্প চলমান আছে, বরাদ্দ ৮৩ কোটি টাকা। কিন্তু গতি নেই কাজে। ঠিকাদাররা প্রকল্প মেয়াদ ২০২৩ সনের কথা বলছেন। কিন্তু স্থানীয় লোকজন বলছেন, এখানে একদিন ব্লক বানানোর কাজ হলে তিন দিন বন্ধ থাকে। কাজ শেষ কবে হবে বলা কঠিন।

সরেজমিন দেখা গেছে, উপজেলা সদরের মাঝেরগাঁও, মংলারগাঁও, মুরাদপুর, মাছিমপুর (পূর্ব ও পশ্চিম), উপজেলা সদরসহ বিস্তীর্ণ এলাকা গত তিন দশক ধরে ভাঙছে। ২০১৯ সালে নদী ভাঙন প্রতিরোধে ৮৩ কোটি টাকার উন্নয়ন প্রকল্পের কাজ শুরু হলেও আজোও কাজের কোন বাস্তবায়ন হয়নি। কাজের ধীরগতির কারণে সময় মতো জিও ব্যাগ ও ব্লক না বসানোর কারণে এবার অব্যাহত বর্ষণে নদীর পানি বৃদ্ধি পাওয়ার সাথে সাথে ব্যাপক ভাঙন শুরু হয়েছে। নতুন করে কয়েকটি বসতভিটা নদী গর্ভে চলে গেছে। পানি বাড়ার সাথে সাথে ছাতক-দোয়ারাবাজার সীমানায় নৈনগাঁও গ্রামের শেষ অংশের সড়কের ভাঙন বাড়ছে। নদীগর্ভে চলে যাচ্ছে ছাতক-দোয়ারাবাজারের যোগাযোগের একমাত্র সড়কটি।

মাঝেরগাঁও গ্রামের বীর মুক্তিযোদ্ধা নুরুল ইসলাম বলেন, প্রতিদিনই ভাঙছে বসতভিটা। নদী ভাঙনের ভয়ে রাতে ঘুমাতে পারি না। উন্নয়ন কাজ তিন বছর ধরেই চলছে। কাজের এরকম অবস্থার জন্য দায়ী পানি উন্নয়ন বোর্ডের সংশ্লিষ্টদের উদাসীনতা। তাদের ভাঙন আটকানির চাইতে লুটপাটের ধান্দা বেশি। গত তিন বছরে জিও ব্যাগ ও ব্লক তৈরি করা হলেও তা কাজে লাগানো হয়নি এখন পর্যন্ত। এখন পানির নীচে এগুলো বিনষ্ট হচ্ছে। অন্যদিকে ভাঙনের কবলে নিঃস্ব হচ্ছে মানুষ। আসলে আমাদের দেখার কেউ নেই। গত বছর আমার একটি বাড়ি নদীগর্ভে চলে যাওয়ার পর পানি উন্নয়ন বোর্ডের লোকজন জানিয়েছিলেন, জরুরি ভিত্তিতে জিও ব্যাগ ফেলার কাজ হবে। গত বছর কিছুই করা হয়নি ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানের পক্ষ থেকে।
একই গ্রামের নুরউদ্দিন বলেন, ভাঙনে আমাদের বসতভিটা ইতোমধ্যে নদী গর্ভে চলে গেছে। শেষমেশ যেখানে মাথাগোঁজার ঠাঁই করেছিলাম সেটিও হুমকির মুখে। আমাদের আর যাওয়ার জায়গা নেই। ভাঙনরোধে তিন বছর পূর্বে থেকে কাজ শুরু হলেও আজও তা শেষ হয়নি।

মংলারগাঁও গ্রামের রুবি রানী দাস বলেন, নদী ভাঙনে বসতভিটে চলে গেলে পরিবার নিয়ে এখন একটি ভাড়াটে বাসায় বসবাস করছি। আমার বাবা মারা যাবার পর পরিবার নিয়া খুব কষ্টে দিন যাপন করছি। আমাদের দেখার কেউ নেই।

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ফারজানা প্রিয়াংকা বলেন, পানি উন্নয়ন বোর্ডের সংশ্লিষ্টদের সাথে এ ব্যাপারে কথা বলে দেখি কি করা যায়। ভাঙ্গন রোধে দ্রুত পদক্ষেপ নিতে বলে দিচ্ছি।
পানি উন্নয়ন বোর্ডের শাখা কর্মকর্তা আবু সায়েম সাফিউল ইসলাম বলেন, কাজের মেয়াদ আগামী ২৩ সাল পর্যন্ত তবে এ বিষয়ে উপ-বিভাগীয় প্রকৌশলী সমশের আলী মন্টু স্যার বলতে পারবেন।

উপবিভাগীয় প্রকৌশলী সমশের আলী মন্টু বলেন, প্রকল্পের কাজ চলমান। বন্যার পানিতে তলিয়ে যাওয়া জিও ব্যাগ বিনষ্ট হয়ে গেলে তা কাউন্টে আসবে না। ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান প্রয়োজনে নতুন করে কাজ করবে। গত বছর বন্যার সময় জিও ব্যাগ ফেলার জন্য তাগিদ দেয়া হলেও ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান জিও ব্যাগের জন্য বালু পায়নি, এরজন্য গত বছর জিও ব্যাগ ফেলা হয়নি। এবছর জিওব্যাগ ফেলার কথা ছিল, বালু ভর্তি ব্যাগগুলো পানির নিচে চলে যাওয়ায় কাজে দেরি হচ্ছে।