নগরীর জলবদ্ধতা নিয়ে যা বললেন মেয়র আরিফ

নগরীর জলবদ্ধতা নিয়ে যা বললেন মেয়র আরিফ

রয়েল ভিউ ডেস্ক:
শনিবার মাত্র এক ঘন্টার বৃষ্টিতে তলিয়ে যায় সিলেট নগরের বেশিরভাগ এলাকায়। বাসাবাড়ি ও দোকানপাটে ঢুকে পরে পানি। অল্প সময়ের বৃষ্টিতে এমন জলবদ্ধতার জন্য সিলেট সিটি করপোরেশনকে (সিসিক) দায়ী করছেন নগরবাসী।

এনিয়ে সমালোচনার মুখে মঙ্গলবার সংবাদ সম্মেলনে আসেন সিলেট সিটি মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী। সংবাদ সম্মেলনে চার কারণে ভয়াবহ জলবাদ্ধতা সৃষ্টি হয়েছে বলে জানান।

মেয়রের ভাষ্য অনুযায়ী জলাবদ্ধতার কারণগুলো হলো- অল্প সময়ে অতিবৃষ্টি, নগরবাসীর যত্রতত্র আর্বজনা ফেলা, ঢলে টিলা ধসে ছড়া ও ড্রেন ভরাট হয়ে যাওয়া ও সময়মতো ড্রেন-ছড়া পরিষ্কার না করা।

 আগামীতে এমন জলাবদ্ধতা নিরসনে স্ট্রাইকিং টিম গঠনের কথাও জানিয়েছেন মেয়র।

মঙ্গলবার দুপুরে নগরভনে এ সংবাদ সম্মেলন করেন মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী।

সংবাদ সম্মেলনে মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী বলেন, ‘গত তিনদিন আগে হঠাৎ করে প্রবল বর্ষণের কারণে সিলেট নগরীর প্রায় সব এলাকা নিমজ্জিত হয়। যে কারণে আমাদের অনেকের বাড়িঘর, ব্যবসা প্রতিষ্ঠান নিমজ্জিত হয়। জলবায়ু পরিবর্তন বিশ্বব্যাপী একটি সমস্যা। আবহাওয়ার বিরূপ কারণে প্রকটভাবে পরিলক্ষিত হচ্ছে এই সমস্যা।’

তিনি বলেন, ‘গত শনিবার দিনে অস্বাভাবিক তাপদাহের পর রাতে অল্প সময়ে রেকর্ড পরিমাণ বৃষ্টির কারণে আকস্মিক দুর্ভোগে পড়তে হয়েছে নগরবাসীকে। সেই দুর্ভোগের শিকার আমি নিজেও। যদিও আমার বাসা নগরীর মধ্যভাগে উঁচু এলাকায়। শনিবার রাতে ১১টা ২ মিনিট থেকে রাত ১২টা পর্যন্ত ৫৮ মিনিটে ৭০ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়। ওইদিন মোট ৬ ঘন্টায় ১৬৩ মিলিমিটার বৃষ্টি হয়। যা সাম্প্রতিক সময়ে সিলেটে কম সময়ে বেশি বৃষ্টির রেকর্ড। এটিকে অতিপ্রাকৃতিক বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।’

আরিফ বলেন, ‘জলাবদ্ধতার ক্ষেত্রে আমাদের কিছু সমস্যা আছে, তা স্বীকার করতে আমার কোনো অসুবিধা নাই। এবারে বর্ষা শুরু হওয়ার আগেই বৃষ্টিপাত শুরু হয়ে গেছে। আমাদের ধারণা ছিল, বর্ষার সময় বৃষ্টি শুরু হবে। বঙ্গবীর রোডে যে জলাবদ্ধতা, তা আমাদের উন্নয়নকাজ চলাকালীন আগাম বৃষ্টি চলে আসায় সৃষ্টি হয়েছে। এবারের বন্যায় দলদলি বাগানের টিলা ধসেছে। যার ফলে পলি এসে আমাদের ড্রেন ভরে গেছে। আমাদের যে ছড়া-খাল বা ড্রেনের গভীরতা ছিল, একটানা বর্ষা মৌসুমে আমরা এগুলোতে কাজ করতে পারিনি। কারণ, বন্যা ছিল, বৃষ্টি ছিল।’

তিনি বলেন, ‘আমাদের নাগরিকদের একটু সচেতনতার অভাব আছে। বাড়িতে যতো আবর্জনা আছে, কাপড় থেকে শুরু করে লেপ-তোষক সবই ড্রেনে ছেড়ে দিয়েছেন। সবমিলিয়ে ড্রেন বা ছড়ার যে নাব্যতা সেটা লোপ পেয়েছে। তারপরে আমাদের রাস্তাঘাট পরিষ্কার করি রাত ১২টার পরে। সেদিন যে বৃষ্টি হলো, রাত ১১টা থেকে। আমাদের কর্মীরা তখন কাজ শুরু করেনি। তখন পথচারীরা বা ব্যবসায়ী ভাইয়েরা যেসব পলিথিন-টলিথিন রাস্তায় ফেলেছিলেন, সব গিয়ে ড্রেনের ছিদ্রগুলো ব্লক করে দেয়। পানি তখন কাটতে (নামতে) পারেনি। একদিকে বেশি বৃষ্টি হয়েছে, অন্যদিকে ব্লকের কারণে পানি ড্রেন দিয়ে নামতে পারেনি। জলাবদ্ধতা হওয়ার এটা অন্যতম কারণ।’

আরিফ আরও বলেন, ‘বন্যার পরপরই কোরবানির ঈদ চলে এলো। ফলে কোরবানির বর্জ্য অপসারণে আমরা ব্যস্ত হয়ে পড়ি। আমাদের দুর্ভাগ্য, যদি পয়েন্টে পয়েন্টে বা আমাদের ড্রেনগুলোতে যে ময়লা জমছিল, সেগুলো যদি আমরা পরিষ্কার করে ফেলতাম, তাহলে শহরের অনেক জায়গায় পানি ওঠতো না বলে বিশ্বাস। আমরা আসলে এতো বেশি বৃষ্টি হবে, এটা চিন্তা করিনি।’

আগামীতে জলাবদ্ধতা রোধে পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে জানিয়ে মেয়র বলেন, ‘পরিস্থিতি পর্যালোচনায় আমরা তাৎক্ষণিক সচেষ্ট হই। আবহাওয়া অফিসের আগাম সতর্কবার্তায় এই অতিপ্রাকৃতিক দুযোগ মোকাবেলায় সতর্কতামূলক ব্যবস্থা ও নাগরিকদের সচেতনতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে সংশ্লিষ্টদের সাথে মতবিনিময় করেছি, বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ নিয়েছি। বিশ্বব্যাপী জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে এমন ঘটনা আরও ঘটতে পারে, সেদিক বিবেচনায় আমরা সিসিকে জরুরি সভার আয়োজন করেছি।

তিনি বলেন, দিন কিংবা রাত, যেকোনো সময় অতিবৃষ্টি শুরু হলে আমাদের ৮টি স্ট্রাইকিং টিম পরিচ্ছন্নতা কাজের জন্য প্রস্তুত রয়েছে। আমিসহ সকল কাউন্সিলর, কর্মকর্তা, কর্মচারীগণ মাঠে থাকবো।