নানা কর্মসূচির মধ্যদিয়ে সিলেট ওসমানী স্মৃতি জাদুঘরে জাতীয় শোক দিবস পালিত

নানা কর্মসূচির মধ্যদিয়ে সিলেট ওসমানী স্মৃতি জাদুঘরে জাতীয় শোক দিবস পালিত

রয়েল ভিউ ডেস্ক:
সিলেট জেলা আইনজীবি সমিতির সাবেক সাধারণ সম্পাদক ও সিলেট বিভাগীয় দ্রুত বিচার ট্রাইবুন্যাল আদালতের স্পোশার পাবলিক প্রসিকিউটর অ্যাডভোকেট সরওয়ার আহমদ চৌধুরী আবদাল বলেছেন, ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট ভোর রাতে সেনাবাহিনীর কিছুসংখ্যক বিপথগামী সদস্য ধানমন্ডির বাসভবনে বঙ্গবন্ধুকে সপরিবারে হত্যা করে। ঘাতকরা শুধু বঙ্গবন্ধুকেই হত্যা করেনি, তাদের হাতে একে একে প্রাণ হারিয়েছেন বঙ্গবন্ধুর সহধর্মিনী বঙ্গমাতা বেগম ফজিলাতুন নেছা মুজিব , বঙ্গবন্ধুর সন্তান শেখ কামাল, শেখ জামাল ও শিশু শেখ রাসেলসহ পুত্রবধু সুলতানা কামাল ও রোজি জামাল। পৃথিবীর এই জঘন্যতম হত্যাকান্ড থেকে বাঁচতে পারেননি বঙ্গবন্ধুর অনুজ শেখ নাসের, ভগ্নিপতি আবদুর রব সেরনিয়াবাত এবং তার ছেলে আরিফ ও সুকান্তবাবু, মেয়ে বেবি, বঙ্গবন্ধুর ভাগ্নে মুক্তিযুদ্ধের সংগঠক শেখ ফজলুল হক মণি, তার অন্তঃস্বত্ত্বা স্ত্রী আরজু মনি এবং আবদুল নাঈম খান রিন্টু ও কর্নেল জামিলসহ পরিবারের ১৬ জন সদস্য ও ঘনিষ্ঠজন। এ সময় বঙ্গবন্ধুর দু’কন্যা শেখ হাসিনা ও শেখ রেহানা বিদেশে থাকায় প্রাণে রক্ষা পান।

মূলত, ‘৭৫ এর ১৫ আগস্ট থেকেই বাংলাদেশে এক বিপরীত ধারার যাত্রা শুরু হয়। বেসামরিক সরকারকে উৎখাত করে সামরিক শাসনের অনাচারি ইতিহাস রচিত হতে থাকে। 

সপরিবারে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুকে হত্যার পর গোটা বিশ্বে নেমে আসে তীব্র শোকের ছায়া এবং ছড়িয়ে পড়ে ঘৃণার বিষবাষ্প। বঙ্গবন্ধুকে হত্যার পর নোবেল জয়ী পশ্চিম জার্মানীর নেতা উইলি ব্রানডিট বলেন, যে বাঙালি শেখ মুজিবকে হত্যা করতে পারে তারা যে কোন জঘন্য কাজ করতে পারে।

বাঙালি জাতির স্বপ্নদ্রষ্টা শেখ মুজিবকে হত্যার মধ্য দিয়ে বাঙালি জাতি বিশ্বের মানুষের কাছে নিজেদের আত্মঘাতী চরিত্রই তুলে ধরেছে। কারণ, তাঁকে ছাড়া বাংলাদেশের বাস্তব কোন অস্তিত্ব নেই। 
বঙ্গবন্ধুকে হত্যার পর ১৯৭৫ সালের ২৬ সেপ্টেম্বর স্বঘোষিত প্রেসিডেন্ট খন্দকার মোশতাক আহমেদ বিচারের হাত থেকে খুনীদের রক্ষা করতে ইনডেমনিটি অর্ডিন্যান্স জারি করে। পরবর্তীতে জিয়াউর রহমান ১৯৭৯ সালে ইনডেমনিটি অর্ডিন্যান্সকে আইন হিসেবে অনুমোদন করে।
জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের কন্যা শেখ হাসিনার নেতৃত্বে আওয়ামী লীগ সুদীর্ঘ একুশ বছর পর ক্ষমতায় এলে ১৯৯৬ সালের ১৪ আগস্ট বঙ্গবন্ধু হত্যা মামলার তিন প্রধান আসামী বরখাস্ত লে. কর্নেল সৈয়দ ফারুক রহমান, সুলতান শাহরিয়ার রশিদ খান ও সাবেক প্রতিমন্ত্রী তাহের উদ্দিন ঠাকুরকে গ্রেফতার করা হয়।
 একই বছরের ২ অক্টোবর বঙ্গবন্ধুর একান্ত সহকারি (পিএ) এ এফ এম মোহিতুল ইসলাম পঁচাত্তরের ১৫ আগস্ট সংঘটিত নারকীয় হত্যাকান্ডের ঘটনায় থানায় একটি এফআইআর করেন।
 ১৯৯৬ সালের ১৪ নভেম্বর খুনীদের বিচারের হাতে ন্যস্ত করতে পার্লামেন্টে ইনডেমনিটি আইন বাতিল করা হয়। ১৯৯৭ সালের ১৫ জানুয়ারি সিআইডি এই মামলায় ২০ জনকে অভিযুক্ত করে মুখ্য মহানগর হাকিমের আদালতে চার্জশীট দাখিল করে এবং একই বছরের ১২ মার্চ ছয় আসামীর উপস্থিতিতে আদালতে বিচার শুরু হয়।
১৯৯৭ সালের ১৯ জুন পর্যন্ত বিচারক বিব্রত হওয়াসহ স্বাধীনতা-বিরোধী চক্রের নানা বাধার কারণে আটবার বিচার কার্যক্রম স্থগিত হয়ে যায়। এভাবে দীর্ঘ প্রক্রিয়া শেষে ১৯৯৮ সালের ৮ নভেম্বর মামলার রায়ে বিচারক কাজী গোলাম রসুল ১৫ জন সাবেক সেনা কর্মকর্তাকে মৃত্যুদ- প্রদান করেন। অন্যদিকে, ২০০০ সালের ১৪ ডিসেম্বর হাইকোর্ট বেঞ্চ ২৪ দিনের শুনানি শেষে বিভক্ত রায় প্রদান করে। বিচারক এম রুহুল আমিন অভিযুক্ত ১৫ আসামীর মধ্যে ১০ জনের মৃত্যুদ-াদেশ বজায় রাখেন। কিন্তু অপর বিচারক এ বি এম খায়রুল হক অভিযুক্ত ১৫ জনকেই সর্বোচ্চ শাস্তি মৃত্যুদ- প্রদান করেন।
পরবর্তীতে ২০০১ সালের অক্টোবরের সংসদ নির্বাচনে বিএনপি-জামায়াত জোট ক্ষমতায় এলে বিচার কাজ বন্ধ থাকে। দীর্ঘ ছয় বছর পর ২০০৭ সালের ২৩ আগস্ট রাষ্ট্রপক্ষের আইনমন্ত্রী আনিসুল হক সুুপ্রিম কোর্টে সংক্ষিপ্ত বিবৃতি প্রদান করেন এবং ২৩ সেপ্টেম্বর আপিল বিভাগের তিন সদস্যের একটি বেঞ্চ ২৭ দিনের শুনানি শেষে ৫ আসামীকে নিয়মিত আপিল করার অনুমতিদানের লিভ টু আপিল মঞ্জুর করেন।
 ২০০৯ সালের ১২ নভেম্বর-২৯ দিনের শুনানির পর চূড়ান্ত আপিল শুনানি শেষ হয় এবং আদালত ১৯ নভেম্বর রায়ের তারিখ নির্ধারণ করেন। ওইদিন (১৯ নভেম্বর) বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগের পাঁচ সদস্যের বেঞ্চে হাইকোর্টের দেয়া রায় বহাল রেখে মৃত্যুদ-প্রাপ্ত ৫ আসামীর দায়ের করা আপিল আবেদন খারিজ করা হয়। ২০১০ সালের ২৭ জানুয়ারি আপিলের রায়ের বিরুদ্ধে আসামীদের রিভিউ খারিজ হয়ে গেলে ২৮ জানুয়ারি ৫ আসামীর ফাঁসির রায় কার্যকর করে জাতিকে দায়মুক্ত করা হয়। 
গতকাল সোমবার বিকেলে স্বাধীনতার স্থপতি, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ৪৭তম শাহাদত বার্ষিকী ও জাতীয় শোক দিবস উপলক্ষে ওসমানী যাদুঘর সিলেট কর্তৃক আয়োজিত শিশু-কিশোরদের মধ্যে চিত্রান্কন প্রতিযোগিতা,পুরুষ্কার বিতরণ খতমে কোরআন আলোচনা সভা ও দোয়া মাহফিলের কর্মসূচিতে আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে এ কথা বলেন।
ওসমানী যাদু ঘরের সহকারি কিপার মো; জিযারত হোসেন খাঁন এর সভাপতিত্বে আলোচনা সভায় অনুষ্টানের শুরুতে কোরআন তেলাওয়াত করেন আনিস পাশা মুবিন। রুনা সুলতানার পরিচালনায়। অনুষ্টানে প্রধান অতিথির বক্তব্য রাখেন,সিলেট বিভাগীয় দ্রুত বিচার ট্রাইবুন্যাল আদালতের স্পোশার পাবলিক প্রসিকিউটর অ্যাডভোকেট সরওয়ার আহমদ চৌধুরী আবদাল ,বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন অ্যাডভোকেট সামসুল ইসলাম এডিশনাল পিপি জজ কোর্ট সিলেট,এম এ মতিন সিলেট ব্যুরো প্রধান দৈনিক খবর পত্র,মানবাধিকার নেতা ইউসুফ সেলু ও মুক্তিযোদ্বা উমেষ বৈদ্য প্রমুখ। দিন ব্যাপি অনুষ্টান শেষে এক বিশেষ দোয়া পরিচালনা করেন এম এ মতিন সাংবাদিক।
অনুস্টান শেষে বিজয়ীদের মধ্যে পুরুষ্কার বিতরণ করেন অতিথিরা।
(ক) বিভাগে-প্রথম পুরুষ্কার  লাভ করেন কিশোরি মোহন সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের দ্বিতীয়  শ্রেনীর ছাত্রী সুমাইয়া অক্তার রুজা,দ্বিতীয় পুরুষ্কার স্টুডেন্ট হোম স্কুলের কেজি-১ শ্রেনীর ছাত্রী ইসরাত জাহান তানহা,তৃতীয় হয়েছে বসন্ত মোমোরিয়েল স্কুলের ২য় শ্রেনীর ছাত্র এস এম বকতিযার হাসান আমিন।
(খ) বিভাগে - প্রথম পুরুস্কার লাভ করেন,সিলেট সরকারী অগ্রগামী বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের ৫ম শ্রেনীর ছাত্র মায়ামিন রহমান,দ্বিতীয় হয়েছেন সিলেট সরকারী পাইলট উচ্চ বিদ্যালয়ের ৫ম শ্রেনীর ছাত্র অনিন্দ্য পাল,তৃতীয় হয়েছেন ৪র্থ শ্রেনীর ছাত্র হিলসিটি একাডেমির সাদমান রহমান সিয়াম।
(গ) বিভাগে - প্রথম পুরুস্কার লাভ করেন,হযরত শাহজালাল উচ্চ বিদ্যালয়ের ৮ম শ্রেনীর ছাত্রী পারমিতা দাশ পৌষী, দ্বিতীয় হয়েছেন,সিলেট সরকারী অগ্রগামী উচ্চ বিদ্যালয় ও কলেজের ৭ম শ্রেনীর ছাত্রী বর্ণালী দাশ ঐশী,তৃতীয় হয়েছেন,দি এইডেড হাই স্কুলের ৬ষ্ঠ শ্রেনীর ছাত্রী প্রমিত বৈদ্য।
(ঘ) বিভাগে - প্রথম পুরুস্কার লাভ করেন,স্কলার্স হোম এর নবম শ্রেণীর ছাত্র সপ্তষি সাহা লস্কর,দ্বীতিয় হয়েছেন,কাজি জালাল উদ্দিন বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের দশম শ্রেণীর ছাত্রী হাবিবা আক্তার সুমাইয়া,তৃতীয় হয়েছেন সিলেট সরকারী অগ্রগামী বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের দশম শ্রেণীর ছাত্রী সাথী বেগম ফাতেমা।