পোল্যান্ডেও হামলা চালাতে পারে রাশিয়া

পোল্যান্ডেও হামলা চালাতে পারে রাশিয়া

রয়েল ভিউ ডেস্ক :
ইউক্রেনের প্রতিবেশি পোল্যান্ডের ঘাড়েও নিশ্বাস ফেলছে রাশিয়া। ফলে পোল্যান্ডেও ছড়িয়ে পড়ার আশঙ্কা করছেন অনেকে। মূলত দুটি কারণে এই আশঙ্কা করা হচ্ছে। একদিকে, পোল্যান্ডে ইউক্রেনীয় শরণার্থীদের সংখ্যা ক্রমান্বয়ে বাড়ছে। অন্যদিকে, পোল্যান্ড সীমান্তের কাছে ইউক্রেনের একটি সামরিক ঘাঁটি আক্রান্ত হয়েছে।

দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর ইউরোপের সবচেয়ে বড় এই শরণার্থী সংকটে প্রথম সাড়া দিয়েছে পোল্যান্ড। গত ২০ দিনের যুদ্ধে এখন পর্যন্ত প্রায় ১৭ লাখের বেশি ইউক্রেনীয়কে আশ্রয় দিয়েছে দেশটি।
 
সাংস্কৃতিক, ভাষাগত অথবা পারিবারিক বন্ধনের কারণে অনেক ইউক্রেনীয় পোল্যান্ডে যাওয়ার পর সেখানেই থেকে যাচ্ছেন। তবে কেউ কেউ পোল্যান্ড থেকে ইউরোপের অন্যান্য দেশেও পাড়ি জমিয়েছেন। গত দুই সপ্তাহে পোল্যান্ডের রাজধানী ওয়ারশতে জনসংখ্যা প্রায় ১৫ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে।

নিরাপত্তার দিক থেকে দেশটিতে বিপদের ঘণ্টাও বাজছে। চলতি সপ্তাহেই পোল্যান্ড সীমান্ত থেকে মাত্র ১৬ কিলোমিটার দূরের ইউক্রেনের ইয়াভরিভ সামরিক প্রশিক্ষণ কেন্দ্রে বোমা হামলা চালিয়েছে রাশিয়া।
 
গত কয়েক বছর ধরে পোল্যান্ড পশ্চিমাদের সতর্ক করে দিয়ে আসছে যে, রাশিয়া ইউরোপে ক্ষমতার ভারসাম্য আনার পরিকল্পনা করছে। তবে সেই সময় সতর্কবাদীদের সেই শঙ্কা উড়িয়ে দিয়েছেন পোল্যান্ডের নেতারা। কিন্তু সীমান্তের কাছে গোলযোগ তৈরি হওয়ায় সেই শঙ্কাই জোরাল হয়েছে।

সোমবার পোল্যান্ডের প্রধানমন্ত্রী মাতিউয়েজ মোরাউইকি বলেছেন, ইউক্রেনের সৈন্যদের পশ্চিমা সমর্থন দরকার এবং এই সহায়তা তাদের প্রাপ্য। তিনি বলেছেন, তারা কেবল নিজেদের স্বাধীনতার জন্যই লড়ছে না, বরং পূর্ব ইউরোপীয় প্রতিবেশিদের স্বাধীনতার জন্যও লড়ছে।

তিনি ইউক্রেনে রাশিয়ার আক্রমণকে প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের ভূ-রাজনৈতিক পরিকল্পনার একটি ‌অংশ বলে বর্ণনা করেছেন।

ইউক্রেনের সামরিক বাহিনীকে সহায়তার অংশ হিসাবে পশ্চিমারা যে অস্ত্র সরবরাহ করছে, তা পোল্যান্ড হয়েই দেশটিতে পৌঁছাচ্ছে। শনিবার ইউক্রেনে পশ্চিমের পাঠানো অস্ত্র ‘রাশিয়ার সামরিক বাহিনীর বৈধ লক্ষ্যবস্তু’ হতে পারে বলে ঘোষণা দিয়েছে মস্কো।

কিন্তু পোলিশ জনগণের বিশ্বাস, ক্রেমলিন তাদের দেশেও হামলা চালাতে পারে। ইউরোপীয় ইউনিয়নের সদস্য এবং আরও পরিষ্কারভাবে বলা যায়, ন্যাটোর সদস্য পোল্যান্ড এখন ঝুঁকিতে।

পশ্চিম সামরিক প্রতিরক্ষা জোট ন্যাটোর সনদে বলা হয়েছে, জোটের কোনো সদস্য দেশের ওপর হামলা হলে সেটি পুরো জোটের বিরুদ্ধে হামলা হিসাবে গণ্য হবে। তার মানে এই বিবাদ বিশ্বের দুই শীর্ষ পারমাণবিক শক্তি- রাশিয়া এবং যুক্তরাষ্ট্রের মাঝেও ছড়িয়ে পড়তে পারে এবং তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধ শুরু হতে পারে। কিন্তু পশ্চিমারা রাশিয়ার সঙ্গে এই সংঘাত এড়িয়ে চলতেই আগ্রহী। মস্কোর প্রত্যাশাও প্রায় একই। কেউই বিশ্বযুদ্ধের মতো ভয়ানক কিছু শুরু করতে চায় না।

ওয়ারশর মেয়র ও প্রভাবশালী রাজনীতিক রাফাল ত্রজাস্কোস্কি বিবিসিকে বলেছেন, তার দেশ আতঙ্কিত নয়। কিন্তু পোলিশ সীমান্তের একেবারে কাছে রাশিয়ার ক্ষেপণাস্ত্র হামলা এবং ইউক্রেনে রাশিয়ার সম্ভাব্য রাসায়নিক হামলা নিয়ে ন্যাটো আশঙ্কা প্রকাশ করার পর লোকজন এখন দেশের নিরাপত্তা নিয়ে প্রশ্ন তুলতে শুরু করেছে।

ওয়ারশর এই মেয়র বলেছেন, প্রেসিডেন্ট পুতিনের অন্যতম একটি লক্ষ্য হল পশ্চিমকে বিভক্ত এবং তারপর দুর্বল করে ফেলা। ত্রজাস্কোস্কির যুক্তি, পুতিন ভুয়া খবর, বিভ্রান্তিমূলক প্রচারণা অথবা শরণার্থী সংকটকে ব্যবহার করতে পেরে খুশি। তিনি বলেন, শরণার্থীর সংখ্যা যদি বাড়তে থাকে, তাহলে পোল্যান্ডের ব্যবস্থাপনা ভেঙে পড়বে। শরণার্থী সংকট নিয়ে জরুরিভিত্তিতে ইউরোপের কিছু করা দরকার বলেও জানিয়েছেন তিনি।