ফিলিস্তিনি -ইসরাইল ইস্যুতে মধ্যপ্রাচ্যের হিসাব-নিকাশ পাল্টে যাচ্ছে

ফিলিস্তিনি -ইসরাইল ইস্যুতে মধ্যপ্রাচ্যের হিসাব-নিকাশ পাল্টে যাচ্ছে

ইরান-সৌদি আরব, তুরস্ক, মালেশিয়া, পাকিস্তান ও ইন্দোনে ঐক্যবদ্ধ, রাশিয়া যাচ্ছে জাতিসংঘে

ফিলিস্তিনি -ইসরাইল ইস্যুতে এবার একজোট হতে যাচ্ছে ইরান-সৌদি আরব। অন্যদিকে তুরস্ক, মালেশিয়া, পাকিস্তান ও ইন্দোনেশিয়া তীব্র ভাষায় ইসরাইলের সমালোচনা করে ফিলিস্তিনিদের পক্ষে দাঁড়িয়েছে। চলমান এই যুদ্ধে বিশ্বের বেশ কয়েকটি পরাশক্তি ও ক্ষমতাধর রাষ্ট্র ফিলিস্তিনের পক্ষে দাঁড়িয়েছে। চীন যুদ্ধ বিরতীর আহ্বান জানিয়ে বিবৃতি দিয়েছে। বেশ কয়েকটি শক্তিধর দেশ দ্বিরাষ্ট্র নীতির মাধ্যমে সমাধানের কথা বলেছে। ফিলিস্তিনের পক্ষে দাঁড়িয়েছে চীন, রাশিয়া, উত্তর কোরিয়া, বেলারুশ, ভিয়েতনাম, তুরস্ক, মালয়েশিয়া, পাকিস্তান, ইন্দোনেশিয়া, সিরয়া, রাশিয়াসহ অনেক দেশ।

অন্যদিকে অবরুদ্ধ গাজা উপত্যকায় ইসরায়েলের হামলা বন্ধের দাবিতে যুক্তরাজ্যে রাজধানী লন্ডনসহ বিশ্বের প্রায় সব দেশে বিক্ষোভ মিছিল অনুষ্ঠিত হয়েছে। এসব বিক্ষোভ শান্তিপ্রিয় লাখ লাখ মানুষ অংশগ্রহণ করেন। এ সময় তারা ফিলিস্তিনি পতাকা ও বিভিন্ন প্ল্যাকার্ড হাতে নিয়ে ‘ফ্রি প্যালেস্টাইন’ স্লোগানে মুখর করে তোলেন।এ ছাড়া ইসরায়েলকে সহায়তা করায় তারা যুক্তরাজ্য ও যুক্তরাষ্ট্রের সমালোচনা করেছেন।

ফিলিস্তিন-ইসরায়েল সংঘাত নিয়ে আগামীকাল সোমবার জাতিসংঘ নিরাপত্তা কাউন্সিলে ভোটের আহ্বান করেছে রাশিয়া। যুদ্ধবিরতি, বেসামরিক নাগরিকদের ওপর সহিংসতা ও সন্ত্রাসবাদ সংশ্লিষ্ট সব ধরনের কাজের নিন্দা জানাতে একটি খসড়া প্রস্তাবের ওপর এই ভোটাভুটির ডাক দিয়েছে মস্কো। শনিবার (১৪ অক্টোবর) এক প্রতিবেদনে এসব তথ্য জানিয়েছে ব্রিটিশ বার্তা সংস্থা রয়টার্স।

জাতিসংঘে নিযুক্ত রাশিয়ার উপরাষ্ট্রদূত দিমিত্রি পলিয়ানস্কি বলেছেন, গত শুক্রবার জাতিসংঘের ১৫ সদস্যের এই পরিষদকে যে খসড়া প্রস্তাব দেওয়া হয় সেখানে কোনো পরিবর্তন আনা হয়নি। সোমবার বিকেল ৩টায় ভোট হতে পারে।

এক পৃষ্ঠার খসড়া প্রস্তাবে ইসরায়েলি জিম্মিদের মুক্তি এবং গাজায় মানবিক সহায়তা প্রদান ও প্রয়োজনে বেসামরিক নাগরিকদের নিরাপদে সরিয়ে নেওয়ারও আহ্বান জানানো হয়েছে। এতে ইসরায়েল ও ফিলিস্তিনের কথা বলা হলেও সরাসরি হামাসের নাম নেওয়া হয়নি।

ইসরায়েলে হামাসের নজিরবিহীন হামলার পর মধ্যপ্রাচ্যের পুরো রাজনীতি বদলে যাবে, এমনটা আগেই বলেছিলেন বিশ্লেষকরা। এবার দিন যত সামনে গড়াচ্ছে সেই পূর্বাভাসই যেন সত্য প্রমাণিত হচ্ছে। এরই মধ্যে পররাষ্ট্রনীতি নিয়ে নতুন করে হিসাব-নিকাশ কষতে বসেছেন সৌদি আরবের কর্মকর্তারা।

ইসরায়েল ও হামাসের যুদ্ধের জেরে যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যস্থতায় ইসরায়েলের সঙ্গে সম্পর্ক প্রতিষ্ঠার দীর্ঘদিনের উদ্যোগ স্থগিত করেছে সৌদি আরব। এরই মধ্যে বিষয়টি মার্কিন কর্মকর্তাদের জানিয়ে দিয়েছে সৌদি কর্মকর্তারা। এ বিষয়ের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট একটি সূত্রের বরাতে শনিবার এ তথ্য জানিয়েছে ফরাসি বার্তা সংস্থা এএফপি।

ইসরায়েলের সঙ্গে সম্পর্ক প্রতিষ্ঠার উদ্যোগ স্থগিত করলেও মধ্যপ্রাচ্যের আরেক প্রভাবশালী দেশ ইরানের সঙ্গে যোগাযোগ বাড়াচ্ছে সৌদি। তিন দিন আগে ইরানের সরকারি বার্তা সংস্থা ইরনা জানিয়েছিল, ফিলিস্তিন ইস্যুতে গত বুধবার (১১ অক্টোবর) প্রথমবাবের মতো ফোনালাপ করেছেন ইরানের প্রেসিডেন্ট ইব্রাহিম রাইসি ও সৌদি আরবের ক্রাউন প্রিন্স মোহাম্মদ বিন সালমান। চীনের মধ্যস্থতায় মধ্যপ্রাচ্যের এই দুই পরাশক্তির সম্পর্ক পুরোপুরি জোড়া লাগার পর গত বুধবারই তারা প্রথমবারের মতো আলাপ করেছেন। দুই দেশের নেতা টানা ৪৫ মিনিট ফোনে কথা বলেছেন।

গত ১১ অক্টোবর এক এক্সবার্তায় ইরানের প্রেসিডেন্টের রাজনৈতিকবিষয়ক ডেপুটি চিফ অব স্টাফ মোহাম্মদ জামশিদি বলেছেন, ইব্রাহিম রাইসি ও মোহাম্মদ বিন সালমান প্রথমবারের মতো ফোনে কথা বলেছেন। এ সময় দুই নেতা ফিলিস্তিনের বিরুদ্ধে যুদ্ধাপরাধ বন্ধ করার প্রয়োজনীয়তার বিষয়ে একমত হয়েছেন। একই সঙ্গে তারা ইসলামী ঐক্যের ওপর জোর দিয়েছেন। আলোচনায় তারা এ বিষয়ে ঐকমত্য পোষণ করেছেন যে, ফিলিস্তিনে হামলায় যুক্তরাষ্ট্রের সবুজ সংকেত এবং সেখানে ইসরায়েলের অপরাধ তাদের জন্যই ভয়াবহ নিরাপত্তাহীনতার কারণ হবে।

তবে গত ৭ অক্টোবর হামাসের হামলার আগে পরিস্থিতি মোটেও এমন ছিল না। যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যস্থতায় ইসরায়েলের সঙ্গে সৌদি আরবের শান্তিচুক্তি নিয়ে অনেক দূর এগিয়ে যাওয়ার কথা দুই দেশের কর্মকর্তারাই বলেছিলেন। বার্তা সংস্থা রয়টার্সের এক প্রতিবেদনে জানা যায়, তেলআবিবের সঙ্গে শান্তিচুক্তির বিনিময়ে সৌদির নিরাপত্তা নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের কাছে বড় আকারের নিশ্চয়তা চায় রিয়াদ। এমনকি এ কারণে ফিলিস্তিনের স্বাধীনতার দাবিও ছাড় দিতে রাজি সৌদি যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমান।

তবে শনিবার আরেক প্রতিবেদনে রয়টার্স জানিয়েছে, ফিলিস্তিনিদের পাশ কাটিয়ে কোনো চুক্তি করলে তা আরবদের ক্ষুব্ধ করতে পারে। ফলে পুরো অঞ্চলে বিক্ষোভ ছড়িয়ে পড়তে পারে।

সৌদি-ইসরায়েল চুক্তি আলোচনার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট এক কর্মকর্তা রয়টার্সকে বলেছেন, সৌদি ও ইসরায়েলের চুক্তি আলোচনা এখন আর সামনে আগাবে না। আর পরে আলোচনা শুরু হলেও ফিলিস্তিনিদের জন্য ইসরায়েলি ছাড়ের বিষয়টিকে অগ্রাধিকার দেবে সৌদি। এ থেকে বোঝা যায়, ফিলিস্তিন ইস্যু একেবারে বাদ দিয়ে দিচ্ছে না রিয়াদ।

এ ছাড়া ইসরায়েলে হামাসের হামলার ঘটনায় নিন্দা জানাতে যুক্তরাষ্ট্র সৌদি আরবকে চাপ দিলেও তা করতে অস্বীকৃতি জানান সৌদি পররাষ্ট্রমন্ত্রী প্রিন্স ফয়সাল বিন ফারহান।

ওয়াশিংটনভিত্তিক মিডলইস্ট ইনস্টিটিউটের ইরানবিষয়ক কর্মসূচির পরিচালক অ্যালেক্স ভাটাংকা বলেছেন, গত সপ্তাহে হামাসের হামলার পর মধ্যপ্রাচ্য নিয়ে সৌদি ও ইরানের নীতি পরিবর্তন হয়েছে। সৌদি আরব এখনো মধ্যপ্রাচ্যকে বিশ্বস্ত মনে করে। আঞ্চলিক সহযোগিতা ও অর্থনৈতিক উন্নয়নের জন্য এখন সৌদি আরবকেই এগিয়ে যেতে হবে। অন্যদিকে, ইরান মনে করছে, ইসরায়েলের বিরুদ্ধে যুদ্ধই তাদের প্রথম অগ্রাধিকার।