পাথরের সাথে সংলাপ করা যায় না

পাথরের সাথে সংলাপ করা যায় না

মৌলভীবাজারে মেডিক্যাল কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয় হবে : পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান এমপি 

রয়েল ভিউ ডেস্ক : পরিকল্পনা মন্ত্রী এম এ মান্নান এমপি বলেছেন, ‘যারা কথা বলতে চায় তাদের সঙ্গে আলোচনা চলে, পাথরের সাথে আলোচনা হয় না। মতবিরোধ পৃথিবীর সকল দেশে থাকলেও তাদের (বিএনপির) মত অসভ্য আচরণ কোথাও হয় না।’ 
বুধবার সন্ধ্যায় সিলেটে বিএনপির সাথে সংলাপের সম্ভাবনা নিয়ে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে তিনি এ কথা বলেন। এ দিন বিকালে সিলেট সিটি কর্পোরেশনের (সিসিক) পক্ষ থেকে পরিকল্পনা মন্ত্রীকে সংবর্ধনা প্রদান করা হয়। এরপর সাংবাদিকদের সাথে কথা বলেন তিনি।

মন্ত্রী আরো বলেন, যারা হরতাল অবরোধ করছে, তারা উন্নয়ন চোখে দেখে না। উন্নয়ন বুঝে দেশের সাধারণ ও খেটে খাওয়া মানুষ। হরতাল অবরোধে দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধি পায়, উন্নয়ন ব্যাহত হয় এমনকি বিদেশীরা আস্থা হারায়। 
এর আগে সিসিক মেয়র আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরীর সভাপতিত্বে নগরভবন প্রাঙ্গণে অনুষ্ঠিত সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে সংবর্ধিত অতিথির বক্তব্যে পরিকল্পনামন্ত্রী বলেন, জাতির সামনে এখন পরীক্ষার সময়। আমাদের পথ বেছে নিতে হবে। উন্নত বিশ্বের মতো আত্মমর্যাদা রক্ষা করে আমরা চলতে পারবো কি না এখন তারই পরীক্ষা চলছে। ধর্মীয় রাজনীতির আড়ালে ও ক্ষমতার লোভে কিছু মানুষ ব্যক্তিগত প্রতিহিংসায়-যেসব অপতৎপরতা চালাচ্ছেন তা কতটা উচিৎ বা অনুচিৎ আপনাদেরকেই তা নির্ধারণ করতে হবে। 

মন্ত্রী বলেন, আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরী একজন সৎ ও যোগ্য মানুষ। তার হাত ধরে আমাদের এই আঞ্চলিক রাজধানী তথা আধ্যাত্মিক নগরীর উন্নয়ন বহুদূর এগিয়ে যাবে। সাবেক মেয়র আরিফুল হক চৌধুরীকে আমি এবং সাবেক অর্থমন্ত্রী মরহুম আবুল মাল আবদুল মুহিত সর্বোচ্চ সহযোগিতা করেছি। তার ধারাবাহিকতা অবশ্য বজায় থাকবে। দরিদ্র মানুষের উপকার হয়-এমন যে কোন প্রকল্প নিয়ে আমার কাছে গেলে আমি শেখ হাসিনার কেরানি হিসাবে সর্বোচ্চ সহযোগিতা করবো। আমি আপনাদের মানুষ, এটা আমার শহর। অবশ্যই আমি সিলেট সিটি কর্পোরেশনের উন্নয়নে আগের মতো ভবিষ্যতেও আর বেশী করে কাজ করবো।

পরিকল্পনামন্ত্রী আরও বলেন, শেখ হাসিনার উন্নয়ন পরিকল্পনায় দেশের খেটে খাওয়া, দরিদ্র তথা পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠী। শেখ হাসিনার সরকার উন্নয়ন পরিকল্পনায় ৮০ হাজার গ্রামকে স্থান দেয়া হয়েছে। তার অন্যতম প্রকল্প ‘গ্রাম হবে শহর’। শেখ হাসিনা গ্রামে গ্রামে বিদ্যুৎ পৌঁছে দিয়েছেন। তিনি গ্রামের দরিদ্র মানুষের স্বাস্থ্য সেবার জন্য কমিউনিটি ক্লিনিকের মাধ্যমে বিনামূল্যে চিকিৎসা এবং ওষুধ দিচ্ছেন। তার প্রেরণায় সুনামগঞ্জের হাওরে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় করতে পেরেছি, ৫শ’ শয্যার মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল, টেক্সটাইল ইন্সটিটিউট করেছি। আমরা বিশ্বম্ভরপুর থেকে নেত্রকোনা পর্যন্ত ৪ হাজার কোটি টাকা ব্যয়ে উড়াল সড়কের কাজ শুরু করেছি। শাল্লার মতো নি¤œাঞ্চল থেকে গাড়িতে করে সারা বছর ঢাকায় যাওয়ার ব্যবস্থা হচ্ছে। রানীগঞ্জ সেতু নির্মিত হওয়ায় সুনামগঞ্জের সাথে ঢাকার দূরত্ব ও যাতায়াতের সময় হ্রাস পেয়েছে। মন্ত্রী সিলেটের উন্নয়ন প্রসঙ্গে বলেন, সিলেটে একটি প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় হবে। ঢাকা-সিলেট ৬ লেনের কাজ শুরু হয়েছে। সিলেট-সুনামগঞ্জ সড়ক ৪ লেনে উন্নীত হবে। মৌলভীবাজারেও বিশ্ববিদ্যালয় ও মেডিকেল কলেজ স্থাপিত হবে। শেখ হাসিনার সরকার সারাদেশের সুষম উন্নয়ন চান বলে মন্তব্য করেন তিনি।

অনুষ্ঠানে সভাপতির বক্তব্যে মেয়র আনোয়ারুজ্জামান চৌধ্রুী বলেন, বৃহত্তর সিলেটের কৃতি সন্তান পরিকল্পনামন্ত্রী এমএ মান্নান। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে তিনি দেশকে নিয়ে উন্নয়নের মহাসড়কে এগিয়ে যাচ্ছেন। তিনি আমাদের অভিভাবক। সিলেটের উন্নয়নে তার সহযোগিতার হাত অবশ্যই আরও প্রসারিত হবে। এটা আমাদের বিশ্বাস। 

সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথির বক্তব্য রাখেন-সিলেট মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা মাসুক উদ্দিন আহমদ। অন্যান্যের মধ্যে বক্তব্য রাখেন আরটিএম আল কবির টেকনিক্যাল ইউনিভার্সিটির ভিসি প্রফেসর ড. আবু নাসের জাফর উল্লাহ, সিলেট জেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদ ইউনিটের সাবেক কমান্ডার সুব্রত চক্রবর্তী জুয়েল, সিলেট জেলা আওয়ামী লীগের সহ সভাপতি ও পাবলিক প্রসিকিউটর (পিপি) এডভোকেট নিজাম উদ্দিন, সিলেট প্রেসক্লাবের সভাপতি ইকবাল সিদ্দিকী, সিনিয়র সাংবাদিক হাসিনা বেগম চৌধুরী, সিলেট উইমেন্স চেম্বারের সভাপতি স্বর্ণলতা রায়। শুভেচ্ছা বক্তব্য রাখেন সিলেট সিটি কর্পোরেশনের ২৬নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর তৌফিক বকস লিপন। অনুষ্ঠানের শুরুতে কোরআন তেলাওয়াত করেন মাওলানা ময়নুল ইসলাম। গীতা পাঠ করেন সিসিক’র কর শাখার কর্মকর্তা জ্যোতিষ চক্রবর্তী। ত্রিপিঠক ও বাইবেল পাঠ করেন যথাক্রমে শ্রীমৎ মহানম ভিক্ষু ও রেভারেন্ড ফিলিপ সমাদ্দার। অনুষ্ঠান পরিচালনা করেন সম্মিলিত নাট্য পরিষদ সিলেটের সভাপতি রজত কান্তি গুপ্ত ও জান্নাতুল নাজনিন আশা।