‘ধান ভাইস্সা যাওয়ার কষ্ট কিলাখান সহ্য করতাম’

‘ধান ভাইস্সা যাওয়ার কষ্ট কিলাখান সহ্য করতাম’

রয়েল ভিউ ডেস্ক :
সুনামগঞ্জের হালি হাওরের আহসানপুরের বাঁধ ভেঙে তলিয়ে যাচ্ছে কৃষকের পাকা, কাটা ও মাড়াইকরা ধান, ডুবছে খড়ও। সোমবার রাত ১০ টায় আহসানপুরের বাঁধ ভেঙে যায়। প্রবল বেগে বৌলাই নদীর পানি হাওরে ঢুকতে থাকলে বাঁধের পাশের খলায় থাকা কৃষকরা হতভম্ব হয়ে পড়েন। কেউ কেউ অসহায় হয়ে চিৎকার শুরু করেন। কিছুক্ষণের মধ্যেই কপালপুড়ে খলায় থাকা কৃষকেদের। তাদের ধান— খড় সবই ভাসিয়ে নিয়ে যায়। সকালে হাওরের বেশির ভাগ অংশে পানি চলে আসে। এই হাওরে জেলার জামালগঞ্জ ও তাহিরপুর উপজেলার কৃষদের জমি রয়েছে। হাওরপাড়ের কৃষকরা জানিয়েছেন, ৭০ ভাগ জমির ধান কাটা শেষ হলেও বেশিরভাগ কাটা ও মাড়াই করা ধান খেতেই রয়ে গেছে। 

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা বিশ্বজিত দেব’এর দাবি হাওরের ৯০ ভাগ ধান কাটা শেষ। এখন ডুবতে ডুবতে আরও কিছু ধান কাটা হবে।

ভাঙা বাঁধের পাশে জমি ও ধানের খলা (ধান মাড়াই, রাখা ও রাতে থাকার স্থান) রয়েছে হাওরপাড়ের আহসানপুর, মদনাকান্দি, দুর্গপুর, মামদপুর ও হরিনাকান্দির কৃষকদের। এসব গ্রামের অনেক কৃষকেরই মাড়াই করা ধান ভেসে গেছে প্রবল স্রোত। ডুবে যাওয়া কিছু ধান কেটে আনারও চেষ্টা করছিলেন কৃষকেরা।

আহসানপুরের কৃষক মুহিবুর রহমান বললেন, ‘পাঁচ হাল (১২ একর) খেত করছিলাম, ১০০ মণ ধান ঘরও নিতাম পারছি, ২৫০ মণের মতো ধান খলায় রাইক্কা দুইদিন ধইরা হুকাইরাম, রাইত বাঁধ ভাইঙ্গা চোখের সামনে ধান ভাসাইয়া নিচে, অখন পানির নীচের ধান তুলতাম চেষ্টা কররাম।’ বললেন,‘হুকনা ধান ভাইস্সা যাওয়ার কষ্ট কিলাখান সহ্য করতাম’। এই কৃষক জানালেন, হাওরে ৭০ ভাগ ধান কাটা হয়েছে। কাটা, মাড়াই করা ও জমিতে থাকা পাকা ধান এবং খড় নিয়ে বিপাকে পড়েছেন হাজারো কৃষক।

মুহিবুর রহমানের পাশে দাঁড়ানো একই গ্রামের কৃষক সেলিম মিয়া বললেন, ৩৬ কেয়ার (১২ একর) জমির ধানই কেটে ফেলেছিলাম। কালকে (সোমবার) থাকি মেশিনে মাড়াই শুরু করছি, একসাথে হুকায়রামও ধান, অখন সবতাই ডুবি গেছে, কিছু ধান ভাসাইয়া লইয়া গেছেগি। খেত থাকি নিলে ইলাখান কষ্ট লাগলোনানে, বুঝা গেছে পকেট থাকি টাইন্না টেকাটা নিছে’।

হাওরে থাকা একাধিক কৃষক জানালেন, দুইদিন হয় বাঁধে বুরুঙ্গা দিয়ে পানি ঢুকছে, প্রকল্প বাস্তবায়ন কমিটি’র (১৭ নম্বর পিআইসি) কোন লোকজনকে বাঁধে দেখেন নি তারা।

স্থানীয় বেহেলী ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান সুব্রত সামন্ত তালুকদার বললেন, হালি হাওরে জামালগঞ্জের বেহেলী ইউনিয়ন, জামালগঞ্জ উত্তর ও তাহিরপুর উপজেলার দক্ষিণ শ্রীপুর ইউনিয়নের কৃষকদের জমি রয়েছে। বাঁধ জামালগঞ্জের আহসানপুর গ্রামের পুরাতন ক্লিনিকের পাশ দিয়ে ভেঙেছে। ২০—২২ দিন ধরেই হাওরেই থাকছি, বাঁধে বাঁধে পাহাড়া দেবার কাজে আমি নিজে থেকে করেছি। সোমবারেও এই বাঁধের (আহসানপুর বাঁধ) একটি বুরুঙ্গা বন্ধ করেছি। সোমবার বিকাল ৫ টায় সাঈদুল নামের এক কৃষক ফোন দিয়ে জানান, বাঁধের অবস্থা ভালো নয়, বুরুঙ্গা দিয়ে আগের দিন স্বচ্ছ পানি গেছে, কাল বিকাল থেকে না—কি গোলা পানি যাচ্ছিল, গোলা পানি ছুঁইছে দেখে ওই কৃষক উৎকণ্ঠিত হয়ে ফোন দেন। আমি ইউপি সদস্য ইউসুফ মিয়াকে পাঠাই, তিনি এসে দেখেছেন বাঁধ ভেঙে গেছে।

পিআইসি’র বিরুদ্ধে স্থানীয় কৃষকদের অভিযোগ জানানোর বিষয়ে তিনি বললেন, কৃষকরা তার কাছে পিআইসি’র লোকজনের গাফিলতির কথা জানিয়েছেন। সোমবার পানি ছুঁইয়ে যখন হাওরে ঢুকছিল, তখনো পিআইসির কেউ ছিল না।

মঙ্গলবার সকাল থেকে বাঁধের পিআইসি সভাপতি মুহিবুর রহমানের ফোন (০১৭৪০০২৪৪১৬) বন্ধ ছিল। পানি উন্নয়ন বোর্ডের পিআইসি তালিকায় মুহিবুর রহমানের গ্রামের বাড়ি কোথায় উল্লেখ না থাকায় অন্য কোনভাবেও ওই পিআইসি সভাপতি বা তার আত্মীয় স্বজনের কাউকে পাওয়ার সুযোগ ছিল না, এজন্য কথা বলার চেষ্টাও করা যায় নি।

জামালগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা বিশ্বজিত দেব দাবি করলেন, হালি হাওরে ৯০ ভাগ ধান কাটা শেষ। পাঁচ হাজার ২০০ হেক্টর জমি আছে। এরমধ্যে চার হাজার ৭০০ হেক্টর কাটা হয়েছে। পানি ঢুকতে ঢুকতে বাকি ৫০০ হেক্টর ধানের কিছু ধান কেটে আনতে পারবেন কৃষকরা। একই ধরণের মন্তব্য করলেন জেলা কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগের উপ—পরিচালক বিমল চন্দ্র সোম।